ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১১:২২ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৬৫ বার
ঢাকা: অনলাইনকে ভিত্তি করে সক্রিয় থাকার চেষ্টা করছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ৷ সরকার পতনের এক মাস ২০ দিন পরও দলের কর্মীরা আত্মগোপনে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রকাশ্যে দলের কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারছেন তারা।
একমাত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই দলের কিছু বক্তব্য প্রকাশ্যে আসছে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের চাপে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয় টানা ১৫ বছরের বেশি ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ। দলের সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়ার পর থেকেই দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হয়। এখন পর্যন্ত তারা আত্মগোপনেই রয়েছেন, প্রকাশ্যে কাউকে দেখা যায় না।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, নেতাকর্মীদের মধ্যে সার্বক্ষণিক হামলা ও গ্রেপ্তারের ভয় কাজ করছে, বিশেষ করে দলের বিভিন্ন পর্যায়ে পদে যারা রয়েছেন। এর মধ্যে দলের কয়েকজন কর্মী সমর্থক গণপিটুনিতে প্রাণ হারিয়েছেন ৷ এখনও বাড়ি ঘরে হামলার আশঙ্কা করছেন অনেকে৷ এক ধরনের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে ৷ আর দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্যদের অধিকাংশই দেশের বাইরে চলে গেছেন বলে জানা গেছে ৷ যারা দেশে আছেন বা যেতে পারেননি তারা এখনও দেশ ছাড়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ৷ জেলা পর্যায়ের নেতারাও দেশের বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন, অনেকে চলেও গেছেন ৷ কেউ কেউ বিমান বন্দর ও সীমান্ত দিয়ে বৈধ, অবৈধভাবে যাওয়ার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন। এই প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন তারা।
ওই সূত্রগুলো জানায়, দীর্ঘদিন আত্মগোপনে বা নিজেকে আড়াল করে রেখে অনেকেরই আর টিকে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। আবার প্রকাশ্যে আসতেও ভয় পাচ্ছেন।
এই অবস্থায় তৃণমূলে কর্মী পর্যায়ের কেউ কেউ বাধ্য হয়ে প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছেন। তবে এতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার মধ্যে তাদের পড়তে হচ্ছে ৷ এলাকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কর্মীদের ধাওয়া, হামলার শিকার হচ্ছেন বলেও জানা গেছে ৷ আবার কেউ কেউ বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে নিজ এলাকায় বিএনপির প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন তাদের কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায় কিনা ৷
এদিকে দেড় মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও দলের নেতাকর্মীদের জন্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলেও কেউ কেউ মনে করছেন এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে ৷ এর জন্য আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে ৷
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হতে আরও দুই এক মাস সময় লাগতে পারে ৷ আবার কেউ কেউ মনে করছেন পরিস্থিতি সহসাই অনুকূলে আসবে না ৷ কারণ আওয়ামী লীগকে বাইরে রেখেই সংস্কার ও নির্বাচনের চিন্তাভাবনা চলছে ৷ ফলে আওয়ামী লীগকে চাপে রাখার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে ৷
এ প্রসঙ্গে দলটির আরেক নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ যাতে নির্বাচনে যেতে না পারে সে চেষ্টা হবে ৷ তাই পরিস্থিতি অনুকূলে আসতে অনেক সময় লাগবে ৷
সম্প্রতি সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বক্তব্যেও এই আশঙ্কার ইঙ্গিত রয়েছে।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সেনা প্রধানের এক সাক্ষাৎকারের পর ওই একই সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জয় বলেছেন, আমাদের অন্তত এখন একটি প্রত্যাশিত সময়সীমা (নির্বাচন আয়োজনে) আছে জেনে আমি খুশি। তবে আমরা এই নাটক আগেও দেখেছি, যেখানে একটি অসাংবিধানিক-অনির্বাচিত সরকার সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তারপর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। তিনি এটাও উল্লেখ করেন যে, তার দল (আওয়ামী লীগ) ছাড়া প্রকৃত সংস্কার এবং নির্বাচন অসম্ভব।
দলের এই পরিস্থিতিতে প্রকাশ্যে আসতে না পারায় অনলাইনে সক্রিয় থাকার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম দলের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বিষয়ে পোস্ট দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে কর্মীদের জন্য নির্দেশনা, সমর্থক ও দেশের মানুষের প্রতি বিভিন্ন আহ্বান, নেতাকর্মীদের ওপর হামলার তথ্য চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে।
এই পেজ থেকে করণীয় প্রসঙ্গেও নেতাকর্মীদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে । ফেসবুকের পাশাপাশি ইউটিউব চ্যানেল, এক্স(টুইটার)অ্যাকাউন্ট, টেলিগ্রাম চ্যানেল এ সামাজিক যোগাযোগ মধ্যমগুলোও ব্যবহার করা হচ্ছে দলীয় কাজে। তথ্য দেওয়া নেওয়ার জন্য দলের একটি হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট চালু করা হয়েছে।
এছাড়া দলের কোনো কোনো নেতাকর্মী নিজের এসব সামাজিক মাধ্যমের পেজ ও অ্যাকাউন্ট নিয়মিত ব্যবহার করছেন।
বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ফেসবুক পেজে এক পোস্ট দিয়ে দলের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে। এর আগে দলের ক্ষতিগ্রস্ত কর্মীদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে আর্থিক সাহায্যের আহ্বান জানানো হয় এই অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে।
ওই পোস্টে বলা হয় আওয়ামী লীগের প্রায় ৫০ হাজার নেতাকর্মীরর পরিবার করুণ অবস্থায় রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের অফিশিয়াল ই-মেইল এখন ব্যবহার করা হচ্ছে না। গত ২২ সেপ্টেম্বর ছাত্র লীগের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয় হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে। বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধের দাবি জানিয়ে এই বিজ্ঞপ্তিটি ছাত্র লীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর দিয়ে পাঠান।