ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর, ২০২৪ ০৯:৩৭ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫১ বার
জামালপুর: গ্যাস সংকটের কারণে টানা প্রায় ৯ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে জামালপুরের যমুনা সার কারখানার উৎপাদন। কখনও যান্ত্রিক ত্রুটি, কখনও গ্যাস সংকটে সার কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হয়।
এ বছরের ১৫ জানুয়ারি থেকে গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদনেই যেতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষীরা। আবাদ মৌসুমের আগে উৎপাদন না হলে, কৃত্রিম সার সংকটের আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে বিদেশ থেকে নিয়ে আসা সার পরিবহনের জন্য কারখানাটি ব্যবহার হচ্ছে গোডাউন হিসেবে। কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন কারখানা সংশ্লিষ্ট শ্রমিক। এছাড়া ভর্তুকি দিয়ে সার আমদানি করায় প্রতিদিনই কোটি কোটি টাকা লোকসান গুণছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। তাই সংকট কাটিয়ে দ্রুত উৎপাদনে যাওয়ার দাবি সবার।
কারখানা কর্তৃপক্ষ সূত্র জানা গেছে, ১৯৯১ সালে জামালপুরের সরিষাবাড়ীর তারাকান্দিতে চালু হয় এশিয়া উপ-মহাদেশের বৃহত্তম দানাদার ইউরিয়া সার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড। ১৭০০ মেট্রিকটন উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন এই কারখানার সার সরবরাহ করা হতো দেশের ২১ জেলার ১৬২টি উপজেলায়। তবে গ্যাস সংকটের কারণে চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি থেকে বন্ধ রয়েছে যমুনা সার কারখানার উৎপাদন। গ্যাসের চাপ ও নানা কারণে এই কারখানায় প্রতিদিন উৎপাদন হয় ১২০০ থেকে সর্বোচ্চ ১৩৫০ মেট্রিক টন সার। আর এতে প্রয়োজন হয় ৪২ থেকে ৪৩ হাজার ঘনফুট গ্যাসের। কিন্তু এখন গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে মাত্র দুই হাজার ঘনফুট।
টানা নয় মাস ২৯ দিন যাবত উৎপাদন বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে কারখানা সংশ্লিষ্ট ট্রাক চালক ও দিনমজুর শ্রেণির লোকজন। দীর্ঘদিন যাবত বেকার থাকায় কষ্টে দিন পার করছে তাদের পরিবার। রমিজ উদ্দিন নামের এক শ্রমিক বলেন, আমরা এখানে ৩০০ এর মত শ্রমিক আছি। আগে যখন কারখানা চালু ছিল তখন সংসার খুব ভালোভাবে চলতো। এখন তো আর সার উৎপাদন হয় না। তাই বেতনও ঠিক মত পাওয়া যায় না।
উৎপাদন বন্ধ থাকায় প্রতিদিন প্রায় তিন কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে কারখানা কর্তৃপক্ষকে। এছাড়াও সার আমদানি করায় সরকারকে দিতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের ভর্তুকি। তবে উন্নত গুণগতমান থাকায় অন্য সারের চেয়ে যমুনা সার কারখানার ইউরিয়া সারের প্রতি চাহিদা বেশি কৃষকদের। এছাড়াও আসন্ন আবাদ মৌসুমের আগে কারখানা চালু না হলে কৃত্রিম সার সংকটের আশঙ্কা করছে ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, ২০০৬ পর্যন্ত যমুনা কারখানা খুব ভালো করে চলেছে। তারপর নানা কারণে ও সিন্ডিকেটের কারণে ধীরে ধীরে বন্ধের পথে গেছে। এখন এটিকে গোডাউন বানিয়ে তারপর সার আমদানি করা হচ্ছে। আমাদের কারখানায় এক টন সার উৎপাদন করতে খরচ হয় মাত্র ২৫ হাজার টাকা যেখানে বিদেশি সার আনতে খরচ হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা। এখানেই সরকারের এতো এতো টাকা ক্ষতি হচ্ছে।
লিয়াকত ইসলাম নামের এক কৃষক বলেন, আমাদের এই কারখানার উৎপাদিত সার আমাদের জমিতে কাজ করে বেশি। এই সারাটি মিঠা পানি দিয়ে তৈরি হয় বিধায় এই সারাটি আমাদের এই মাটির জন্য প্রযোজ্য। বিদেশ থেকে আমদানি করা সার ১০০ ভাগের ৭০ ভাগ কাজ করে তবে আমাদের এখানের সার ১০০ ভাগই কাজ করে। আর বিদেশি সারও চড়া দামে কিনতে হয়। আর সব সময় আশঙ্কায় থাকি সার পাওয়া যাবে কি যাবে না। তাই কারখানাটি দ্রুত চালু হক। আমাদের সংকট দূর করতে এই কারখানা চালুর দাবি করছি।
যমুনা ফার্টিলাইজার শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মুরশেদ তলুকদার বলেন, আজ প্রায় ৯ মাস ধরে এই কারখানাটি বন্ধ রেখে একদম গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিদেশ থেকে যে সার আমদানি করা হচ্ছে সেই সারের দাম বেশি হলেও গুণগত মান একদমই ভালো না। এই কারখানাটি বন্ধ থাকার কারণে শ্রমিক-কর্মচারী ও সংশ্লিষ্ট সবাই খুব খারাপ অবস্থায় আছে। শুধু গ্যাসের কারণেই এই সার কারখানা চালু হচ্ছে না। যদি দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকে এই সার কারখানা আর কোনো দিনই চালু করা সম্ভব না। তাই আমি বলবো দ্রুত এই সার কারখানা চালু করা হোক।
যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সালেহ মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিন বলেন, কারখানার মেশিনগুলো অত্যাধুনিক। যদি কারখানা বন্ধ থাকে, তাহলে বাতাসের সঙ্গে যে-সব ধূলিকণা থাকে, সেসব ধূলিকণাগুলো-ও মেশিনগুলোর জন্য ক্ষতিকর। এছাড়াও মেশিনগুলো ক্ষয় হতে থাকে। বিশেষকরে, একটা মেশিন বেশ কয়েকদিন বন্ধ থাকার পর চালু করার সময় অনেক রকমের সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। প্রস্তুত রয়েছে কারখানা, গ্যাস পেলে উৎপাদন শুরু হবে।