ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫১৬ বার
বখতিয়ার রহমান,পীরগঞ্জ (রংপুর) ঃ রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় অবৈধ ইট পোড়ানো চলছেই। অজ্ঞাত কারনে প্রশাসনের কোন তৎপরতাই নেই । উপজেলার ৫৮টি ইটভাটার মধ্যে ৫৪টির এ অবস্থা । বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগ ঘোষণার পর থেকে রংপুরসহ পীরগঞ্জ উপজেলার আশপাশের উপজেলা গুলোতে নতুন নতুন স্থাপনা তৈরির হিড়িক পড়ে। সেই সাথে রংপুর বগুড়া মহাসড়কের ফোরলেন করনের কাজ শুরু হওয়ায় পিকেট ইটের অধিক চাহিদা ও মুনাফার কারণে গত দু-বছরে একই ব্যক্তির একাধিক অবৈধ নতুন নতুন ভাটা স্থাপন করেছেন। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের হিসেব অনুযায়ী ২০০৮ ও ২০০৯ সাল পর্যন্ত পীরগঞ্জ উপজেলায় ১৩টি ইটভাটা থাকলেও চলতি বছরে এর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৮টি। আর এই বাকী ৪৫টি, নতুন ইটভাটা নির্মাণ করা হয়েছে আবাদী জমি নষ্ট করে। পরিবেশ অধিদপ্তরকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে অনুমতি ছাড়া নির্মাণ করা হয়েছে এ সকল ইটভাটা।
এর অধিকাংশ ভাটাতেই ফিক্সড ও বিপদজনক ড্রাম চিমনি ব্যবহার করা হয়েছে, সবচেয়ে আশ্চার্য জনক ব্যাপার হচ্ছে ৫৮টি ইটভাটার মধ্যে ৫৪টি ভাটা মালিকের নেই কোন বৈধ লাইসেন্স। সরেজমিনে দেখতে গিয়ে দেখা যায়-এ সকল ইট-ভাটাগুলোর কোনটিই পরিবেশ অধিদপ্তরের আইন মেনে স্থাপন করা হয়নি। পরিবেশ আইনে একটি ইটভাটার চতুরদিকে ৩ কিঃমিঃ এলাকার মধ্যে অপর ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ থাকলেও পীরগঞ্জ সদরের পার্শ্বে ৩ কিঃমিঃ মধ্যে ৮টি ইটভাটা নির্মাণ করা হয়েছে। উপজেলার ১নং চৈত্রকোল ইউনিয়নে ১ কিঃমিঃ মধ্যে ১০টি ইটভাটা নির্মাণ করা হয়েছে এবং খালাশপীরে ২ কিঃমিঃ দূরত্বের মধ্যে ৬টি ইটভাটা তৈরি করা হয়েছে। বড়দরগাহ ইউনিয়েনর কাঞ্চনপুর ও কুমেদপুরের মাঝামাঝি মাত্র ৫শত গজের মধ্যেই ৫টি ভাটা নির্মান করা হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে-এ সকল ইটভাটা একেকটি কমপক্ষে ৩০ থেকে ৪০ একর পর্যন্ত আবাদী জমি দখল করে স্থাপন করা হয়েছে এবং পার্শ্বের শত শত একর জমি থেকে উর্বর মাটি কেটে তৈরি করা হচ্ছে ইট। এতে একদিকে যেমন পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে অন্যদিকে আশপাশের জমি গুলো হারাচ্ছে উর্বরতা শক্তি। ঘন ঘন ইট ভাটার চিমনি থেকে নিগর্ত মনোঅক্সাইড, কার্বন-ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন পরিবেশ দূষিত সহ লোকালয়ে জটিল রোগব্যাধির আশংক্ষা করছেন পরিবেশবীদ ও এলাকাবাসী। পরিবেশ অধিদপ্তরে ও কাষ্টম অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে গড়ে উঠেছে এ সকল ইটভাটা।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ১৯৯২ সালের ইটভাটা নির্মাণ আইন লঙ্ঘন কারীদের দমনের জন্য কঠোর নির্দেশ থাকলেও বর্তমানে প্রশাসনিক ভাবে তা করা হচ্ছে না। ফলে বেড়েই চলেছে ভাটা আর ভাটা। এ অবস্থা চলতে থাকলে একসময় আবাদী জমির চরম সংকটসহ পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দেবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন।
এদিকে গত জানুয়ারীর শেষ সপ্তাহে ঢাকাস্থ পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট রোজিনা আক্তার এর নেতৃত্বে সর্বশেষ এক ক’টি ভাটায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হয় । তাহাকে সহযোগীতা করেন রংপুরের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আফরিন জাহান, পরিবেশ অধিদপ্তর রংপুর এর উপ-পরিচালক মেজ-বাবুল আলম, র্যাব ও ফায়ার সার্ভিস । এর পর আর কোন অভিযান পরিচালিত হয়নি । আর এ অভিযানকে সচেতন মহল লোক দেখানো মনে করছেন ।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিরোদা রানী রায়ের সাথে কথা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন,বিষয়টি নিয়ে আমিও উদ্বিগ্ন । এ বিষয়ে আমি একাই কোন পদক্ষেপে যেতে পারি না, কারন ভাটা সেক্টরের সাথে জেলা প্রসাশন, পরিবেশ অধিদপ্তর, কাস্টমস, শ্রম অধিদপ্তরসহ আরও দু-একটি মন্ত্রনালয়ের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নিতে হলে এসকল দপ্তরের সমন্বয়ে পদক্ষেপে যেতে হয়।