ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১১:০০ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫৫ বার
ঢাকা: আওয়ামী লীগের একক সিদ্ধান্ত ও অতীত কর্মকাণ্ডের দায় নিতে চায় না দলটির নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো। ভবিষ্যতে এই জোটে থাকবে কিনা কোনো কোনো শরিক দলে সেই প্রশ্নটিও সামনে চলে এসেছে।
আবার কোনো কোনো দলের নেতাকর্মীরা এখনই জোট থেকে বেরিয়ে আসতে চান।
ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর থেকেই আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের শরিকদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসে। আড়াই মাস পার হওয়ার পরও এই দলগুলোর নেতাকর্মীদের আতঙ্ক কাটছে না, দলগুলো স্থবির হয়ে রয়েছে।
বিগত ২০০৫ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে কয়েকটি বাম ও গণতান্ত্রিক দল নিয়ে ১৪ দলীয় জোট গঠিত হয়। ২৩ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে একসঙ্গে আন্দোলন, নির্বাচন ও সরকার গঠন এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে ১৪ দল পথ চলা শুরু করে। সরকার গঠনের পর ২৩ দফা বাস্তবায়ন করার কথা বলা হয়। তবে গত কয়েক বছর ধরেই ১৪ দলের শরিকরা অভিযোগ করে আসছেন আওয়ামী লীগ সেই শর্ত বাস্তবায়ন করেনি, প্রতিশ্রুতি রাখেনি। একক সিদ্ধান্ত ও একলা চল নীতি অনুসরণ করে চলেছে আওয়ামী লীগ। যদিও এই জোটের কয়েকটি দল সব সময়ই সমঝোতার ভিত্তিতে আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেওয়া আসনে নির্বাচন করে জাতীয় সংসদে যায় এবং কেউ কেউ সরকারে মন্ত্রিত্বও পান।
৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই জোটের দলগুলোর ওপর বিপর্যয় নেমে আসে। এর জন্য তারা এখন আওয়ামী লীগকে দায়ী করছে। পাশাপাশি এই বিপর্যয় দলগুলো কীভাবে কাটিয়ে উঠে রাজনীতিতে ফিরে আসবে তা নিয়ে দলের নেতাকর্মীরা ভাবতে শুরু করেছেন।
তাদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে দলে যে স্থবিরতা নেমে এসেছে এটা এক পর্যায়ে কাটিয়ে উঠে রাজনীতিতে ফিরে আসতে না পারলে দল টিকিয়ে রাখা যাবে না। আবার বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার পাশাপাশি জোটে অবস্থান নিয়েও এই দলগুলির মধ্যে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, ন্যাপসহ কয়েকটি দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এ সব তথ্য জানা যায়।
ওই দলগুলোর নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, ওয়ার্কার্স পার্টির অধিকাংশ নেতাকর্মীর মধ্যে ১৪ দল নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। তারা আর ১৪ দলকে অগ্রসর করে নিতে চান না। এই মুহূর্তেই ১৪ দল থেকে বেরিয়ে আসার ঘোষণার পক্ষে তারা। বিশেষ করে ওয়ার্কার্স পাটির জেলার নেতাকর্মীরা এ ধরনের জোরালো অবস্থান নিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ জোট শরিকদের অন্য চোখে দেখেছে, হেয় প্রতিপন্ন করেছে। সরকার পরিচানায় জোট শরিকদের কোনো পরামর্শ নেয়নি, কোনো কথা শোনেনি। এই অবস্থার জন্য আওয়ামী লীগ এককভাবে দায়ী। তবে দুই-একজন কেন্দ্রীয় নেতা এই মুহূর্তে জোট নিয়ে নেতিবাচক কোনো সিদ্ধান্তে না যাওয়ার পক্ষে।
তাদের মতে, পার্টির প্রধান নেতা কারাবন্দি সভাপতি রাশেদ খান মেননকে মুক্তির ক্ষেত্রে জোটে থাকার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সভা করার চিন্তাভাবনা চলছে। সেখানে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে দলটির একাধিক নেতা জানান।
একই ধরনের মনোভাব জোটের অন্য শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের মধ্যেও। এই দলটির অনেকেই ১৪ দল থেকে বেরিয়ে আসার পক্ষে। আওয়ামী লীগ এতো দিন একলা চল নীতিতে চলেছে এই অবস্থায় দলটির সঙ্গে জোটে থাকা সম্ভব নয় বলে জাসদের ওই নেতাকর্মীরা মনে করেন। কেউ কেউ সর্বশেষ নির্বাচন অর্থাৎ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভূমিকাকে সামনে নিয়ে আসছেন। আওয়ামী লীগের একক সিদ্ধান্ত ও ব্যর্থতার জন্য জোটের সবার ওপর দায় আসছে। জাসদের ওই নেতাদের মতে, গত নির্বাচনের পর থেকেই ১৪ দল হারিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ ওই জোটের প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে করেনি। সর্বশেষ পরিস্থিতি বেগতিক দেখে জোট নেতাদের ডেকেছে। তবে দলের সভা করা বা এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা করার মতো কোনো পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি বলে মনে করছেন তারা।
এই জোটের আরেক শরিক ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপের নেতারা জানান, এই জোট আগামীতে থাকবে কি, থাকবে না তা নিয়ে ন্যাপে এমন কি জোটের অন্য দলগুলোর মধ্যেও দ্বিমত আছে। আগামীতে এই জোট নিয়ে অগ্রসর হতে গেলে যে শর্তগুলোর ভিত্তিতে ১৪ দল গঠন হয়েছিল সে ব্যাপারে ক্ষমতায় গিয়ে আওয়ামী লীগ কী করেছে, কতটুকু ভূমিকা রেখেছিল সেই প্রশ্ন সামনে চলে আসবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কী ভূমিকা নিয়েছিল, অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির জন্য কী করেছে জোটে থাকার আগে এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়ার্কার্স পার্টির এক নেতা এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, আওয়ামী লীগ নিজের মতো করে চলেছে, সিদ্ধান্ত নিয়েছে, নিজের মতো করে সরকার চালিয়েছে। আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক রাজনীতিকে আন্ডার মাইন্ড করেছে, অন্যদিকে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়েছে। এই অবস্থায় ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষে জোটে থাকা সম্ভব হবে না।