ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:২৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৭৩৫ বার
শিক্ষার্থীদের করোনাকালীন সকল প্রকার বেতন ফি মওকুফ করার দাবিতে স্মারকলিপি
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ঢাকা নগর শাখার পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের করোনাকালীন সকল প্রকার বেতন ফি মওকুফ করার দাবিতে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি পেশের কর্মসূচি পালন করা হয়।
আজ ২৯ সেপ্টেম্বর উক্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের নগর কমিটির সভাপতি রাফিকুজ্জামান ফরিদ। সাংগঠনিক সম্পাদক সায়মা আফরোজের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন স্কুল শিক্ষক নাজনীন আক্তার শারমিন, অর্থ সম্পাদক শাহিনুর সুমি, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সজীব চৌহান ও প্রমুখ।
উক্ত সমাবেশে বক্তারা বলেন, করোনা মহামারীর কারণে গত দেড় বছর সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিলো। এই সময়ে এক দিকে যেমন শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হয়েছে অন্যদিকে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার একটা ভঙ্গুর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আর অপরদিকে বেড়েছে বাল্য বিবাহের সংখ্যা, ১২ সেপ্টেম্বর উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হলে তার দুই দিন পরের পত্রিকার একটা সংবাদ খুব আলোচনায় আসে, কুড়িগ্রামের একটা স্কুলের নবম শ্রেণীতে ৯ জন ছাত্রীর মধ্যে মাত্র এক জন উপস্থিত হয় শ্রেণী কক্ষে। কারণ বাকি ৮ জনের এই করোনাকালীন সময়েই বিয়ে হয়ে গেছে। এইটা মাত্র একটা স্কুলের একটা শ্রেণীর অবস্থা, খোঁজ নিলে গ্রাম শহরের সকল স্কুলেই একই চিত্র দেখা যাবে। ব্র্যাকের গবেষকরা বলেছেন প্রায় ৬০ লক্ষ শিক্ষার্থী মাধ্যমিকের গন্ডি পেরোতে পারবে না এই মহামারীর পরে (তথ্য: বাংলাদেশ তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো)। বলা বাহুল্য শিক্ষাখাতে আমরা কি ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।
বক্তারা আরো বলেন, এই সময়ে সরকারের একটা বিশেষ বরাদ্দ দেয়া উচিৎ ছিলো শিক্ষা খাতে, একদিকে সরকার যেভাবে তার দায়িত্ব অস্বীকার করছে অন্যদিকে সকল বোঝা এসে পড়ছে শিক্ষার্থীদের পরিবারের উপরে এবং সরকারের কোন সহায়তা না থাকায় বন্ধ হয়ে গেছে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তাহলে এই যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো বন্ধ হয়ে গেলো সেই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ঝরে পড়া শিক্ষার্থী এবং জীবিকা হারানো শিক্ষকদের দায় সরকার নিচ্ছে না। আরেকদিকে প্রতিটি মানুষ অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক মানুষ তার কাজ হারিয়েছে, প্রায় ৬০% মানুষ জীবন কাটাচ্ছে ঋণ করে। ঝরে পড়ার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে প্রায় ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থী গৃহস্থালির কাজে যুক্ত হওয়া ও ২২% শিক্ষার্থীর পরিবার ছিল খাদ্য সংকট (সূত্র: ব্রাক)। অনেক ছোট ছোট শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে, যার ফলে প্রচুর মানুষ তাদের কাজ হারাচ্ছে। এমন অবস্থায় মানুষের জীবন যাপন করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে অনেক শিক্ষার্থী কাজের সাথে যুক্ত হয়ে গেছে, বাবা মা পরিবার চালাতে পারছে না তারা ছেলে মেয়েদের বিভিন্ন কাজে পাঠিয়ে দিচ্ছে। মানুষের আয় যেভাবে কমছে তাদের পক্ষে ঘরের খরচ চালানোই সম্ভবপর হচ্ছে না, তাহলে তারা ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার খরচ কিভাবে চালাবে। এই করোনাকালে প্রতিটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের একটা মাসেরও বেতন ফি মওকুফ করেনি। সকল শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ তার পরও সকল প্রকার ফি শিক্ষার্থীদের কাছে আদায় করা হয়েছে। এবং যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন দেড় বছরের বেতন এক সাথে দেয়ার কথা বলছে সেখানকার শিক্ষার্থীদের পরিবারে অভাব অনটন লেগে আছে তাহলে তারা এই সময়ে কিভাবে বেতনের এতগুলো টাকা পরিশোধ করবে। এখন যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসন এই বেতন ফি মওকুফ না করে তাহলে এখনও যতটুকু শিক্ষার্থীরা অবশিষ্ট আছে তাদেরও ঝরে পড়তে খুব বেশি বিলম্ব হবে না।
আমরা করোনার শুরু থেকেই এই দাবি জানিয়ে আসছি যে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন রক্ষা করার জন্য বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে করোনাকালীন সকল প্রকার বেতন ফি মওকুফ করতে হবে। কিন্তু আপনারা জানেন আমাদের সরকার শিক্ষাবান্ধব কথার ধুয়া তুললেও তারা আসলে ব্যবসাবান্ধব। তাইতো শুরু থেকে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন নামে প্রণোদনা দিলেও শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারের বরাদ্দ ছিল শূন্য। আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধে বিশেষ প্রণোদনা না দিয়ে উল্টো স্কুল-কলেজগুলোতে করোনাকালীন সময়ের ফি নেয়া হচ্ছে, আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।
আমাদের দাবি:
১. করোনাকালীন সময়ের সকল প্রকার বেতন-ফি মওকুফ করতে হবে।
২. করোনাকালে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে রাষ্ট্রীয় প্রণোদনা ঘোষণা করতে হবে।