ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ০৯:৪৩ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ২৪ বার
কলকাতা: সহিংসতার কারণে আবারও সংবাদ শিরোনামে উত্তর-পূর্ব ভারতের মণিপুর রাজ্য। ইতোমধ্যে রাজ্যটিতে আড়াইশোর বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
গত কয়েকদিনে সংখ্যাটা আরও বেড়েছে। গতকালই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে রাজ্যটিতে বাড়ানো হয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সংখ্যা। মোট ২১৮ কোম্পানি অর্থাৎ প্রায় তিন হাজার সশস্ত্র বাহিনী রাজ্যটিতে টহল দিচ্ছে। জারি করা হয়েছে কারফিউ এবং ফের বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা।
এহেন পরিস্থিতিতে মণিপুরে শান্তি-শৃঙ্খলা ফেরাতে সমস্ত নিরাপত্তা এজেন্সিকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত কয়েকদিন ধরে মণিপুরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি অস্থির হয়ে উঠেছে। সংঘর্ষে কুকি এবং মেইতেই-উভয় সম্প্রদায়ের সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা সহিংসতায় লিপ্ত হয়েছে। ফলে দুর্ভাগ্যজনক প্রাণহানি এবং জনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে আরও বলা হয়েছে, শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনো ব্যক্তি সহিংসতামূলক ও শান্তি বিঘ্নকারী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়ার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলি কার্যকরী তদন্তের জন্য কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ-কে হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
এর পাশাপাশি শান্তি বজায় রাখতে এবং গুজবে কান না দিতে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে রাজ্যটির জনসাধারণকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সেইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে নিরাপত্তা বাহিনীকে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ'র মন্ত্রণালয়।
গত ৭ নভেম্বরের জিরিবাম জেলায় এক জনজাতি নারীকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সামনে আসার পরই উত্তেজনা ছড়ায় মণিপুরে। ৩১ বছরের ওই নারীকে ধর্ষণ করে জ্যান্ত জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছিল তার স্বামী। অভিযোগ, মেইতেই সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে। ওইদিন জিরিবাম জেলায় জাইরন গ্রামের অন্তত ১৬ টি বাড়িতে অতর্কিতে আগুন ধরিয়ে দেয় দুষ্কৃতকারীরা। নির্যাতিতার বাড়িও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ভয়ে গ্রাম ছাড়ে বহু মানুষ। আশ্রয় নেয় পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে।
ওই ঘটনার ঠিক দু'দিন পর অর্থাৎ ৯ নভেম্বর মনিপুরের বিষ্ণুপুর জেলায় মেইতেই সম্প্রদায়ের এক কৃষক নারীকে গুলি করে হত্যা করে দুষ্কৃতকারীরা। জানা যায়, নারীটি সেই সময় জমি চাষে ব্যস্ত ছিলেন। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার। পার্বত্য এলাকা থেকে কুকি সম্প্রদায় এমন করেছে বলে অভিযোগ করেছে মেইতেই।
এরপরই গত সোমবার রাজ্যটির জিরিবাম জেলায় কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে কমপক্ষে ১১ জন সন্দেহভাজন জঙ্গি নিহত হয়। বোরোবেক্রা পুলিশ ও থানা সংলগ্ন সিআরপিএফ ক্যাম্পে কুকি দুষ্কৃতকারীরা হামলা চালালে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয়। তাতেই এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। ঠিক তারপরই কুকি জঙ্গিরা নারী ও শিশুসহ ছয় জনকে অপহরণ করে। কয়েকদিন পরেই ছয়জনের লাশ উদ্ধার হয়। যার মধ্যে আট মাসের একটি শিশু সন্তানও রয়েছে। নিহতরা সবাই মেইতেই সম্প্রদায়ের মানুষ বলে জানা গেছে। এরপরই জিরিবাম জেলায় নতুন করে উত্তেজনা ছড়ায়।
এমন এক পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশিকা। উপত্যকায় নতুন করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায় ইম্ফল ইস্ট, ইম্ফল ওয়েস্ট জেলায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। সেই সাথে ইম্ফল ইস্ট, ইম্ফল ওয়েস্ট, বিষ্ণুপুর, থৌবাল, কাকচিং, কাংপোকপী, চুরাচাঁদপুর- রাজ্যটির সাত জেলায় ইন্টারনেট পরিষেবা সাময়িক বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বছর মে মাস থেকে জাতিবিদ্বেষে বিপর্যস্ত মনিপুর। এখনো পর্যন্ত ২৬০ জনের মৃত্যুর খবর সামনে এসেছে। ইম্ফলসহ উপত্যকা এলাকায় রয়েছে এই মেইতেই সম্প্রদায়। যারা জনসংখ্যা প্রায় ৫৩ শতাংশ।
অপরদিকে, জঙ্গল ঘেরা পার্বত্য এলাকায় বসবাস নাগা ও কুকি সম্প্রদায়ের। যারা ৪০ শতাংশ জনসংখ্যায়। এই দুই সম্প্রদায়ের সহিংসতায় বারবার অগ্নিগর্ভ উঠছে সেখানকার পরিস্থিতি।