ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর, ২০২৪ ১৫:৫৭ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৩৫ বার
ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বাতিল করে ৭ কলেজ থেকে পৃথক করে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় করাসহ ৩ দাবি জানিয়ে আন্দোলন করবেন সরকারি তিতুমীর কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে কলেজের সামনের ফটকে সড়ক ব্লক করে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবির কথা তুলে ধরেন তিতুমীর ঐক্য মূল কমিটির সদস্য রয়েল ইসলাম রানা।
তিনি বলেন, ২৪’র জুলাই বিপ্লবের ছাত্রজনতার ঐতিহাসিক বিজয়ের অর্জনে মহান আত্মত্যাগ ও শহীদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। জুলাই বিপ্লবের স্বপ্ন ছিল একটি বৈষম্যহীন, সমৃদ্ধ ও দক্ষতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণ করা।
তিনি তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ‘কলেজ’ উল্লেখ না করে বলেন, ‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়’ সাবেক, বর্তমান ও নবীনদের প্রাণের দাবি। একটি বিশ্ববিদ্যালয় শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এটি রাষ্ট্রের অন্যতম জ্ঞান চর্চার কেন্দ্র। যেখানে রাষ্ট্র বিনির্মাণে জ্ঞান উৎপাদন ও চর্চা করা হয়। ঢাকা উত্তর সিটির মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থাকলে তা রাষ্ট্র বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারতো।
রয়েল ইসলাম রানা আরও বলেন, ২০১৭ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সাতটি বছর ঢাবির অধিভুক্ত থাকা অবস্থায় ঢাবি গুণগত মানসম্পন্ন ও দক্ষতাভিত্তিক যে উচ্চশিক্ষা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল এবং আমরা যে মানের উচ্চ শিক্ষার প্রত্যাশা করেছিলাম- তার অধিকাংশই পূরণ হয় নাই। আমরা এটিও উপলব্ধি করেছি, আমরা যে গুণগত মানসম্পন্ন উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন দেখি তা স্বতন্ত্রভাবে তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ব্যতীত অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত থেকে অর্জন করা সম্ভব নয়। তাই, সরকারি তিতুমীর কলেজকে তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রূপান্তরের কোনো বিকল্প নাই।
তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের জন্য ১৯৯৭-২০২৪ প্রায় তিন যুগ ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম চলমান জানিয়ে তিতুমীর ঐক্য মূল কমিটির সদস্য বলেন, ঢাকা উত্তর নগরীতে উচ্চ শিক্ষার মান নিশ্চিতের লক্ষ্যে আজ সরকারি তিতুমীর কলেজকে তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা আবশ্যিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটির নাগরিক জীবন উন্নতীকরণ হতে শুরু করে দেশের শিক্ষা খাতে জিম্মি ব্যবস্থা ভাঙতে, উচ্চ শিক্ষার হার উন্মুক্তের লক্ষ্যে আজ তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আবশ্যকীয়তা দেখা দিয়েছে। কর্তৃপক্ষ তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রতি বছর হাজার হাজার বেকার তৈরির কারাখানা বন্ধ করে বাস্তবসম্মত, যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিতের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি রাষ্ট্রকে উপহার দিতে পারে। তারই প্রেক্ষাপটে ১৯৯৭, ২০০৫, ২০০৮, ২০১১, ২০১৪ এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালে রাষ্ট্রের কাছে বারবার দাবি জানিয়ে আসছে তিতুমীরিয়ানরা।
রানা আরও বলেন, সর্বশেষ ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমরা শুধু তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী হিসেবে নয় বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টাসহ দায়িত্ববান সবার কাছে ১৪ পৃষ্ঠার স্মারকলিপিসহ ফাইল হস্তান্তর করি। বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল জায়গা থেকে কর্তৃপক্ষ ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। তারই ফলশ্রুতিতে ৩ দফা দাবি নিয়ে তিতুমীর কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ৭২ ঘণ্টা সময় বেধে দিয়ে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। এর মধ্যে সরকারি তিতুমীর কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রাষ্ট্র কোনো যোগাযোগ না করেই সাত কলেজ সংস্কারের জন্য নতুন কমিটি ঘোষণা করে। যা তিতুমীরিয়ানদের ব্যথিত করে এবং তিতুমীরিয়ানরা তা সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করে।
কমিটি গঠনের ৭২ ঘণ্টা পার হয়ে যাওয়ার পরও তারা তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের ৩ দফা দাবি বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করায় শিক্ষার্থীর এই কমিটিকে ‘টাইম আউট’ বলে ঘোষণা করে।
তিন দফা দাবি নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক-
তিতুমীর ঐক্যের ব্যানারে বুধবার বেলা ১১টায় কলেজের প্রধান ফটকে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। দুই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করার পর রাস্তা ছেড়ে দেন তারা। এর আগে মিছিল করেন তারা। তারপর ঘোষণা আসে দিন দফার।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত বাতিল করে ৭ কলেজ থেকে তিতুমীর কলেজকে পৃথক করতে হবে; তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপান্তরের লক্ষ্যে কমিশন গঠন করতে হবে; ও তিতুমীরকে একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়নের রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে।
তিতুমীর ঐক্যর ব্যানার থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানান, ৩ দফা আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বাস্তবায়ন না হলে বাধ্য হয়ে আগামী রোববার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা ঐতিহাসিক ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু মহাখালী’ কর্মসূচি পালন করা হবে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা আরও মনে করে, ৭ কলেজ সংস্কার প্রত্যাশী নামে যে বা যারা সরকারি তিতুমীর কলেজের নাম ব্যবহার করছে তারা তাদের একান্ত ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ব্যবহার করছে। এখানে সরকারি তিতুমীর কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের বা ক্যাম্পাসের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সরকারি তিতুমীর কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের এবং তাদের প্রাণের প্রতিষ্ঠানের নাম জড়ানোর জন্য তাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন শিক্ষার্থীরা।