ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:২৩ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৬০ বার
‘শিক্ষা সুযোগ নয় অধিকার, শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ নয়, শিক্ষা সবার জন্য, জনগণকে শিক্ষিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব, শিক্ষা কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর জন্য নয়’ বাংলাদেশের সচেতন ছাত্রসমাজ সেই পূর্ব পাকিস্তান আমল থেকেই সোচ্চার ছিল শিক্ষার অধিকার আদায়ের সংগ্রামে। দু:খ জনক হলেও সত্য যে, স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও বাংলাদেশে সার্বজনিন-কল্যাণমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রনিত হয় নাই। বরং শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈরাজ্যকর অবস্থা বিরাজ করছে বলে মন্তব্য করে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, আমরা আশা করছি ‘শিক্ষা কমিশনের’ কথা শিগগিরই ঘোষণা করা হবে কারণ শিক্ষার সংস্কারের সাথে দেশের প্রতিটি বিভাগের উন্নয়ন, সততা ও প্রকৃত পেশাদারিত্ব ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পূর্ববর্তী সরকারগুলো শিক্ষাক্ষেত্রে অনেকটাই ‘লিপ সার্ভিস’ দিয়ে রাষ্ট্রের বাকী বিভাগগুলোতে অবৈধ সুযোগ সুবিধার বন্যা বইয়ে দিয়েছিল। ফলে, জনগণের কোন উপকার হয়নি, সরকারগুলো নিজেদের ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য এসব প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুরোপুরি ধ্বংস করেছে আর শিক্ষাকে সব সময়ই অবজ্ঞা করেছে। কাজেই জনগণের পাহাড়সম আশা বর্তমানসরকার শিক্ষাকে এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে যাবে যেটি হবে বিশ্বমানের আর সেটি করার জন্য ‘শিক্ষা কমিশন’ গঠন একটি অপরিহার্য।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ৬২তম শিক্ষা দিবস উপলক্ষে গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ ন্যাপ নেতৃদ্বয় এসব কথা বলেন।
তারা বলেন, ১৯৬২ সালের এ দিনটিকে স্মরণ করে বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈরাজ্যকর অবস্থার বিরুদ্ধে দেশেপ্রেমিক জনতার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস ও সরকারের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে। ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস সৃষ্টির গোড়াপত্তনের ১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর একটি অনন্য দিন। এ দিনের আত্মদানে গৌরবোজ্জ্বল দিনটি বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ ‘শিক্ষা দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে। শিক্ষার দাবিতে এমন রক্তক্ষয়ী এবং আন্দোলন এ দেশে আর কখনও হয়নি।
নেতৃদ্বয় বলেন, শিক্ষা দেশের নাগরিকদেও একটি মৌলিক অধিকার। গণমুখী ও সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা রাষ্ট্রের একটি সাংবিধানিক দায়িত্ব। স্বাধীনতার পর থেকে নানা উন্নতি হলেও কাঙ্খিত লক্ষ্যে এখনো আমরা পৌঁছতে পারি নাই। শিক্ষাখাতে অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি করা এবং সর্বচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত ফ্রি করা উচিত, শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহন করা প্রয়োজন ও সেইসঙ্গে প্রতিটি ক্যাম্পাসে ছাত্রসংসদ নির্বাচন দিয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
তারা বলেন, ১৯৬২’র শরীফ শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন, পরবর্তী সময়ে ১৯৬৬’র হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বিরোধী ও ছয় দফার আন্দোলন, ১৯৬৯-এর নুর খান শিক্ষা কমিশন ও গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনায় গভীর অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে এ শিক্ষানীতির প্রতিবাদ ও আন্দোলনগুলো।
নেতৃদ্বয় আরো বলেন, মহান শিক্ষা দিবসের মাস সেপ্টেম্বরে আমাদের শপথ হোক ৬৯'র শিক্ষা আন্দোলনসহ বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শহিদদের স্বপ্নসাধ আমরা বৃথা যেতে দেব না। শিক্ষাকে আমরা পণ্য হতে দেব না। সবার জন্য শিক্ষা অবারিত থাকবে। উন্মুক্ত থাকবে সব বয়সের, সব গোত্রের, সর্বজনের জন্য। শিক্ষা এলিট ক্লাসের মধ্যে সীমিত রাখা হবে না। সবার ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া হবে শিক্ষার আলো। শিক্ষার আন্দোলনে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। শিক্ষা দিবস অমর হোক। লক্ষ্য অর্জনে আমাদের যেতে হবে বহুদূর।
উল্লেখ্য, ১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর স্বৈরশাসক আইয়ুব খান গঠিত শিক্ষা কমিশনের শিক্ষা নীতি তথা শিক্ষা সংকোচন নীতির প্রতিবাদে তৎকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে দেশব্যাপী হরতাল পালিত হয়। ছাত্রদের ডাকা হরতালে পুশিলের দফায় দফায় লাঠিচার্জ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এতে শহীদ হন গোলাম মোস্তফা, বাবুল ও ওয়াজিউল্লাহ। সেই থেকে ছাত্রসমাজ দিনটিকে সংগ্রাম ও ঐতিহ্যের মহান শিক্ষা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।