বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৫:০৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ১৫৯৮ বার
গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) চার শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে। সর্বশেষ এ তালিকায় বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক এক উপাচার্যের নাম যুক্ত হয়েছে। কঠিন শাস্তি না হওয়ায় ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, বেশি নম্বর দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের সাবেক সভাপতি সহকারী অধ্যাপক মো. আক্কাছ আলীর বিরুদ্ধে দুই ছাত্রী যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করেন। অভিযোগ রয়েছে, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণে সেসময় মো. আক্কাছ আলীর শাস্তির বদলে পুরস্কৃত করা হয়। তাকে ৪ বছরের জন্য অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে ঘরে বসে বেতন নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। পরে উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহানের সময়ে মো. আক্কাছ আলীর বিষয়ে পুনরায় তদন্ত হয়। ঐ একই বছরের ১৩ নভেম্বর সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও তৎকালীন সহকারী প্রক্টর মো. হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের নেপালি এক ছাত্রী যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন। এখন পর্যন্ত এ দুটি বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এদিকে, এ বছরের ২৩ মে স্থাপত্য বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক শান্তনু বিশ্বাস লিংকনের বিরুদ্ধে একই বিভাগের এক ছাত্রী যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন। বিষয়টি তদন্তের মুখে ঐ শিক্ষক চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে, তিনি চাকরি ছেড়ে চলে যাওয়ার কারণে আমরা সেভাবে ব্যবস্থা নিতে পারিনি। তবে তার প্রাপ্ত বেতন-ভাতা আটকে রাখা হয়েছে। সর্বশেষ গত ১৫ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) ও বর্তমানে বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহানের বিরুদ্ধে গৃহকর্মীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। তবে ঘটনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ঘটেনি এবং অভিযোগকারী এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ নয় বলে ঐ গৃহকর্মীর অভিযোগ গ্রহণ করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। একদল লোক আমার মর্যাদা ক্ষুন্ন করতে এমনটা করছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এই চার শিক্ষক ছাড়াও আরও কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে। সে ঘটনাগুলো ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। সবগুলো ঘটনার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
বারবার শিক্ষকদের যৌন কেলেঙ্কারির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মনে করেন, একজন শিক্ষক সমাজের আদর্শ, শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণার কেন্দ্রস্থল। তাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ ওঠা ন্যাক্কারজনক ও ঘৃণ্য। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে হয়তো একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতো না। সেই সঙ্গে এ ধরনের কাজ করার সাহস কেউ পেত না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ সেলের প্রধান ও আইন বিভাগের শিক্ষক মানসুরা খানম বলেন, ‘আমরা কোনো অভিযোগ পেলে তার সত্যতা যাচাই করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবহিত করি। বিশ্ববিদ্যালয় সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও শৃঙ্খলা বোর্ডের সদস্য ড. রাজিউর রহমান বলেন, ‘কয়েকটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত আছে। বিধি অনুযায়ী দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’