ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২ নভেম্বর, ২০২৪ ১৬:০১ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৯৯ বার
১২ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলনের উদ্যোগে “কৃষি ও ভূমি সংস্কার কমিশন গঠনের দাবিতে মানববন্ধন” অনুষ্ঠিত হয়।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সেখ নাছির উদ্দিন বলেন, ১৯৯৫ সালের ১৫ মার্চ তৎকালীন সরকারের মদদপুষ্ট পুলিশ বাহিনী সার, তেল, কীটনাশক ও কৃষিপণ্যের ন্যায্য দাবিতে আন্দোলনরত ১৮ জন কৃষককে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। ২০১৬ সালে সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ৩ আদিবাসী কৃষককে পুলিশ গুলি করে হত্যা করে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন সঠিক হত্যার বিচার হয়নি। কৃষক ও ভূমিহীনদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় পৃথক কৃষি ও ভূমি সংস্কার কমিশনের বিকল্প নেই। ছাত্র—জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফসল এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা তারা গরীব অসহায় কৃষক ও ভূমিহীনদের বৈষম্য দূরীকরণে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন এবং আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে কৃষি ও ভূমি সংস্কার কমিশন গঠনের দৃশ্যমান ভূমিকা গ্রহণ করবেন। অন্যথায় আমরা সারাদেশের ভূমিহীন—কৃষক—শ্রমিক—জনতা বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।
বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছামিউল আলম রাসু বলেন, বাংলাদেশের এবারের গণঅভ্যূত্থান, বৈষম্যমুক্তির যে দাবীকে সামনে এনেছে, তার প্রতি ন্যুনতম সুবিচার করতে হলে সর্বাগ্রে এখানে এই ভূমিহীন নারী—পুরুষদের জন্য বর্তমান বাস্তবতায় কি কি পদক্ষেপ গ্রহন করা সম্ভব তা নিরূপণ করা সর্বাধিক অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা, কিন্তু বাস্তবে কৃষি, কৃষক ও ভূমিহীনরা কোন প্রকার আলোচনাতেই নাই অথচ বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন, স্বার্বভৌম, মর্যাদাপুর্ণ রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তোলা ও টিকিয়ে রাখার প্রথম শর্ত হলো খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। নিজস্ব প্রাকৃতিক সম্পদকে রক্ষা করা। এই বাস্ততাকে বিবেচনায় রেখে রাষ্ট্র সংস্কারের অপরাপর ক্ষেত্রের পাশাপাশি ‘কৃষি ও ভূমি সংস্কার কমিশন’ গঠন করার জন্য জোড় দাবী জানাচ্ছি। ইতিপূর্বে আমরা সারাদেশের ভূমিহীন এবং বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে তাদের মতামতের ভিত্তিতে যেসব দাবী—দাওয়া তুলে ধরেছিলাম তা আবারও এর সাথে যুক্ত করে দিচ্ছি।
ছাত্র—জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে রাষ্ট্র সংস্কার কর্মসূচী বাস্তবায়নে ভূমিহীন কৃষকদের প্রস্তাবনা নিম্নরূপ:
১) কৃষি, কৃষক এবং ভূমিহীনদের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ভূমিহীন প্রতিনিধিদের অন্তর্ভূক্ত করে একটি আলাদা কমিশন গঠন করতে হবে ।
২) ভূমি সংস্কার, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন এবং প্রকৃতিবান্ধব আধুনিক কৃষি পদ্ধতি প্রচলনের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে।
৩) খাসজমি যথাযথভাবে চিহ্নিত করে প্রকৃত ভূমিহীনদের মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বন্টনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪) খাল—বিল—জলাশয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকৃত ভূমিহীন জেলে—কৃষকদের মধ্যে বরাদ্দ দিতে হবে এবং বরাদ্দ কমিটিতে ভূমিহীনদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
৫) হাউজিং ও রিয়েল এষ্টেট ব্যবসার নামে দরিদ্র এবং নিরীহ জমির মালিকদের জমি দখল, নামমাত্র দামে বিক্রয়ে বাধ্য করেছে এমন জবর দখলকারীদের বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে এবং ভবিষ্যতে যাতে এইসব ব্যবসার নামে সাধারন মানুষদের উচ্ছেদ করে গৃহহারা, জমিহারা না করতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে।
৬) উন্নয়নের নামে আইন অমান্য করে তিন ফসলী জমি অধিগ্রহন বন্ধ করতে হবে। ইতিমধ্যে অধিগ্রহনকৃত এমন প্রকল্প বাতিল করতে হবে।
৭) সংবিধানে উল্লেখিত ‘স্থানীয় শাসন’ পরিবর্তন করে প্রকৃত স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। স্থানীয় নির্বাচনে বিশেষত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ বাতিল করতে হবে।
৮) সংবিধান সংস্কার কমিশনসহ সকল কমিশনে ভূমিহীন কৃষকদের প্রতিনিধিত্ব রাখতে হবে।
৯) জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে সংবিধান সংস্কারের লক্ষ্যে ‘সংবিধান সংস্কার সভা’র নির্বাচনের মাধ্যমে সংবিধানের গণ ক্ষমতা তান্ত্রিক সংস্কার করতে হবে।
মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন গণঅধিকার পরিষদ নেতা তারেক রহমান, নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দীন, বৈষম্য বিরোধ আন্দোলনে শহীদ আশরাফুর ইসলাম অন্তরের খালু তাজুল ইসলাম, দলিত মানবাধিকার কর্মী বিমপাল্লী ডেভিট রাজু, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য কৈলাশ চন্দ্র রবি দাস, রাকসু আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল মাজেদ অন্তর, রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলনের সহ—সভাপতি লামিয়া ইসলাম, রোকন ওসমান, শ্রাবণ শেখ, সহ—সাধারণ সম্পাদক শাহিন আলম, অর্থ সম্পাদক শামছুদ্দিন রাকিব, দপ্তর সম্পাদক মোঃ মহসিন, লালমনিরহাট জেলার যুগ্ম সম্পাদক আশরাফুল আলম প্রমুখ।