ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৬ অগাস্ট, ২০২৪ ০৮:১৩ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫৬ বার
ঢাকা: শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রশাসন, আদালতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনছে অন্তর্বর্তী সরকার। অনেক প্রতিষ্ঠান বা দপ্তরের কর্তাব্যক্তিরা নিজ থেকে পদত্যাগ করছেন।
কাউকে আবার বাধ্যতামূলক অবসরেও পাঠানো হচ্ছে। এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশন (ইসি) তাকিয়ে আছে বঙ্গভবনের দিকে।
সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কমিশনের ওপর সরকারের কোনো হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে কমিশনে পরিবর্তন আনতে রাষ্ট্রপতিকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। তবে রাষ্ট্রপতিও অপসারণের ব্যবস্থা নেবেন সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্যের প্রস্তাবের ভিত্তিতে। যেহেতু সংসদ নেই, তাই পদত্যাগ হতে পারে বিকল্প উপায়ে।
ক্ষমতার পালাবদলের মাঝে বিগত সরকারের আমলে সার্চ কমিটির সুপারিশের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যদের কমিশন অস্বস্তিতে ভুগছে। কোনো কোনো সদস্য ঠিকমতো অফিস করছেন না।
গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়লে ৬ ও ৭ আগস্ট প্রধান নির্বাচন কমিশনার অফিস করেননি। ৮ আগস্ট কয়েক ঘণ্টা অফিস করেন তিনি। নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান ৭ আগস্ট থেকে নিয়মিত অফিস করছেন। তবে অন্য কমিশনাররা ওইদিন থেকে অফিস শুরু করলেও সকলেই প্রতিদিন আসছেন না। এর মাঝেই ছাত্র-জনতা ইসির পদত্যাগ চেয়ে একাধিক ব্যানার টানিয়ে যায় আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে।
এ অবস্থায় গত সোমবার (১২ আগস্ট) জরুরি বৈঠকে বসেন সিইসি। ওই দিন চার নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় পদত্যাগের মানসিক প্রস্তুতি এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখার। কমিশন কোনো অবস্থায় যেন হেনস্তার শিকার না হয়, সে বিষয়ে তারা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
বৈঠক সূত্র জানিয়েছেন, বঙ্গভবন থেকে কোনো নির্দেশনা এলে পদত্যাগ করবে কমিশন। এক্ষেত্রে ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’ নীতি অবলম্বনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আউয়াল কমিশন।
সিইসির একান্ত সচিব মো. রিয়াজ উদ্দিন জানিয়েছেন, সরকার বা বঙ্গভবনের সঙ্গে কোনো রকম যোগাযোগ হয়নি। সে চেষ্টাও হয়নি। কমিশনাররা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।
বর্তমানে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান, মো. আলমগীর, রাশেদা সুলতানা অফিস করছেন। তবে অন্য নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান নির্বাচন ভবনে আসছেন না।
নির্বাচন কমিশনার হওয়ার আগে সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল আইন সচিব, মো. আলমগীর শিক্ষা সচিব ও ইসি সচিব এবং মো. আনিছুর রহমান ধর্ম সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা ছিলেন জেলা জজ ও নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান ছিলেন সামরিক বাহনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল।
সংবিধানে ১১৮ (৫) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সংসদ কর্তৃক প্রণীত যে কোনো আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে নির্বাচন কমিশনারদের কর্মের শর্তাবলী রাষ্ট্রপতি আদেশের দ্বারা যে রূপ নির্ধারণ করবেন, সেরূপ হবে; তবে শর্ত থাকে যে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক যে রূপ পদ্ধতি ও কারণে অপসারিত হতে পারেন, সে রূপ পদ্ধতি ও কারণ ব্যতীত কোনো নির্বাচন কমিশনার অপসারিত হবেন না। ’
এছাড়া ১১৮(৬) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোনো নির্বাচন কমিশনার রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ করে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদত্যাগ করতে পারবেন। ’
এদিকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অপসারণের বিষয়ে সংবিধানের ৯৬ (২) অনুচ্ছেদে বলা হযেছে, ‘প্রমাণিত অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের কারণে সংসদের মোট সদস্য-সংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতার দ্বারা সমর্থিত সংসদের প্রস্তাবক্রমে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ ব্যতীত কোনো বিচারককে অপসারিত করা যাবে না। ’
৯৬ (৩) এই অনুচ্ছেদের (২) দফার অধীন প্রস্তাব সম্পর্কিত পদ্ধতি এবং কোনো বিচারকের অসদাচরণ বা অসামর্থ্য সম্পর্কে তদন্ত ও প্রমাণের পদ্ধতি সংসদ আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
৯৬(৪) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোনো বিচারক রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ করে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদত্যাগ করতে পারিবেন। ’
২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেয় কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন। তার আগে সরকার নির্বাচন কমিশন নিয়োগে আইন প্রণয়ন করে, যেখানে সার্চ কমিটির মাধ্যমে নামের প্রস্তাব নিয়ে পাঁচ সদস্যের ইসি নিযোগ দেন রাষ্ট্রপতি। সে আইন অনুযায়ী, কমিশনের মেয়াদ দায়িত্ব নেওয়ার পরবর্তী পাঁচ বছর।
আউয়াল কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক মাসের মাথায় বিভিন্ন ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করে। তবে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো ভোট বর্জনের নীতিতে থাকায় সেই সংলাপে অংশ নেওয়া থেকেও বিরত থাকে।
এরপর বিএনপি ও সমমনা দলগুলো ছাড়াই ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করে ইসি। এর আগে বিভিন্ন উপ-নির্বাচন ও স্থানীয় সরকারের সাধারণ নির্বাচনে নানা বিতর্কের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এক সংসদ সদস্যকে নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে সিইসির স্ববিরোধী বক্তব্য কমিশনের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্নের জন্ম দেয়। এছাড়া ভোটের ফলাফল পরিবর্তন নিয়েও সন্দেহ সৃষ্টি হয়।
অন্যদিকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের ব্যবহার বাড়ানো, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন প্রক্রিয়া নিয়েও সমালোচনায় পড়ে সংস্থাটি।