ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২১ অগাস্ট, ২০২৪ ১০:২৪ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪৫ বার
অবৈধ দখল ও যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ দাদনা খালটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক বৃষ্টির পানি নামতে না পারায় ২০ দিন ধরে উপজেলার ৪০টি গ্রাম জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে। তলিয়ে গেছে শত শত ঘরবাড়ি ও মাছের ঘের। এতে ভয়াবহ দুর্ভোগে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। তারা জানিয়েছেন, জলাবদ্ধতার কারণে তাদের কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
রোববার সরেজমিন পৌর এলাকার বেতুয়া, নামার বাজার, উত্তর করিমপুর, ইয়াকুবপুর ইউনিয়নের ইয়াকুবপুর, চণ্ডীপুর, দক্ষিণ চণ্ডীপুর, উত্তর চণ্ডীপুর, বিজয়পুর, মীরেরপুল, এনায়েতনগর, চানপুর, দক্ষিণ চানপুর, এনায়েতপুর, দেবরামপুর; সদর ইউনিয়নের হায়াতপুর, করিমপুর, জগৎপুর; রামনগর ইউপির দক্ষিণ করিমপুর, দক্ষিণ সেকান্তরপুর, রামনগরের বাসিন্দাদের ভোগান্তির চিত্র দেখা গেছে। তারা জানান, সব মিলিয়ে প্রায় ৪০টি গ্রাম ২০ দিন ধরে তলিয়ে আছে।
ইয়াকুবপুর গ্রামের বজলুর রহিম বলেন, বাড়িঘরে পানি উঠে যাওয়ায় এরই মধ্যে বিভিন্ন ফলদ গাছ মরতে শুরু করেছে। বহু মানুষের পুকুরের পাড় ভেঙে গেছে। বেড়েছে সাপের উপদ্রব। সাপসহ অন্যান্য বিপজ্জনক প্রাণী বসতঘরে ঢুকে পড়ছে।
এসব গ্রামের মানুষের বাড়ির উঠান থেকে ডোবা– সব পানিতে তলিয়ে গেছে। অন্তত কয়েক হাজার কৃষকের আমন ধানের বীজতলা ডুবে আছে। কৃষকরা জানান, তারা যথাসময়ে আমন আবাদ নিয়ে শঙ্কায় আছেন। শত শত পুকুর ও ঘেরের মাছ ভেসে গেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দাদনা খালটি ছোট ফেনী নদীর নোয়াখালীর কবিরহাট পয়েন্ট সংগমস্থল থেকে উৎপন্ন হয়েছে। একদিকে ফেনীর দাগনভূঞার মাতুভূঞা-সংলগ্ন ছোট ফেনী নদী, অন্যদিকে সেবারহাট বাজার-সংলগ্ন মহাজন খাল। মাঝে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে খালটি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাট ও সেনবাগ উপজেলার সীমানায় যুক্ত হয়ে দাগনভূঞা-বসুরহাট সড়কের পাশঘেঁষে দাগনভূঞা পৌরসভায় প্রবেশ করে।
ইয়ারপুর গ্রামের বাসিন্দা নুরুল হুদার ভাষ্য, একসময় দাগনভূঞা উপজেলার বাণিজ্যিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিল দাদনা খাল। প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো খালটি দিয়ে নোয়াখালী খাল হয়ে ছোট ট্রলারে পণ্যসামগ্রী আনা-নেওয়া করতেন ব্যবসায়ীরা। এ খালের পূর্ব অংশ ছোট ফেনী
নদীর সঙ্গে যুক্ত ছিল। আর পশ্চিম অংশ মিলিত হয়েছে নোয়াখালী খালের সঙ্গে। দখলদারদের দৌরাত্ম্য ও যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলার
কারণে এর অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে। অন্যান্য অংশে খালটি গড়ে ৪৫-৫০ ফুট চওড়া। অথচ দাগনভূঞা পৌর এলাকায় সেটির গড় প্রস্থ ১০-১২ ফুটে নেমে এসেছে। ওই অংশই আবার পৌর এলাকার বসতবাড়ি থেকে ফেলা বর্জ্যে প্রায় ভরাট হয়ে গেছে।
পৌরবাসী জানান, ভূমিদস্যু ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এই খালের জমি দখল করে দীর্ঘদিন ধরে ভবন ও দোকানপাট নির্মাণ করে চলেছেন। রক্ষণাবেক্ষণ ও খনন না হওয়ায় নামার বাজার আবাসিক এলাকায় ফেলা আবর্জনা দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ওই এলাকার বাসিন্দারা ডেঙ্গু মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ। খালটি দখলমুক্ত না হওয়ায় এর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে পৌর এলাকার বিভিন্ন সড়কে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। মাত্র ১০ মিনিট বৃষ্টি হলেই বসুরহাট সড়ক তলিয়ে যায়। তখন বোঝা যায় না, এটি রাস্তা না ডোবা। মৃতপ্রায় খালটিতে কি প্রাণ ফিরবে– এমন প্রশ্ন ছুড়ে দেন কয়েকজন।
দাগনভূঞা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিবেদিতা চাকমা জানান, তারা বিষয়টি অবগত আছেন। শিগগিরই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) ফেনী কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী (সেচ) মো. কামরুল হাসান বলেন, দাদনা খাল সংস্কারের জন্য অর্থ বরাদ্দ চেয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলেই
কাজ শুরু হবে।