ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ১৩০২ বার
শিক্ষা :- কোভিড-১৯ এর আগ্রাসনে সমগ্র বিশ্ব টালমাটাল। বিশ্ব অর্থনীতি, সামাজিক স্থিতিশীলতার পাশাপাশি শিক্ষাকার্যক্রমও চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বৈশ্বিক মহামারী করোনাকে পরাস্ত করার জন্য সমগ্র বিশ্ব আজ একাট্টা হলেও ক্ষণে ক্ষণে এর রূপ পরিবর্তনের কারণে বিশ্ব আজ দিশেহারা অবস্থায়।
এমনি এক পরিস্থিতিতে এই মহামারীকে মোকাবেলার জন্য আমেরিকা, চীন, রাশিয়াসহ কয়েকটি দেশ ভ্যাকসিন আবিষ্কার করে বিশ্ববাসীকে কিছুটা হলেও স্বস্তি এনে দিয়েছে। কিন্তু ইতিমধ্যেই এই রোগে আক্রান্ত হয়ে লক্ষ লক্ষ লোকের জীবনহানি ঘটেছে এবং এখনও তা অব্যাহত আছে। মানবকুল ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে পারলেও চাহিদার তুলনায় তা অত্যন্ত অপ্রতুল। ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ভ্যাকসিনের জন্য উৎপাদনকারী দেশগুলোর কাছে ধর্ণা দিচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকারও বিভিন্ন দেশের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ভ্যাকসিন আমদানির জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দেশের জনগণকে রক্ষা করার জন্য। সেই প্রচেষ্টায় কিছুটা সফল হলেও বিশাল জনগোষ্ঠীকে ভ্যাকসিনেশনের আওতায় আনার মত ভ্যাকসিন এখনও পাওয়া যায়নি। ফলে যা পেয়েছে এবং যা পাবে তা দিয়ে চিকিৎসক, নার্স এবং রেমিটেন্স যোদ্ধাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন প্রদান অব্যাহত রেখেছে।
আমরা জানি যে, শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষাবিহীন প্রজন্ম জাতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে নিঃসন্দেহে। একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশের বর্তমান লোকসংখ্যা ১৬ কোটি ৯১ লক্ষ ১ হাজার, মতান্তরে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে। উক্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪ (চার) কোটি হচ্ছে শিক্ষার্থী। বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে বাংলাদেশে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে আজ অবধি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। ভার্চুয়াল বা ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষাকার্যক্রম চালু থাকলেও বিভিন্ন কারণে তা ফলপ্রসূ হচ্ছে না। ছাত্রছাত্রীরা শ্রেণিকক্ষে শারিরীক উপস্থিতির মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণে অভ্যস্ত বিধায় ভার্চুয়াল পদ্ধতির শিক্ষাকার্যক্রমে তাদের অমনোযোগী মানসিকতা লক্ষ্য করা যায়।
শুধু তাই নয় দীর্ঘদিন গৃহবন্দী অবস্থায় থাকার কারণে তাদের মানসিক ও শারিরীক বিকাশ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থীকে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে রুঢ় আচরণ করতেও দেখা যাচ্ছে। এখানে আরো উদ্বেগের বিষয় হল দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেক অভিজ্ঞ শিক্ষক-শিক্ষিকা ভিন্ন পেশায় চলে যাচ্ছে। তারা হয়ত শিক্ষকতা পেশায় ফিরে নাও আসতে পারে। ফলে শিক্ষাকার্যক্রম অভিজ্ঞ শিক্ষক শূন্যতায় পড়তে পারে। করোনা মহামারীর আগ্রাসন আরো কত মাস বা কত বছর প্রলম্বিত হতে পারে তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। এমনকি বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাও এ ব্যাপারে কোন আভাস দিতে পারেনি।
সরকার ইতিমধ্যে ডাক্তার, নার্সসহ রেমিটেন্স যোদ্ধাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা বা ভ্যাকসিন প্রদানের কার্যক্রম শুরু করেছে, যা অবশ্যই ইতিবাচক। কিন্তু একইসাথে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনকে অটুট রাখা, তথা শিক্ষার্থীদের শারিরীক ও মানসিক বিকাশকে নিষ্কন্টক করার স্বার্থে এবং সর্বোপরি জাতির একটি বৃহৎ অংশকে (শিক্ষার্থীদেরকে) অন্ধকারাচ্ছন্ন ভবিষ্যৎ থেকে আলোর পথের দিশারী হিসাবে গড়ে তুলতে টিকার বা ভ্যাকসিনের আওতায় আনা অত্যন্ত জরুরি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর যোগ্য ও মেধাসম্পন্ন নেতৃত্বে বাংলাদেশকে অনেক কিছুই দিয়েছেন, যা জাতি কল্পনাও করতে পারেনি। এই স্বল্পপরিসরে তাঁর সেই অবদান ব্যাখ্যা করাও সম্ভব নয়। বিপুল অর্জনে যাঁর কৃতিত্ব রয়েছে তিনি অবশ্যই এই জাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে (শিক্ষার্থীদেরকে) রক্ষায় সুচিন্তিত পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
সুতরাং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এবং দ্রুততম সময়ে শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় এনে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসাগুলো খুলে দিলে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক শিক্ষিকাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের জীবনমান সুরক্ষিত হবে। একইসাথে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তার সাগরে ভাসমান অভিভাবকগণও স্বস্তিবোধ করবেন। এদিকে ইউনেস্কো-ইউনিসেফও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘প্রজন্মগত বিপর্যয় এড়াতে নিরাপদে স্কুলগুলো খুলে দেয়াকে যেন অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
আমেরিকা, চীনসহ বাংলাদেশের চাইতে বহুগুণে বেশি করোনার করাল গ্রাসে আক্রান্ত দেশগুলো ইতিমধ্যেই পূর্ণদ্যোমে শিক্ষাকার্যক্রম চালু করেছে। কেননা প্রজন্মকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে না পারলে জাতির ভবিষ্যৎ যে অন্ধকার তা তারা অনুধাবন করতে পেরেছে। যে কারণে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও তারা শিক্ষাকার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের বর্তমান জনবান্ধব ও শিক্ষাবান্ধব সরকার মেধার সৃজনে শিক্ষাক্ষেত্রে গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। জাতিকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করতে হলে সুশিক্ষিত ও মেধাসম্পন্ন প্রজন্ম সৃষ্টি অপরিহার্য।