ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১৩:৪৪ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ২৬ বার
ঢাকা: গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। এরইমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা নেওয়ার ১০০ দিন পেরিয়ে গেছে।
এ সময়ে কেমন ছিল কূটনৈতিক কার্যক্রম?
অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে বড় দেশগুলোর সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা করে চলেছে। এ সময়ে জাতিসংঘ অধিবেশনের মতো বড় মঞ্চেও বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার।
অধ্যাপক ইউনূসের ইমেজ ব্যবহার
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। সে কারণে তার ইমেজকে কাজে লাগানোর জন্য দেশের কূটনীতিকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন এরইমধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন মিশনের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে তিনি ইউনূসের সুনামকে কূটনীতিতে ব্যবহারের জন্য নির্দেশনা দেন। দেশের কূটনীতিকরা সেই অনুযায়ীই কাজ করছেন।
জাতিসংঘ অধিবেশন
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর ২৪ সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এটিই ছিল প্রধান উপদেষ্টার প্রথম বিদেশ সফর। জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন। বিশ্বের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন তিনি।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফর
গত ৪ অক্টোবর ঢাকা সফর করেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। এ সরকারের সময়ে এটিই ছিল কোনো বিদেশি সরকার প্রধানের প্রথম ঢাকা সফর। ঢাকা সফরকালে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্য বার্তা দেন।
অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর
অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টনি বার্গের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল গত ৩১ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর বাংলাদেশ সফর করে। সফরকালে প্রতিনিধিদলটি প্রধান উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, সংস্কৃতি উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে। দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয় দুই পক্ষের মধ্যে। বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে দুটি সমঝোতাও সই হয়।
লেবানন থেকে বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনা
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরই লেবাননে ইসরায়েলি হামলা শুরু হয়। এরপর সেখান থেকে বাংলাদশিদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বৈরুতের বাংলাদেশ দূতাবাস এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার সহযোগিতায় লেবানন থেকে এ পর্যন্ত ১০টি ফ্লাইটে সর্বমোট ৬১৫ জন বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে আরও বাংলাদেশি ফিরবেন।
উপদেষ্টা-সচিবের সফর
অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, কুয়েত, সৌদি আরব, সামোয়া প্রভৃতি দেশ সফর করেছেন। এসব দেশে বিভিন্ন সম্মেলনে অংশ নিয়ে সম্পর্কের বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থানও তুলে ধরেন ।
সৌদি আরবের রিয়াদে আরব-ইসলামী শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। সম্মেলনে তিনি বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনের জনগণের ন্যায্য দাবির পক্ষে এবং স্বাধীন সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে জোরালো অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন। এ ছাড়া পররাষ্ট্রসচিব এম জসীম উদ্দিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া সফর করেছেন।
বাংলাদেশ-ইইউ সভা
বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে প্রস্তাবিত পার্টনারশিপ অ্যান্ড কো-অপারেশন অ্যাগ্রিমেন্ট-পিসিএ সংক্রান্ত আলোচনা শুরুর লক্ষ্যে প্রথম ব্যাখ্যামূলক সভা গত ৫-৬ নভেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় প্রস্তাবিত চুক্তিতে উল্লেখিত সহযোগিতার ক্ষেত্রসমূহের ওপর প্রাথমিক পরিচিতিমূলক আলোচনা হয়। বিশেষভাবে ব্যবহৃত বিভিন্ন পরিভাষা সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। এ চুক্তি সই হলে বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যকার সম্পর্কে এক নতুন মাত্রা যোগ হবে এবং তা কৌশলগত পর্যায়ে উন্নীত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আজারবাইজান সফর
অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস গত ১২ নভেম্বর আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দেন। একই সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা আজারবাইজানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেন। এ ছাড়া জলবায়ু সম্মেলন চলাকালে প্রধান উপদেষ্টা সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট, লিশটেনস্টাইনের প্রধানমন্ত্রী, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার প্রেসিডেন্ট, বার্বাডোজের প্রধানমন্ত্রী, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডি, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট, ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্ট, আলবেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী, মন্টিনিগ্রোর প্রেসিডেন্ট, ব্রাজিলের পরিবেশমন্ত্রী, ঘানার প্রেসিডেন্ট, নেপালের প্রেসিডেন্ট, মিশরের গ্র্যান্ড মুফতি, ভ্যাটিকানের কার্ডিনাল, আইওএমের মহাপরিচালক ও ফিফার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রীর ঢাকা সফর
ব্রিটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ক্যাথরিন ওয়েস্ট গত ১৬ নভেম্বর দুই দিনের জন্য ঢাকা সফরে আসেন। সফরকালে তিনি প্রধান উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রীর ঢাকা সফরের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে অর্থনৈতিক, কৌশলগত ও অভিবাসন অংশীদারিত্ব জোরদারকরণের মাধ্যমে সম্পর্কের দৃঢ়তা বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন মোড়?
স্বাধীনতা যুদ্ধের পর এই প্রথম পণ্যবাহী কোনো জাহাজ পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে এসেছে। ১৩ নভেম্বর জাহাজটি করাচি থেকে রওনা হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করে। ঘটনাটিকে দুই দেশের মধ্যে প্রথম সরাসরি সামুদ্রিক সংযোগ বলে উল্লেখ করেছে ঢাকার পাকিস্তান হাইকমিশন।
বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানি হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ এ ঘটনাকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে একটি প্রধান পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেন। তবে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে জাহাজ আসার ঘটনায় গভীর উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া ১৫ নভেম্বর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।
ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন ইস্যুতে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয়, বন্যার পানি, সীমান্ত হত্যা, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর উসকানিমূলক বক্তব্য, সংখ্যালঘু নির্যাতন, ইলিশ রপ্তানি ইত্যাদি নানা ইস্যুতে বর্তমান সরকারের সঙ্গে ভারত সরকারের টানাপোড়েন চলছে।
ভারতে বসে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধারাবাহিকভাবে রাজনৈতিক বক্তব্য-বিবৃতিতে দেশটির কাছে একাধিকবার তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, তাকে বিরত রাখতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
যা বলছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন বলেছেন, আমরা সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চাই। আমাদের বড় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সে অনুযায়ী আমরা কাজ করছি।