ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

মায়ের জন্য মাছ আনতে গিয়ে ফিরল লাশ হয়ে

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ২২ অগাস্ট, ২০২৪ ১৩:২৪ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫৩ বার


মায়ের জন্য মাছ আনতে গিয়ে ফিরল লাশ হয়ে

হবিগঞ্জ: ‘পাড়ার মানুষ কয়- কেল্লাইগ্যা পোলারে মিছিলে ফাডাইছলায়? আমি তারারে কইয়্যা দিছি- আমার পোলা শহীদ অইছে’-কথা দুটি উচ্চারণ শেষে কান্নায় ভেঙে পড়েন মাহমুদা বেগম। চিৎকার শুনে পাড়ার কয়েকজন এগিয়ে এলে তিনি মৃত ছেলের কাপড়চোপড় হাতে নিয়ে বিলাপ করতে থাকেন।

 

এসময় তিনি বলেন-‘যাওয়ার সময় কইয়্যা গেছে রাইতে আমার লাগি লাকড়ি আর জিয়ল মাছ (শিং, মাগুড়) লইয়্যা বাড়িত আইব। এরপরে খবর ফাইলাম পোলা আমার গুলি খাইয়্যা মইরা গেছে।  

মিনিট দশেক ধরে চলতে থাকা মাহমুদা বেগমের বিলাপ শুনে আরও লোকজন এগিয়ে এসে তাকে সান্ত্বনা দেন।

মঙ্গলবার (২১ আগস্ট) বিকেলে হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত আশরাফুল ইসলামের (১৭) বাড়িতে গেলে এমন হৃদয় বিদারক দৃশ্য দেখা যায়।

জাতুকর্ণপাড়া ডুগিহাটির আব্দুর রউফের ছেলে আশরাফুল মাত্র ১৩ বছর বয়সে কাঠমিস্ত্রীর কাজে যোগ দিয়ে পরিবার চালানোর দায়িত্ব কাঁধে নেয়। চার ভাইবোনের লেখাপড়া, চিকিৎসা ও সংসার চালানো- এ সবকিছুর ব্যয়ভার ছিল আশরাফুলের ওপরে।

গ্যানিংগঞ্জ বাজারে একটি ফার্নিচারের দোকানে মাসিক ১২ হাজার টাকা সম্মানিতে কাজ করা আশরাফুল ছয় ভাইবোনের মধ্যে চতুর্থ। তারা চার বোন ও দুই বোন।

বড় বোন লুবনা আক্তারের বিয়ে হয়েছে। এর পরের জন রোজমা আক্তার শায়েস্তাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে ও তৃতীয় বোন তাইমা আক্তার বৃন্দাবন সরকারি কলেজের ছাত্রী, দুজনই স্নাতকে লেখাপড়া করছেন। আশরাফুলের ছোট তৈয়বা আক্তর দশম শ্রেণি ও সবার ছোট আব্দুর রকিব অষ্টম শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে। তাদের সবার লেখাপড়া, চিকিৎসা ও সংসার চালানোর ব্যয় নির্বাহ হতো আশরাফুলের রোজগার দিয়েই।

নিহতের মা মাহমুদা বেগম জানান, আশরাফুল প্রতিদিন সকালে কাজে গিয়ে রাতে বাড়ি ফিরতো। গত ৫ আগস্টও নিয়মমতো বের হয়েছিল। পরে কর্মস্থল থেকে বন্ধুদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার মিছিলে যোগ দেয়। এক বন্ধু মিছিল থেকে তাকে ফেরত আসার জন্যও অনুরোধ করেছিল, কিন্তু আশরাফুল আসেনি। এরপর পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়।

তিনি আরও জানান, আশরাফুলের বাবা দ্বিতীয় সংসার করেছেন। তার পক্ষে সবার ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে অপরিণত বয়সের আশরাফুলই কাজ করে তার ভাই-বোনকে আগলে রেখেছিল। তার চলে যাওয়ায় পর পাঁচ ভাই বোনের লেখাপড়া অনিশ্চিত। ছেলে হত্যাকাণ্ডের বিচার ও তাকে শহীদের মর্যাদা দিতে তিনি সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

বাংলানিউজকে আশরাফুলের ছোট বোন তৈয়বা আক্তার বলে, ‘আমার ভাই আমাদের মাথার ওপর ছায়া ছিল। আমরা তার হত্যার বিচার চাই। ’

বানিয়াচংয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সমন্বয়ক ডিএইচ রাজু বলেন, ‘আশরাফুলের পরিবার অতিশয় দরিদ্র। সে ‘শহীদ’ হওয়ায় পুরো পরিবার এখন অকুল পাথারে। তাদের পাশ দাঁড়ানোর জন্য সরকার এবং সমাজে বিত্তবানদের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। ’

প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট সকাল ১১টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সাগরদিঘীর পশ্চিমপাড় ঈদগাহ মাঠ থেকে মিছিল বের করে। গ্যানিংগঞ্জ বাজার প্রদক্ষিণ শেষে মিছিলকারী ৪/৫ হাজার লোক বড়বাজার শহীদ মিনারে গিয়ে জড়ো হন। পরে বিক্ষুব্ধ লোকজন মিছিল নিয়ে থানার সামনে গেলে পুলিশের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার সময় পুলিশ রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলে চারজনসহ সাতজন নিহত হন।

তখন চিত্র ধারণ করতে গেলে বিক্ষুব্ধরা এক সাংবাদিককে পিটিয়ে হত্যা করে। মোট মৃতের সংখ্যা হয় নয়। এরপর বিক্ষুব্ধ জনতা থানার উপপরিদর্শক সন্তোষকে ছিনিয়ে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। পরদিন গুলিবিদ্ধ আরেকজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।


   আরও সংবাদ