ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০ অগাস্ট, ২০২৪ ০৯:২২ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৬১ বার
ফেনী: বছর বছর আশ্বাস মিললেও দুঃখ ঘোচেনি ফেনীর উত্তরের মুহুরী, কহুয়া, সিলোনীয়া নদী পাড়ের মানুষের। প্রতি বছরের বন্যা থেকে রেহাই পেতে টেকসই বাঁধ নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপি সবাই দিয়েছেন আশ্বাস।
কাজের কাজ কিছুই হয়নি। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে বাঁধ ভাঙে জানমাল পানিতে ভাসে। সংস্কারের নামে জলের টাকা জলে ভাসে।
শাসনের পালাবদলে কতজন এলো গেল কেউ কথা রাখেনি। ডুবিয়েছে সবাই, বছর বছর আশার বাণী ছুডলেও কাজ করেনি কেউ। এভাবেই ভেঙেছে নদীর বাঁধ। ভেসেছে জনপদ, ঘর-বসতি ও ফল, ফসল। জনম দুঃখ ফেনীর উত্তরের লাখো বাসিন্দার। বানের জলে ভাসতে হয় প্রতিবছর।
১৯৯৮ সালে পরশুরামের এক জনসভায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুহুরী ও কহুয়া নদীর স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রকল্প গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন। ২০০৫ সালে ১৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। সেটি শেষ হয় ২০১১ সালে। ১২২ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ সে বাঁধও কোনো কাজে আসেনি। দুই প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও আশ্বাস দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্যরা।
স্থানীয়রা বলছেন প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম আসলেই শুরু হয় তাদের দুঃখ কষ্টের জীবন। এক মৌসুমে কয়েক দফার বন্যায় ভাসতে হয় তাদের। পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ মেরামতের কাজে নয়-ছয় করে কোন রকমে জোড়াতালি দেয়। বৃষ্টি এলেই তা আবার ভাঙে।
ফুলগাজী বাজারের ষাটোর্ধ্ব কবির আহম্মদ নামের একজন বলেন, বৃষ্টি আসলেই বাঁধ ভাঙে। মানুষের ঘর-বাড়ি ডুবে। কৃষি জমি ও পুকুর ডুবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনোমতে মেরামত করেই চলে যান আবার ভাঙে। কাজের কাজ কিছুই হয় না।
রেজাউল হক নামের আরেক কৃষক বলেন, প্রতি বর্ষায় কৃষক ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। বাঁধের দায়সারা মেরামত নয়, প্রয়োজন স্থায়ী সমাধান।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসন জানিয়েছেন আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে মুহুরী ও কহুয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কাজ শুরু হবে। সরকারে উচ্চপর্যায়ে রয়েছে বিষয়টি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদ শাহরিয়ার, মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর বাঁধ প্রতিবছর ভাঙনের বেশকিছু কারণ রয়েছে। টেকসই ও স্থায়ী বাঁধের বিষয়টি ইতোমধ্যে জরিপ হয়েছে। আশা রাখছি শীঘ্রই বিষয়টি উচ্চ পর্যায়ে প্রস্তাবনায় যাবে।
জেলা প্রশাসক মুসাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, আমরা সব পক্ষের সাথে আলোচনা করেছি। স্থায়ী বাঁধের বিষয়টি ইতোমধ্যে পরিকল্পনায় রয়েছে।
২০১১ সালে ১৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া নদীর ১২২ কিলোমিটারে মাটির বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ২০১৩ সালে আকস্মিক বন্যায় প্রথম বাঁধের তিনটি স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। এরপর থেকে প্রতিবছর ভাঙ্গছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলেন, ৮ বছরে ভেঙ্গেছে ৯৮ বার। ৮বছরে বাঁধ মেরামতে ব্যয় ৯ কোটি ১৩ লাখের বেশি টাকা।
ফেনীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্র থেকে জানা গেছে, ২০১৭ সালে ৭টি স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। সে ভাঙন কবলিত স্থানগুলো মেরামতের জন্য ৩৯ লাখ১২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
২০১৮ সালে ২২টি স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। সে ভাঙনকবলিত স্থানগুলো মেরামতের জন্য এক কোটি ৬৯ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
২০১৯ সালে ১৫টি স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। সে ভাঙনকবলিত স্থানগুলো মেরামতের জন্য ২৯ লাখ৮৩ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০২০ সালে ৮টি স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। সে ভাঙনকবলিত স্থানগুলো মেরামতের জন্য এক কোটি১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ২০২১ সালে মুহুরী ও কহুয়া নদীর ৪ দফায় বাঁধে ৯টি স্থানে ভাঙন সৃষ্টি হয়। বরাদ্দ দেয়া হয় ৯০লাখ টাকা। ২০২২ সালে দুই দফায় ৬টি স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। সে ভাঙনকবলিত স্থানগুলো মেরামতের জন্য৭১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ২০২৩ ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় মুহুরী নদীর ৩ স্থানে ভাঙনে ২০ গ্রাম প্লাবিত হয়। মেরামত ব্যয় ৫০ লাখ। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় মুহুরী নদীর ১২ স্থানে ভাঙনে ৩১ গ্রাম প্লাবিত হয়। বাঁধ মেরামতে ব্যয় হয়েছে দেড় কোটি টাকা।
চলতি বছরের আগস্ট মাসে ১৬ স্থানে ভেঙে ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার ৮০টির বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বাঁধ মেরামতে সম্ভাব্য ব্যয় ২ কোটি টাকা।
স্থানীয়রা বলছেন প্রতিবছরই বানের পানি ডুবতে হয় তাদের। এমন নিত্য ভোগান্তি থেকে উত্তরণ করতে পারে টেকসই নদী বাঁধ নির্মাণের দাবি তাদের।