ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক দুরবস্থার চিত্র

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫৫১ বার


বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক দুরবস্থার চিত্র

শিক্ষক-কর্মকর্তাদের আট মাসের বেতন বকেয়া। দুই বছরের বেশি সময় ধরে পদোন্নতি, বেতন বৃদ্ধি প্রভিডেন্ট ফান্ড সুবিধা বন্ধ। বেতন-ভাতা, বিল ঋণ বাবদ বিশ্ববিদ্যালয়টির দায়ের পরিমাণ ৩৫ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। সংরক্ষিত তহবিলে কোটি টাকা থাকার কথা থাকলেও সেটিও নেই। আর্থিক দুরবস্থার চিত্র বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের। শুধু আর্থিক নয়; বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী সংকটও প্রকট। কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা যুগোপযোগী বিষয় না থাকায় এক দশকের ব্যবধানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা কমেছে ৭৫-৮০ শতাংশের বেশি। পরতে পরতে অনিয়ম অব্যবস্থাপনার কারণে ডুবতে বসেছে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

শিক্ষক-কর্মকর্তাদের অভিযোগ, অবৈধভাবে আর্থিকসহ নানা সুবিধা নিলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে কোনো উদ্যোগ নেননি দেখভালের দায়িত্বে থাকা বোর্ড অব ট্রাস্টিজ (বিওটি) সদস্যরা। বিওটি চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন সদস্যের অনিয়ম, অবহেলা অব্যবস্থাপনাই বিশ্ববিদ্যালয়কে দুর্দশার দিকে ঠেলে দিয়েছে।

বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিওটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক কামালউদ্দীন আবদুল্লাহ জাফরী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল থেকে মাসে লাখ ৮০ হাজার টাকা করে সম্মানী নেন, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্বে থাকা ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য এর অর্ধেক পরিমাণ বেতনও পান না। যদিও ট্রাস্টি হিসেবে কোনো আর্থিক সুবিধাই নিতে পারেন না বিওটি চেয়ারম্যান। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গাড়ি, গাড়ির চালক, আবাসন একাধিক কর্মচারীসহ নানা সুবিধা নিচ্ছেন কামালউদ্দীন জাফরী।

প্রসঙ্গে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিওটি চেয়ারম্যান কামালউদ্দীন জাফরীর কার্যালয়ে তিনদিন গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। সেলফোনের মাধ্যমে দুবার কথা হলেও তিনি বিষয়ে কথা বলতে সম্মত হননি। তবে বিওটি চেয়ারম্যানের আর্থিক সুবিধা নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য কোষাধ্যক্ষ কাজী আখতার হোসেন। তিনি বলেন, বিওটি চেয়ারম্যান মাসে লাখ টাকার মতো সম্মানী নেন। তবে আর্থিক সংকটের কারণে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মতো বিওটি চেয়ারম্যানের সম্মানীও বকেয়া রয়েছে।

বিওটির মেম্বার সেক্রেটারি হিসেবে রয়েছেন কামালউদ্দীন জাফরীর ভাই সৈয়দ শহীদুল বারী। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পরিচালকের পদটিও তার দখলে। অভিযোগ রয়েছে, নিয়মিত অফিস না করেও মাসে লাখ টাকার বেশি আর্থিক সুবিধা নেন শহীদুল বারী। এমনকি মাসের পর মাস বিদেশে অবস্থান করেও নিয়মিত বেতন নিয়েছেন তিনি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এসি খুলে নিজের বাসায় নিয়ে লাগিয়েছেন শহীদুল বারীশিক্ষক-কর্মকর্তাদের মুখে মুখে এমন একটি কথাও শোনা যায়।

একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তহবিল থেকে নানা সুবিধা নিলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে শহীদুল বারী কোনো উদ্যোগ বা পরিকল্পনা নেননি। ট্রাস্টের মেম্বার সেক্রেটারি হিসেবে তার উচিত ছিল বিওটি চেয়ারম্যানকে ভালো পরামর্শ দেয়া। তিনি এতে ব্যর্থ হয়েছেন। উল্টো শিক্ষক-কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে ভালো কোনো প্রস্তাব এলে তাও থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছেন। আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আজকের সংকট সৃষ্টির মূল কারণ হলো দক্ষ যোগ্য প্রশাসক না থাকা।

এসব অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে শহীদুল বারী বলেন, অনৈতিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো ধরনের আর্থিক সুবিধা নিইনি। আর প্রতিষ্ঠানের জন্য কী অবদান রেখেছি, সেটি বিওটি চেয়ারম্যানই ভালো বলতে পারবেন। বিওটি চেয়ারম্যানের ছেলে সৈয়দ আম্মার বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট (সুপারভাইজার) হিসেবে কাজ করছেন। ঢাকার বাইরে অবস্থান করেই বছরের পর বছর বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল থেকে নিয়মিত বেতন নিচ্ছেন তিনি। এছাড়া জনসংযোগ কর্মকর্তাসহ বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন একাডেমিক প্রশাসনিক পদে বিওটি চেয়ারম্যানের আত্মীয়স্বজন কর্মরত রয়েছেন।

কষ্টে রয়েছেন শিক্ষক-কর্মকর্তারা: মাসের পর মাস বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না শিক্ষক-কর্মকর্তারা। পরীক্ষা গ্রহণ, পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নসহ বিভিন্ন কাজের বিলও দেয়া হচ্ছে না। সব মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো ধরনের আর্থিক সুবিধাই পাচ্ছেন না তারা। উল্টো শিক্ষক-কর্মকর্তাদের প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে পৌনে কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কয়েক মাস আগে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের প্রভিডেন্ট সুবিধাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। দুই বছরের বেশি সময় ধরে পদোন্নতি বেতন বৃদ্ধিও বন্ধ রাখা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ৬২ জন শিক্ষক কর্মরত। চলমান সংকট বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আর্থিক সংকটের বিষয়টিকে করোনার সঙ্গে মেলানোর চেষ্টা করছে। আসলে বিষয়টি তেমন নয়। করোনার অনেক আগে থেকেই সংকট চলছে। প্রভিডেন্ট সুবিধা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বন্ধ করার আগে দেড় বছর আমাদের বেতন থেকে প্রভিডেন্ট ফান্ডের জন্য টাকা কাটা হলেও সেটি ফান্ডে জমা দেয়া হয়নি। এটি বড় ধরনের প্রতারণা। এছাড়া পদোন্নতি বেতন বৃদ্ধি বন্ধ থাকায় আমরা কোনো ধরনের উৎসাহ পাচ্ছি না।


   আরও সংবাদ