আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১৬:১২ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪৭ বার
পুরো বিশ্বের নজর এখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে। কমলা হ্যারিস, নাকি ডোনাল্ড ট্রাম্প- কে হতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট, তা জানতে অপেক্ষার প্রহর গণনা চলছে।
প্রচারণায় গিয়ে দুই প্রার্থীই নানা ইস্যুতে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অভ্যন্তরীণ সংকট সমাধানের পাশাপাশি ইউক্রেন ও গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধ, আফগানিস্তানে তালেবান ইস্যুসহ গুরুত্বপূর্ণ নানান বৈশ্বিক ইস্যুও গুরুত্ব পেয়েছে।
‘প্রেসিডেন্ট নির্বাচন’ হিসেবে পরিচিত হলেও এই নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদের পাশাপাশি আইনসভার সদস্যদেরও বেছে নেবেন মার্কিন নাগরিকেরা।
নির্বাচন কবে?
যে বছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়, সেই বছরের নভেম্বর মাসের প্রথম মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটগ্রহণ হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ নভেম্বর।
এদিন ভোটারদের রায়ে যিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন, তিনিই ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাস থেকে শুরু করে পরবর্তী চার বছরের জন্য রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকবেন।
প্রধান দল কয়টি?
অন্য অনেক দেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রে অনেক রাজনৈতিক দল নেই। দেশটিতে প্রধানত দুইটি দলই বেশি ভোট পেয়ে থাকে- ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ও রিপাবলিকান পার্টি।
তবে প্রধান এই দুই দলের বাইরে ছোট রাজনৈতিক দল লিবার্টারিয়ান, গ্রিন, ইন্ডিপেনডেন্ট পার্টির মতো দলগুলোকে কখনো কখনো প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী ঘোষণা করতে দেখা যায়। তবে তাদের নিয়ে আলোচনাও হয় না।
এবার মূল প্রার্থী কে কে?
এবারো প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ডেমোক্রেটিক পার্টি ও রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে যাচ্ছে।
ডেমোক্রেটিক পার্টির হয়ে এবার প্রেসিডেন্ট পদে লড়ছেন দলটির অন্যতম শীর্ষ নেতা ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী ভাইস-প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস।
তার বিরুদ্ধে মাঠে রয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিজনেস টাইকুন ট্রাম্প এর আগেও নির্বাচনে জিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন।
প্রচারণায় গুরুত্ব পেয়েছে যেসব বিষয়।
এবারের নির্বাচনী প্রচারণায় দেশটির অভ্যন্তরীণ ইস্যুগুলোর পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ, অর্থনৈতিক মন্দা, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বৈশ্বিক গুরুত্বপূর্ণ সংকটগুলোও বেশ গুরুত্ব পেতে দেখা গেছে।
গত সেপ্টেম্বরে কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে প্রথম বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। তাতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি, গর্ভপাত আইন, প্রজেক্ট-২০২৫, পররাষ্ট্র নীতি ছাড়াও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধ, আফগানিস্তানে তালেবান ইস্যুসহ নানান বিষয়ে কথা বলেছেন।
নির্বাচনে কারা ভোট দিতে পারেন?
এক কথায় বলতে গেলে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী যেকোনো মার্কিন নাগরিক নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে নর্থ ডাকোটা বাদে যুক্তরাষ্ট্রের বাকি ৪৯টি অঙ্গরাজ্যের সবগুলোতে আগেই ভোটার নিবন্ধন করা হয়।
বিদেশে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকরাও ভোটার নিবন্ধনে নাম লেখাতে পারেন। এক্ষেত্রে পোস্টাল ব্যালট বা ডাকযোগে ভোট দেওয়ার জন্যও তারা আবেদন করতে পারেন।
এক্ষেত্রে যারা অসুস্থতা, প্রতিবন্ধিতা, ভ্রমণ বা অন্য কোনো কারণে দেশ বা অঙ্গরাজ্যের বাইরে থাকায় ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেন না, তাদের জন্য ডাকযোগে ভোট দেয়ার সুযোগ রয়েছে। যারা নির্বাচনের দিন ভোট দিতে যাবেন, তাদের সশরীরে ভোট কেন্দ্রে হাজির হয়ে ভোট দিতে হবে।
ভোট বেশি পেলেই প্রেসিডেন্ট?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে একজন প্রার্থী বেশি সংখ্যক ভোটারের ভোট (পপুলার ভোট) পাওয়ার পরও বিজয়ী নাও হতে পারেন।
এর কারণ দেশটিতে ভোটাররা সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন না। সেখানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা হয় ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ নামে বিশেষ একটি ব্যবস্থায়।
জাতীয় স্তরের নির্বাচনী লড়াইয়ের বদলে প্রার্থীদের জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয় স্থানীয়ভাবে, অর্থাৎ প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের নির্বাচনী লড়াইয়ের মাধ্যমে।
অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের একটিতে জয়ী হওয়ার অর্থ হলো একজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী সেই অঙ্গরাজ্যের সবকটি ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ ভোট পেয়ে যাবেন। দেশটিতে ইলেকটোরাল কলেজের মোট ভোটের সংখ্যা ৫৩৮টি।
মাইন ও নেব্রাসকা- এ দুটি অঙ্গরাজ্য বাদে বাকি ৪৮টি অঙ্গরাজ্যের ইলেকটোরাল ভোট যোগ দিয়ে যে প্রার্থী ২৭০টি বা তারও বেশি ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ ভোট পাবেন, তিনিই হবেন পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
আর বিজয়ী প্রার্থীর প্রার্থীর রানিং মেট হবেন দেশটির ভাইস-প্রেসিডেন্ট।
ভোটে পিছিয়ে থেকেও ইলেকটোরাল ভোটে যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত পাঁচজন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জর্জ ডব্লিউ বুশও রয়েছেন।
ইলেকটোরাল ভোটে ‘টাই’ হলে কী হবে?
ইলেকটোরাল ভোটে যদি কোনো প্রার্থী এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পান, সেক্ষেত্রে মার্কিন আইন সভার নিম্ন-কক্ষ ‘হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস’ ভোট দিয়ে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবে।
এক্ষেত্রে প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যরা শীর্ষ তিন প্রার্থীর মধ্য থেকে একজনকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাছাই করে থাকেন।
বাকি দুইজন প্রার্থীর মধ্য থেকে একজনকে ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নেয় সিনেট।
নির্বাচনের ফলাফল কখন জানা যাবে?
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল পেতে কয়েকদিন পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।
এর কারণ হলো, অঙ্গরাজ্যগুলোর স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়। এরপর ভোট গণনা শুরু হয়। কিন্তু টাইমজোনের কারণে গণনা সময়ের পার্থক্য দেখা যায়।
কোনো কোনো নির্বাচনে দ্রুত ফলাফল সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়, আবার কখনো কখনো সময় লাগে।
বিজয়ী প্রার্থীর নাম ঘোষণার পর কী হয়?
নির্বাচনের পরপরই নতুন সরকার গঠন করা হয় না। বিজয়ীদের কিছুদিন সময় দেওয়া হয়, যাকে ‘রূপান্তরকালীন সময়’ বলা হয়ে থাকে।
ওই সময়ের মধ্যে নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের বাছাই করেন এবং পরিকল্পনা তৈরি করে থাকেন। পরে নতুন বছরের শুরুতে অর্থাৎ জানুয়ারিতে নতুন বা পুনর্নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের অভিষেক ও শপথ অনুষ্ঠান হয়।
শুধুই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন?
৫ নভেম্বরের মার্কিন নির্বাচনে সবার নজর যে প্রেসিডেন্ট-ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের দিকে থাকবে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই।
তবে প্রেসিডেন্ট-ভাইস প্রেসিডেন্ট ছাড়াও ওই নির্বাচনের মাধ্যমে মার্কিন ভোটাররা তাদের আইনসভার নতুন সদস্যদেরও বেছে নেবেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভাকে বলে কংগ্রেস, যা মূলত দুই কক্ষবিশিষ্ট। নিম্নকক্ষকে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস বা প্রতিনিধি পরিষদ এবং উচ্চকক্ষকে সিনেট বলা হয়ে থাকে।
কংগ্রেসের এ দুই ধরনের সদস্যের মধ্যে প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যরা নির্বাচিত হন দুই বছরের জন্য। এবারের নির্বাচনে মার্কিন নিম্নকক্ষের ৪৩৫টি আসনের সব কটিতেই ভোট হবে।
সিনেট সদস্যদের মেয়াদ হয়ে থাকে ছয় বছর। তবে প্রতি দুই বছর পরপর সিনেটের এক-তৃতীয়াংশ আসনে ভোট অনুষ্ঠিত হয়।
সে হিসেবে ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে সিনেটের ৩৪টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে জানা যাচ্ছে।
‘সুইং স্টেট’ কোনগুলো?
বেশিরভাগ অঙ্গরাজ্যই প্রতিটি নির্বাচনে ধারাবাহিকভাবে একই দলকে ভোট দিয়ে আসে। রিপাবলিকান দুর্গ বলে পরিচিত এ অঙ্গরাজ্যগুলোকে বলা হয় রেড স্টেট বা লাল রাজ্য আর ডেমোক্রেটদের প্রাধান্য পাওয়া অঙ্গরাজ্যকে বলা হয় ব্লু স্টেট বা নীল রাজ্য।
হাতে গোনা কয়েকটি অঙ্গরাজ্য আছে যে রাজ্যগুলোর ভোট প্রার্থীদের কারণে যেকোনো শিবিরে যেতে পারে। ফলে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীরা নির্দিষ্ট কিছু ‘সুইং স্টেট’ এর দিকে নজর দেন যেখানে ভোট কোন পার্টির পক্ষে যাবে, তা নির্দিষ্ট করে বোঝা যায় না।
এগুলোই হলো আমেরিকান নির্বাচনের ব্যাটলগ্রাউন্ড বা নির্বাচনী রণক্ষেত্র। এগুলোকেই অনেকে বলে থাকে বেগুনি রাজ্য। প্রার্থীদের কাছে এসব অঙ্গরাজ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। যেগুলোকে বলা হয় ব্যাটলগ্রাউন্ড স্টেট বা নির্বাচনী রণক্ষেত্র।
আর এ অঙ্গরাজ্যগুলোর ভোটই শেষ পর্যন্ত হয়ে দাঁড়ায় জয় পরাজয়ের মূল চাবিকাঠি। এ রাজ্যগুলোতেই হয় মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা।