ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

ঢাকায় হঠাৎ গুমোট পরিস্থিতি

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ৩০ জুলাই, ২০২৪ ১০:২৪ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৮৩ বার


ঢাকায় হঠাৎ গুমোট পরিস্থিতি

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে ব্যাপক সংঘাত-সহিংসতার পর ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। দিনে ১১ ঘণ্টা ধরে কারফিউ শিথিল থাকায় জনজীবন স্বাভাবিক হয়ে আসায় সড়কে রীতিমতো যানজটও শুরু হয়েছে। এর মধ্যেই হঠাৎ গতকাল সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে শিক্ষার্থীদের অবরোধ করার খবর ছড়িয়ে পড়ে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুরোনো ছবি দিয়ে গুজবও ছড়ানো হয়। তাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতাও বেড়ে যায়। আতঙ্কে অনেকে দোকানপাট বন্ধ করে দেন, সড়কও ফাঁকা হয়ে যায়। এমন বাস্তবতায় হঠাৎই রাজধানীজুড়ে এক গুমোট পরিস্থিতি দেখা যায়।

অবশ্য গতকাল রাজধানীর অন্তত ৭টি পয়েন্টে সড়কে নেমে বিক্ষোভ করার চেষ্টা করেন শিক্ষার্থীরা। ‘কোটা সংস্কারের’ দাবিতে আন্দোলনের অংশ হিসেবে মাঠে নামার চেষ্টা করেন তারা। এর মধ্যে মিরপুর ইসিবি চত্বরে লাঠিচার্জ করে পুলিশ তাদের উঠিয়ে দেয়। এ ছাড়া সায়েন্স ল্যাব এলাকা, পল্টন-প্রেস ক্লাব, ধানমন্ডির জিগাতলা, রামপুরা, মিরপুর ২ ও ভাটারা এলাকায় শিক্ষার্থীরা জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেয়। সন্দেহভাজন হিসেবে এসব এলাকা থেকে আটক করা হয় শতাধিক ব্যক্তিকে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন,

কোটা সংস্কার আন্দোলনের দাবি পূরণ হওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তবে পুলিশের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল, এই শিক্ষার্থীদের নাম ব্যবহার করে একটি রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন সোমবার রাস্তায় নেমে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালাবে। এজন্য জানমালের নিরাপত্তায় রাজধানীজুড়ে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সদস্যরা সতর্ক অবস্থায় ছিলেন।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক ডিবির নিরাপত্তা হেফাজতে থাকা অবস্থায় কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। রোববার রাতে এই ঘোষণা আসার পর বাইরে থাকা অন্য কয়েক সমন্বয়ক তা প্রত্যাখ্যান করে গতকাল সারাদেশে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশের ঘোষণা করেন। নতুন কর্মসূচির খবরে নগরীর মোড়ে মোড়ে অবস্থান নেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্যেই বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করার চেষ্টা করেন শিক্ষার্থীরা। তবে তারা সড়ক অবরোধ বা বিক্ষোভের আগেই পুলিশ ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয় এবং বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে অনেককে আটক করে।

বিভিন্ন পয়েন্টে আটকের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সড়কে নাশকতা চালাতে পারে এমন সন্দেহে তাদের আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ ও যাচাই-বাছাই শেষে আটকদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যাদের বিষয়ে নাশকতার তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যাবে না, তাদের পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হবে।

দুপুর ১২টার দিকে মিরপুরে ইসিবি চত্বর এলাকায় ৪০ থেকে ৫০ জন একত্রিত হয়ে মূল সড়কে আসতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এক পর্যায়ে ইটপাটকেল ছোড়া শুরু হলে পুলিশ ছাত্রদের ধাওয়া দেয় এবং লাঠিচার্জ করে। এ সময় আন্দোলনকারীদের কয়েকজনকে আটক করে নিয়ে যেতে দেখা যায়।

ক্যান্টনমেন্ট থানার ওসি মো. শাহীনুর রহমান বলেন, ওই এলাকা থেকে ১৩ থেকে ১৪ জনকে আটক করা হয়েছে। একটি সংঘবদ্ধ দল পুলিশকে লক্ষ্য করে ঢিল ছুড়তে শুরু করলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সন্দেহভাজনকে আটক করার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

মিরপুর ২ ও ১০ নম্বর ও আশপাশের সড়ক সংলগ্ন গলিগুলোতে ৪-৫ জন করে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেন। তবে পুলিশ কঠোর অবস্থান নেওয়ায় তারা মূল সড়কে নামতে পারেননি। মিরপুর জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার মাসুক মিয়া বলেন, নাশকতার চেষ্টা হতে পারে, এমন তথ্যে আমরা বাড়তি ফোর্স মোতায়েন করে সতর্ক অবস্থানে ছিলাম। গলিগুলোতে যারা অবস্থান নিয়ে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করছিল তাদের কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। তিনি জানান, মিরপুর মডেল থানায় ১৭ জন ও কাফরুল থানায় ১০ জনকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই চলছে।

আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ ঘিরে পল্টন, প্রেস ক্লাব, হাইকোর্ট মোড়, সেগুনবাগিচায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। এসব এলাকার প্রবেশপথগুলো বন্ধ করে অবস্থান নেন পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা। সকাল ১১টার দিকে সেনাবাহিনীর কয়েকটি সাঁজোয়া যান ও টহল গাড়ি চলাচল করতে দেখা যায়। এসব এলাকার প্রবেশদ্বার বন্ধ করে দেওয়ায় আন্দোলনকারীরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জড়ো হতে পারেননি। পরে ১৫ থেকে ২০ জন আন্দোলনকারী ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সামনে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে চলে যান। সেগুনবাগিচা ও আশপাশের এলাকা থেকে বিভিন্ন থানায় অন্তত ১৫ জনকে আটকের খবর পাওয়া গেছে।

দুপুরের দিকে ধানমন্ডির জিগাতলা ও সায়েন্স ল্যাব এলাকায় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। ২০ থেকে ২৫ জনের দলটি ধানমন্ডি ২ নম্বরের মোড়ে স্টার কাবাবের সামনে জড়ো হয়ে মিছিল নিয়ে সামনে এগোতে চাইলে পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। একইভাবে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা হয় সায়েন্স ল্যাব মোড়ে। দুটি স্পট থেকে প্রায় ২০ জনকে আটকের তথ্য জানিয়েছে পুলিশ। ওই সময় আতঙ্কে আশপাশের মার্কেটগুলো বন্ধ হয়ে যায়, ব্যস্ত সড়কও ফাঁকা হয়ে যায়।

এদিকে গতকাল সকাল থেকেই প্রগতি সরণির বাড্ডা, রামপুরা ও বসুন্ধরা এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয় পুলিশ। বাড্ডা এলাকায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকা থেকে ৫-৬ জনকে আটক করে নিয়ে যেতে দেখা যায়। তাদের বিষয়ে বাড্ডা জোনের সহকারী কমিশনার রাজন কুমার সাহা বলেন, কয়েকজন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পাশে এসে মোবাইল ফোনে অন্যদের আসতে বলছিল। একের পর এক ফোন করছিল তারা। এ অবস্থা দেখে আমাদের সন্দেহ হয়। তাদের আটক করে থানায় নেওয়া হয়েছে। তাদের বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, কোটা সংস্কারের দাবি পূরণ হওয়ায় আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এখন কেউ রাস্তায় নেমে ধ্বংসাত্মক কিছু করার চেষ্টা করলে পুলিশ জানমাল রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

এদিকে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনেও জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। তারা বিক্ষোভ মিছিল করার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। আন্দোলনকারীদের অন্তত ১৫ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যেতে দেখা যায়।

গতকালের পরিস্থিতির বিষয়ে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ের সামনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, প্রত্যেক মানুষের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করার অধিকার রয়েছে। যে কেউই নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে আন্দোলন করতে পারে। তবে আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম কাম্য নয়। কেউ সেটা করতে চাইলে ছাড় দেওয়া হবে না।


   আরও সংবাদ