ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

চলন্ত সিঁড়ি চলছে না

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১৩:০৮ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৮ বার


চলন্ত সিঁড়ি চলছে না

ঢাকা: গত কয়েক মাস ধরে চলছে না ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকার তিন ফুটওভার ব্রিজের চলন্ত সিঁড়ি বা এস্কেলেটর। তদারকি, রক্ষণাবেক্ষণ আর সংস্কারের অভাবে এসব সিঁড়ি অচল হয়ে পড়ে আছে।

এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ভারী জিনিসপত্র নিয়ে সড়ক পার হওয়া পথচারী, রোগী ও বয়স্কদের।

 

রোববার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিমানবন্দর রেলস্টেশন সংলগ্ন ফুটওভার ব্রিজ, প্রগতি সরণি (যমুনা ফিউচার পার্কের পাশের) ফুটওভার ব্রিজ ও বনানী ফুটওভার ব্রিজ ঘুরে এমন চিত্রেরই দেখা মেলে। আর এসব ব্রিজে এখন দৌরাত্ম্য হকার, পথশিশু আর ভিক্ষুকদের।

বিমানবন্দর ফুটওভার ব্রিজের পশ্চিম দিকের যে পাশে চলন্ত সিঁড়ি, সেই পাশের গেটে ঝুলছে তালা। চলন্ত সিঁড়িটি বন্ধ। পথচারীরা বিপরীত দিকের সিঁড়িটি ব্যবহার করছেন। আর পূর্বপাশের অংশে দুই দিকই খোলা। চলন্ত সিঁড়ি বন্ধ থাকলেও গেট বন্ধ নয়। পথচারীরা ব্যবহার করতে পারছেন।

পূর্ব পাশের বন্ধ চলন্ত সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে গেলেই চোখে পড়ে ভাঙা অংশ। ধুলাবালি আর ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে। দেখলে স্পষ্ট হয়ে যায়, অনেকদিন পরিষ্কার করা হয় না।

ফুটওভার ব্রিজের উপরের মাঝামাঝি অংশে গেলেই দেখা মেলে পথশিশুদের। এ শিশুরা পথচারীদের কাছে টাকা দাবি করে। টাকা না দিলেই পড়তে হয় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে। আর ভিক্ষুকরাও রয়েছেন। পথচারীরা বলছেন, এ ফুটওভার ব্রিজের দুই দিকের সিঁড়ি সচল থাকলে এবং ঠিকঠাক নজরদারি থাকলে এমন পরিস্থিতি হতো না।

রাস্তা পারাপারে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করা একজনকে জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেন, টাকা দিতে চাইনি বলে আমার পা ও প্যান্ট ধরে টানাটানি করল। কী যে অস্বস্তিকর পরিবেশের মধ্যে পড়লাম। বলে বোঝাতে পারব না।

তার ভাষ্য, ফুটওভার ব্রিজের চলন্ত সিঁড়ি ঠিক থাকলে এটি আরও ব্যবহারযোগ্য হতো। আরও বেশি পথচারী পারাপার করতেন। দৃশ্য কিছুটা ভিন্ন হতে পারত।

তিনি বলেন, এ ছাড়া পথশিশুদের দুই-তিনজনকে জনসমক্ষেই নেশাদ্রব্য ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে। এই পরিবেশের মধ্য দিয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে পথচারী ও বিদেশফেরতদের।  

দুবাই থেকে দেশে ফিরেছেন ফেনীর ছাগলনাইয়ার মো. মহসিন। ফুটওভার ব্রিজ পার হওয়ার পর বাংলানিউজের কাছে তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, দেশে কত উন্নতি হলো। কত কিছু বদলে গেল। কিন্তু এখনো সংস্কার হলো না এই ফুটওভার ব্রিজ। চলন্ত সিঁড়ি না চলায় লাগেজ ও ব্যাগ নিয়ে আসতে ভোগান্তি পোহাতে হলো।  

এয়ারপোর্ট রেলস্টেশনের সামনে অমল ঘোষ নামে এক হকার বলেন, এই ফুটওভার ব্রিজের চলন্ত সিঁড়ি তিন মাসের বেশি সময় ধরেই বন্ধ। ব্রিজ ঠিক করলেই আবার নষ্ট হয়ে যায় খুব দ্রুত। বেশি হলে এক মাস টিকে। পথশিশুরাই ফুট ওভার ব্রিজের জিনিসপত্র ভেঙে ফেলে, নষ্ট করে ফেলে।

তিনি বলেন, শুনছি এখানে ফুটওভার ব্রিজ বেশিদিন থাকবে না। আন্ডারপাসের কাজ শুরু হয়েছে। আন্ডারপাস চালু হলেই বন্ধ করে দেওয়া হবে ফুটওভার ব্রিজ।

প্রগতি সরণিতে যমুনা ফিউচার পার্ক সংলগ্ন ফুটওভার ব্রিজের দুই দিকের চলন্ত সিঁড়িও তিন মাসের বেশি সময় ধরে চলছে না। সেখানে দেখা যায়, পথচারীরা রাস্তা পারাপারে হেঁটেই উঠছেন ফুটওভার ব্রিজে। উপরে রয়েছে ভিক্ষুক, হকার ও পথশিশুদের উপদ্রব। ভোগান্তি নিয়েই সড়ক পার হতে হচ্ছে পথচারীদের।  

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা তানভীর আলম বলেন, অফিসের কাজে প্রায়ই আমাকে এখানে আসতে হয়। সড়ক পারাপারের জন্য আমি ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করে থাকি। বহুদিন ধরেই ব্রিজের চলন্ত সিঁড়ি বন্ধ দেখছি।

তিনি বলেন, এই এলাকায় বেসরকারি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল আছে। ব্রিজ পারাপারে অনেকসময় লাইন লেগে যায়। চলন্ত সিঁড়ি চললে এত ভিড় হতো না। সহজেই পার হওয়া যেত। আর ব্রিজে পথশিশু, হকার ও ভিক্ষুকদের উৎপাত বেশ। তার ভাষ্য, পথশিশু ও ভিক্ষুকরা পথচারীদের প্রায়শই হয়রানি করে থাকে।

বনানী ১১ নম্বর সড়কে আছে চলন্ত সিঁড়ি সংবলিত একটি ফুটওভার ব্রিজ। তবে এ ব্রিজের চলন্ত সিঁড়িও বন্ধ। এতেও আছে হকার, ভিক্ষুক। তবে পথশিশুদের উৎপাত ততটা নেই। ফুটওভার ব্রিজের পশ্চিম পাশের একটি ভবনে দারোয়ানের চাকরি করেন নুরুল আমিন। তিনি বলেন, শেষ কবে ব্রিজের চলন্ত সিঁড়ি চলেছে, মনে করতে পারছি না। দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে এটি বন্ধ রয়েছে।

পথচারী মোহাম্মদ আলী বলেন, বনানী এলাকায় এলে এ ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে সড়ক পার হই। চলন্ত সিঁড়ি বন্ধ থাকায় একটু কষ্ট হচ্ছে। আমার মতো বয়স্কদের শারীরিক পরিস্থিতি সবসময় এক রকম থাকে না। তবুও কষ্ট করে সিঁড়ি ভেঙে ব্রিজ পার হতে হচ্ছে। অনেকদিন ধরে দেখছি চলন্ত সিঁড়ি বন্ধ। যত দ্রুত চলন্ত সিঁড়ি চালু হবে, বয়স্ক ও রোগীদের সহজে সড়ক পারাপারে সুবিধা হবে। আশা করি কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে চলন্ত সিঁড়ি চালু করবে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী নাঈম রায়হান খান বলেন, বনানী ১১ নম্বর সড়কের ফুটওভার ব্রিজের চলন্ত সিঁড়ির বৈদ্যুতিক সংযোগের তার চুরি হয়েছে। এর আগেও একবার তার চুরি হয়েছিল, সে সময় তারের ব্যবস্থা করে চালু করেছিলাম। আশা করি, শিগগিরই চলবে বনানী ফুটওভার ব্রিজের চলন্ত সিঁড়ি।

প্রগতি সরণির ফুটওভার ব্রিজের চলন্ত সিঁড়ির বিষয়ে তিনি বলেন, এ চলন্ত সিঁড়ির ড্রাফট ভেঙে গেছে। এ ছাড়া এস্কেলেটরের (চলন্ত সিঁড়ির) বেল্ট নষ্ট হয়ে গেছে। বিদেশ থেকে আনতে হবে। আমরা টেন্ডার দিয়েছি। ওয়ার্ক অর্ডার রয়েছে। আশা করছি, ডিসেম্বর মাসের মধ্যে প্রগতি সরণির ফুটওভার ব্রিজের চলন্ত সিঁড়ি চালু করতে পারব।

এয়ারপোর্ট বা বিমানবন্দর ফুটওভার ব্রিজের বিষয়ে উত্তর সিটি করপোরেশনের এ প্রকৌশলী বলেন, এয়ারপোর্ট এলাকায় আন্ডারপাস তৈরির কাজ চলছে। এ সড়কের পূর্ব পাশে এমআরটি লাইন-১ এর কাজ চলছে। এয়ারপোর্টের পশ্চিম পাশের অংশে ফুটওভার ব্রিজের চলন্ত সিঁড়ি সংস্কার করে আমরা দ্রুতই চালু করে দেব। ব্রিজের পূর্ব পাশের বিমানবন্দর রেলস্টেশন অংশে যেহেতু এমআরটি লাইন-১ এর কাজ চলছে,এ কারণে এই অংশে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।  

তিনি আরও বলেন, এয়ারপোর্ট এলাকায় আন্ডারপাস চালু হলে, ফুটওভার ব্রিজ বন্ধ করে দেওয়া হবে। যতদিন আন্ডারপাস নির্মাণ হচ্ছে না, ততদিন সাধারণ জনগণ এ ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করতে পারবেন।  

ফুটওভার ব্রিজে পথশিশু-ভিক্ষুকদের বিচরণের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে প্রকৌশলী নাঈম বলেন, বিষয়টি ইঞ্জিনিয়ারিং রিলেটেড নয়। শিশুদের রিহ্যাবের বিষয়ে আমাদের সমাজকল্যাণ বিভাগের সহযোগিতা লাগবে। আমাদের সমাজকল্যাণ বিভাগের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। আমাদের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলব।  


   আরও সংবাদ