ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

মুক্তিপণের উদ্দেশে অপহরণ করা হয় জাইফাকে: র‌্যাব

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১৭:৫৫ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ২৫ বার


মুক্তিপণের উদ্দেশে অপহরণ করা হয় জাইফাকে: র‌্যাব

ঢাকা: রাজধানীর আজিমপুরে একটি বাসায় ডাকাতির পর ৮ মাস বয়সী শিশু কন্যা আরিসা জান্নাত জাইফাকে মুক্তিপণের জন্য অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় অপহৃত শিশুটিকে উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

পাশাপাশি এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী মোছা. ফাতেমা আক্তার শাপলাকেও (২৭) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

 

শনিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় কারওয়ানবাজারের র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস।

তিনি বলেন, বহুল আলোচিত ঢাকার আজিমপুরে বাসায় ডাকাতির পর শিশু কন্যাকে অপহরণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উদ্ধার ও অপহরণকারীকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। বৃহস্পতিবার (১৫ নভেম্বর) রাত দেড়টার দিকে র‌্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিং এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি বাসা থেকে অপহরণের পরিকল্পনাকারী মোছা. ফাতেমা আক্তার শাপলাকে গ্রেপ্তার করে। ওই বাসা থেকে অপহৃত শিশু আরিসা জান্নাত জাইফাকে উদ্ধার করে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ফাতেমা ডাকাতি ও অপহরণের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।

বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে আজিমপুর মেডিকেল স্টাফ কোয়ার্টার সংলগ্ন লালবাগ টাওয়ারের পাশের গলি থেকে ফারজানা আক্তার নামক এক নারীর বাসায় ডাকাতি হয়। এ সময় ডাকাতির সঙ্গে জড়িতরা নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার নেওয়ার পাশাপাশি তারা শিশুকন্যাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় এলাকাবাসীসহ সারাদেশের মানুষ হতভম্ব হয়ে যায়।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, অপহৃত শিশু আরিসা জান্নাত জাইফার মা ফারজানা আক্তার সরকারি চাকরি করেন এবং বাবা বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তারা তিন বছর ধরে ওই বাসায় থাকছেন। তবে চার মাস ধরে পারিবারিক কলহের জেরে ভুক্তভোগীর বাবা আলাদা রয়েছেন।

ঘটনার সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, অপহরণের এক সপ্তাহ আগে ফারজানা আক্তারের সঙ্গে অফিসে যাতায়াত করার সময় গ্রেপ্তার শাপলার পরিচয় হয়। এ সময় শাপলা ফারজানার কাছে তার নাম রাইসা এবং তার বাড়ি নওগাঁ জেলা বলে মিথ্যা পরিচয় দেয়। পাশাপাশি জানায় সে অবিবাহিত এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্রী। পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি সচিবালয়ের পরিবহন পুলে অফিস সহায়ক হিসেবে চাকরি করেন।  

ফাতেমা আক্তার ভুক্তভোগীর মা ফারজানা আক্তারকে আরও জানান যে, তার ঢাকায় থাকার জন্য সাবলেট হিসেবে একটি ভালো রুম দরকার এবং তাকে সাবলেট হিসেবে ভুক্তভোগীর বাসা ভাড়া দিলে সারাদিন বাসায় পড়াশোনার পাশাপাশি ভুক্তভোগীকে দেখভালোও করতে পারবেন। ভুক্তভোগীর মা ভিকটিমের দেখাশোনার কথা চিন্তা করে ফাতেমা আক্তারকে সাবলেট হিসেবে বাসা ভাড়া দেওয়ার জন্য রাজি হয়। পরবর্তীতে বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) বিকেলে ফাতেমা বাসায় আসে এবং ভুক্তভোগীর মাকে ২ হাজার টাকা অগ্রিম ভাড়া হিসেবে দিয়ে বাসায় রাতযাপন করে।

পর দিন (শুক্রবার) সকালে গ্রেপ্তার ফাতেমা আক্তার ভুক্তভোগীর মা ফারজানা আক্তারকে জানান যে, গ্রাম থেকে তার চাচাতো ভাই চাল নিয়ে বাসায় আসবে। সকাল আনুমানিক সাড়ে ৮টায় ফাতেমা আক্তার তার চাচাতো ভাই পরিচয়ে তিন ব্যক্তিকে বাসায় নিয়ে আসে। বাসায় আসার পর আলাপচারিতার এক পর্যায়ে ফাতেমা আক্তার ও তার কথিত চাচাতো ভাইয়েরা ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ভুক্তভোগীর মাকে ওড়না দিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলেন। এ সময় তারা বাসার স্বর্ণালংকার ও নগদ অর্থসহ মূল্যবান মালামাল লুট করে ভুক্তভোগী জাইফাকে নিয়ে যান।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার এ পরিচালক আরও বলেন, অপহরণের পর ফাইজাকে নিয়ে মোহাম্মদপুরের নবীনগরের বাসায় চলে আসে গ্রেপ্তার শাপলা। তার সহযোগীরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপন করেন। ফাতেমা আক্তার ও তার সহযোগীরা মুক্তিপণ আদায় করার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু ঘটনাটি বিভিন্ন মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণে দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে তারা ভুক্তভোগীর পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করতে পারেনি বলে জানায়।

তিনি আরও বলেন, শাপলা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তার সঙ্গে এ ঘটনায় জড়িত অন্য তিনজনের নাম সুমন, হাসান ও রায়হান বলে জানিয়েছে৷ তবে তাদের এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি। তারা অপহরণের দুই সপ্তাহ আগে থেকে ভুক্তভোগী ফারজানার মাকে অনুসরণ করছিল। এমনকি বৃহস্পতিবারই ডাকাতি করার পরিকল্পনা করেছিলেন। তবে সেদিন ওই বাসায় ভুক্তভোগীর এক আত্মীয় আসায় তারা সফল হননি। সেদিন রাতে তারা ভুক্তভোগীর পরিবারকে চেতনানাশক ওষুধও দিয়েছিলেন।

ফাতেমা আক্তার শাপলা সম্পর্কে র‌্যাব জানায়, তিনি একজন গৃহিণী। তার স্বামীর নাম মো. সেলিম হোসেন। তিনি ২০১০ সাল থেকে পরিবারের সঙ্গে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসবাস শুরু করেন। তার বাড়ি বগুড়ায়। গ্রেপ্তার শাপলা ২০১২ সালে বগুড়ার একটি স্কুল থেকে এসএসসি এবং ২০১৪ সালে রাজধানীর একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে রাজধানীর অপর একটি কলেজে মার্কেটিং বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা শুরু করলেও তা শেষ করেনি। পরবর্তীতে ২০২৩ সালে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং ৩-৪ মাস আগে মোহাম্মদপুর নবীনগর হাউজিং এলাকায় তার স্বামীর নিজস্ব ফ্ল্যাটে বসবাস শুরু করেন।  


   আরও সংবাদ