বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ১০৩৫ বার
আফগানিস্তানে তালেবানের পুনরুত্থানের পর থেকে ভারতীয় গণমাধ্যমে যে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে তাতে সজোরে আঘাত করেছিলেন কলকাতার যুবক তমাল ভট্টাচার্য।
কাবুলের একটি আন্তর্জাতিক স্কুলে বিজ্ঞান পড়াতেন তমাল। চলমান অস্থির পরিস্থিতিতে ভারতে ফেরেন এ শিক্ষক।
দেশে ফিরে মিডিয়ার সামনে তালেবানরা ভারতীয়দের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেছে, ভালো খেতে দিয়েছে, নিরাপত্তা দিয়েছে সেই কথা অকপটে স্বীকার করেন তিনি। তালেবানের ভূয়সী প্রশংসা শোনা গেছে তার মুখে।
আর এতেই বিপাকে পড়েন তিনি। ভারতীয়দের তীব্র সমালোচনায় পড়েন। তার বিরুদ্ধে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গ্রিভ্যান্স সেলে লিখিত অভিযোগ করেন রাজ চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি। এমনকি তমালকে ভারতে পাঠানো তালেবানদের এজেন্ট আখ্যা দিয়ে তার ওপর কড়া নজরদারির অনুরোধ জানানো হয়।
এরইমধ্যে নেটদুনিয়ায় ভাইরাল হয়ে পড়ে তালেবান যোদ্ধাদের সঙ্গে তোলা তমালের ছবি। সে ছবি শেয়ার করে অনেকেই প্রশ্ন ছুড়েন, তালেবান এতই যদি ভালো হয়, তাহলে তমাল দেশে ফেরার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে কাতর আবেদন জানিয়েছিলেন কেন?
তমাল ডাহা মিথ্যা বলছেন বলে দাবি করেন ভারতের সেক্যুলার মিশনের সম্পাদক ওসমান মল্লিক।
এক কথায় আফগানিস্তানের নিরাপত্তাহীন পরিবেশ ছেড়ে নিজ দেশে ফিরে উল্টো বিপাকেই পড়লেন কলকাতার তমাল ভট্টাচার্য।
এদিকে তমাল জানিয়েছেন, ভারতে এমন পরিস্থিতির স্বীকার হবেন তা কখনো ভাবেননি।
সম্প্রতি বিবিসি বাংলার কাছে তালেবান সম্পর্কে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন তমাল। তিনি বিবিসিকে বলেছেন, আমার খুব খারাপ লাগল যে, ভারতে ফিরে এমন সংবর্ধনা পেলাম।
তিনি বিবিসি বাংলাকে জানান, তালেবান কাবুল দখল নেওয়ার পরে ৭ দিন আতঙ্কের মধ্যে কাটিয়েছেন।
তমাল বলেন, ‘আমি একজন শিক্ষক হিসেবে কখনোই তালেবানদের সমর্থন দেব না। কোনো মৌলবাদী বা জঙ্গি সংগঠনকে সায় দেব না। আমি ভারতে ফিরে সেটাই বলেছি, সেখানে আমাদের সঙ্গে যেটা হয়েছে। আমাদের লোকদের সঙ্গে তালেবানরা যে ব্যবহার করেছে তার সত্যনিষ্ঠ চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।’
বিবিসিকে কলকাতার এই যুবক বলেন, ‘তালেবান যখন কাবুলে প্রবেশ করল ১৫ আগস্ট সকালে তখন আমাদের ভয়ে বুক শুকিয়ে যায়। আমাদের মধ্যে যে আতঙ্ক ভর করেছিল, আমরা হয়তো কিডন্যাপ হব নয়ত মারা পড়ব। কয়েকঘণ্টার সেই আতঙ্কটা ছিল ভয়ঙ্কর, আমি বলে বোঝাতে পারব না। আমরা সেদিন স্কুল থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে এসে আমাদের অ্যাপার্টমেন্টে নিজেদের তালাবন্দি করে রেখেছিলাম। সেখানে আমার এক ভারতীয় সহকর্মী ত্রিপুরার বাসিন্দ রাম সংকর দেবসহ আমাদের দুজনকে তারা নিরাপত্তা রক্ষীসহ গাড়ি দিয়ে নিরাপদ স্থানে নিয়ে রাখে। সেখানে আমরা তালেবান যোদ্ধাদের দেখি। তালেবানরা আমাদের আশ্বস্ত করল, এখন আমরা সরকারে এসেছি, আপনাদের নিরাপত্তা দানের দায়িত্ব আমাদের। আপনারা ভয় পাবেন না। তখন তাদেরকে বিশ্বাস করা ছাড়া আমাদের হাতে কোনো অপশন ছিল না।’
তমাল বিবিসিকে আরো বলেন, ‘১৯ তারিখ সকালে তালেবানরা এসে আমাদের জানালো, বিমানবন্দরে যেতে। যে কোনো সময় আমাদের বিমানে উঠতে হতে পারে। তার আগের রাতে তারা আমাদের নির্দেশনা দিয়ে রেখেছিল, কী করতে হবে, সঙ্গে কি কি নিতে হবে, অল্প মালপত্র নিতে হবে, মোবাইলে চার্জ রাখতে হবে এসব। আমরা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে মোট চারজন কাবুল বিমানবন্দরের দিকে যাই। কিন্তু ওখানে হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে আটকে যাই। আমাদের একজন ফিরে যান। আমরা তিনজন কোনো মতে বিমানবন্দরের নর্থগেটে প্রবেশ করি। আমি যেটা দেখেছি, তালেবানরা লাইনগুলো ঠিক করছিল আর ডিভাইডারের ওপর আফগান সৈনিক পোশাকে কয়েকজন আকাশে ওয়ার্নিং শট ফায়ার করছিল, যাতে ভিড় কমে। সেখান থেকে গন্তব্যে পৌঁছুতে আমাদের তালেবান কমান্ডারদের সহায়তা নিতে হয়েছে। কারণ রাস্তায় কোনো গাড়ি নেই। আমরা খালিজ ওয়েডিং হলে গিয়ে ২০০ জনের মতো ভারতীয় দেখলাম। এরপর সেদিন তালেবানরা আমাদের বিমানবন্দরের পেছনে একটি শিল্পএলাকায় নিয়ে বসাল, খুব সুন্দর জায়গা। মাঝপথে তালেবানরা আমাদের বলল, আপনারা ভয় পাবেন না। আপনাদের পাসপোর্ট চেকিং হবে। রেজিস্ট্রিটা নেওয়া হবে কজন আছেন। আপনারা আমাদের দেশের উন্নতির জন্য কাজ করতে এসেছেন, আমরা চাই আপনারা কাজটা চালিয়ে যান।’
তমাল বলেন, ‘সেখানে ডাইনিংরুমে আমাদের লাঞ্চ করাল তালেবানরা। সেখানে আমরা ফ্রেস হলাম। এরপর আমাদের বাসে এসকর্ট করে বিমানবন্দরে ছেড়ে দিল তালেবানরা। তারপর সেইদিন কিছু না হওয়ায় আমরা ফিরলাম খালিজ ওয়েডিং হলে। সেখানে ফিরেই জানতে পারলাম আজ আমাদের ইভাকুয়েশন কনফার্ম। দিনটা ২১ তারিখ ছিল। বিমানবন্দরে তালেবান কমান্ডাররা আমাদের পাসপোর্ট দেখে ছেড়ে দিল আর ভেতরে ছিল ইউএস ট্রুপস। ভেতরে ঢুকার পর আমরা ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্সের লোকগুলো দেখলাম। দেখে খুব শান্তি লাগল। বুঝলাম আমরা বাড়ি ফিরছি।’