ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২১ নভেম্বর, ২০২৪ ০৯:২৮ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ১০ বার
ঢাকা: দেশের ক্রান্তিলগ্নে সেনাবাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনী অসাধারণ ভূমিকা পালন করে বাংলাদেশকে চরম বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করেছে। ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সব সময় জনগণের সঙ্গেই একাত্ম থাকে।
১৯৭১ সালে এই সেনাবাহিনী মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমেই গড়ে উঠেছিল। ১৯৯০-এর গণঅভ্যুত্থানে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে না গিয়ে সেনাবাহিনী জনগণের সঙ্গে একাত্ম হয়েছিল।
সেই সংকটময় সময়ে সেনাবাহিনী প্রধান ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ নূরউদ্দীন খান। ৩৪ বছর পর আরেক ইতিহাস সৃষ্টি করলেন বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
জেনারেল ওয়াকার আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর গুলির নির্দেশ না দিয়ে জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতি সম্মান দেখিয়েছিলেন। এভাবে সেনাবাহিনী জনতার পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল। এটা ছিল বাঁকবদলকারী এক সিদ্ধান্ত।
গত ৩ আগস্ট সেনাপ্রধান সেনা সদরে বিভিন্ন স্তরের সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সেখান থেকে সেনাপ্রধান উপলব্ধি করেন যে সেনা কর্মকর্তারা সরকার টিকিয়ে রাখার জন্য কোনো হত্যাকাণ্ডের অংশীজন হতে চান না। এছাড়া ৪ আগস্ট আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে রাওয়াতে।
সেদিন সেনাবাহিনীর কিছু অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন। এই খবর দ্রুত দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ঢাকার রাজপথে ছাত্র-জনতা যেভাবে সেনাবাহিনীর সদস্যদের প্রতি ভালোবাসা, সম্মান দেখিয়েছে এবং একাত্ম করে নিয়েছে, তা অভূতপূর্ব। সেনাবাহিনীকে তাই ভবিষ্যতেও জনগণের এই আবেগ, ভালোবাসা ও আকাঙ্ক্ষার সম্মান রাখতে হবে।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর রাওয়া রিসার্চ অ্যান্ড স্টাডি ফোরাম (আরআরএসএফ) ‘জুলাই-আগস্ট ২০২৪ বিপ্লবে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান এবং বিপ্লবোত্তর ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারের আয়োজন করে।
এতে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান নিয়ে আলোচনা করেন বক্তারা।
২০২৪-এর এই গণঅভ্যুত্থান এবং পরবর্তী সংকটময় সময়ে বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এক ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছেন। দেশের এক ক্রান্তিলগ্নে সেনাপ্রধান খুব সুন্দরভাবে ও অসাধারণ পরিপক্বতার সঙ্গে দেশের দায়িত্ব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের কাছে হস্তান্তর করেন।
সেনাবাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনী গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী প্রায়-নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে অনেক সংকট ও সমস্যা সমাধানে সরকারকে ব্যাপকভাবে সাহায্য করছে। বিশেষত সরকার গঠনের প্রথম দিকে বাংলাদেশ পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সময় দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং করছে। দেশে ও বিদেশে এই সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। ডাকাতি, জুডিসিয়াল ক্যু, আনসার বিদ্রোহ, গার্মেন্টস শ্রমিকদের নৈরাজ্যমূলক কর্মকাণ্ড দমনে এবং সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে সেনাবাহিনী অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছে। আগস্ট মাসে ফেনী-কুমিল্লা অঞ্চলে বন্যাদুর্গত অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল সশস্ত্র বাহিনী।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত ৬ অক্টোবর সেনা সদর নির্বাচনী পর্ষদ ২০২৪-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের সময় বলেন, ‘ছাত্র-জনতার জুলাই বিপ্লবের পর সেনাবাহিনী জনগণের আস্থার প্রতীক হয়েছে। ’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে এবং একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে দেশকে এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির হাত থেকে রক্ষা করেছে। ’
আশা করি, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আগামী দিনগুলোতেও দেশের সব বিপদে জনগণের পাশে থাকবে।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, গবেষক ও বিশ্লেষক