স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ নভেম্বর, ২০২১ ১৩:৪৭ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৭৬৩ বার
আগামী ৩০ নভেম্বরের পর থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ক্যাবল নেটওয়ার্কিং সিস্টেম কেউ অ্যানালগভাবে চালাতে পারবে না, সবাইকে ডিজিটাল বক্সে চালাতে সময় বেঁধে দিয়েছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। সরকারের এমন কঠোর অবস্থানে চাপের মুখে রয়েছেন ক্যাবল অপারেটর ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, সরকারি নির্দেশনা মেনে গত ১ অক্টোবর থেকে সব বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ রাখেন বাংলাদেশের ক্যাবল অপারেটররা। পরে গত ৫ অক্টোবর সব চ্যানেল বন্ধ না রেখে বিজ্ঞাপনমুক্ত (ক্লিন ফিড) বিদেশি টিভি চ্যানেল বা অনুষ্ঠান সম্প্রচারের নির্দেশ দেয় তথ্য মন্ত্রণালয়। ডিডব্লিউ, এনএইচকে ওয়ার্ল্ড, বিবিসি ওয়ার্ল্ড, ভয়েস অব আমেরিকা, আল জাজিরা, সৌদি কোরআন, সৌদি অ্যারাবিয়া, সিজিটিএন, রাশিয়া টুডে, ফ্রান্স টুয়েন্টিফোর, কেবিএস ওয়ার্ল্ড, সিএনএন, লোটাস ম্যাকাও, ট্রাভেলএক্সপি এইচডি, সিনেমা অ্যাকশন, সিনেমাসি কমেডি, আরিরাং, টিভিফাইভ মন্ডে, নাইনএক্সএম চ্যানেলগুলো ক্লিন ফিড বাস্তবায়ন করায় এসব চ্যানেল চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়।
আইন অনুযায়ী যাদের মাধ্যমে দর্শক বিদেশি চ্যানেল দেখছেন, তারাই ওই বিদেশি চ্যানেলগুলো বিজ্ঞাপন ছাড়া সম্প্রচার করবে। ক্লিন ফিড হচ্ছে বিদেশি চ্যানেলের অনুষ্ঠানের মধ্যে কোনো ধরনের বিজ্ঞাপন দেখানো যাবে না। কিন্তু বাংলাদেশে সম্প্রচার হওয়া বিদেশি চ্যানেলগুলো সেটি মানছিল না। অনুষ্ঠানের মধ্যে তারা বিজ্ঞাপন প্রচার করে আসছিল। ভারত-পাকিস্তানসহ পার্শ্ববর্তী দেশেও ক্লিন ফিড বা বিজ্ঞাপন ছাড়া বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচার হয়। তবে ১ অক্টোবরের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশে এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছিল না।
ক্যাবল অপারেটররা জানিয়েছেন, ক্লিন ফিড বাস্তবায়নের পর অন্যান্য দেশের চ্যানেলের মতো ভারতীয় প্রায় সব চ্যানেল বন্ধ ছিল। জি বাংলা, স্টার জলসা, কালার বাংলা, জলসা মুভি, জিটিভির মতো চ্যানেলগুলোর সিরিয়ালের জনপ্রিয়তা বাংলাদেশে অনেক বেশি। ফলে এসব চ্যানেল বন্ধ থাকায় বেশি চাপে পড়েন ক্যাবল অপারেটররা। সম্প্রতি এসব চ্যানেলের ক্লিন ফিড সম্প্রচার শুরু হয়েছে। ক্লিন ফিডে চ্যানেল চালানো সম্ভব নয়—অপারেটরদের এমন বক্তব্যের পরও কীভাবে সেটি সম্ভব হলো সে বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেছে জাগো নিউজ।
ফিরোজ ফরাজি নামের এক ক্যাবল অপারেটর জাগো নিউজকে বলেন, সরাসরি ক্লিন ফিড আমরা এখনো পাইনি। তবে মূলত জি বাংলা ও স্টার জলসার মতো কয়েকটি জনপ্রিয় চ্যানেল কেউ কেউ চালাচ্ছেন। সবাই সেটি চালাতে পারছেন না, কারণ এটি মূলত ভিন্নভাবে সম্প্রচার করা হচ্ছে। এসব চ্যানেলের অনুষ্ঠানের মধ্যে বিজ্ঞাপন চলার সময় আমরা ওপরে একটি ব্যানার ব্যবহার করছি, এতে সেই বিজ্ঞাপনটি দেখা যাচ্ছে না। তবে এটি করা খুবই কঠিন। কারণ এজন্য এসব চ্যানেল মেইনটেইনের জন্য আলাদা লোক প্রয়োজন হচ্ছে। সবসময় সেটি সম্ভবও হয় না। কিন্তু দর্শকদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে এটি করা হচ্ছে। এতে সরকারের সিদ্ধান্তের বাস্তবায়নও হচ্ছে, আবার দর্শকরাও চ্যানেলগুলো দেখতে পাচ্ছেন।
ক্লিন ফিড বাস্তবায়নের বিষয়ে অ্যাটকোর সদস্য ও ডিবিসি নিউজের চেয়ারম্যান ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ক্যাবল অপারেটর নীতিমালায় ক্লিন ফিড দিয়েই কিন্তু বিদেশি চ্যানেল চালানোর কথা। সেভাবে না চালিয়ে তারা এতদিন এভাবেই চালিয়েছেন। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার তাদের বাস্তবায়নের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। সেই সময়ের মধ্যে তারা সেটি করেননি। সরকার এখন আইন বাস্তবায়নের জন্য একটা চূড়ান্ত পক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু তারা (ক্যাবল অপারেটর) বরং আইন ভঙ্গ করছেন। তারা আইনও মানছেন না। সরকার তার আইন বাস্তবায়নের জন্য যে পদক্ষেপ নিয়েছে সে বিষয়ে তারা কঠোর থাকবেন বলে আশা করি। অন্তত আইন ভঙ্গ করে বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যাবে।
এদিকে আগামী ৩০ নভেম্বরের পর থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ক্যাবল নেটওয়ার্কিং সিস্টেম কেউ অ্যানালগভাবে চালাতে পারবে না। সবাইকে ডিজিটাল বক্সে চালাতে সময় বেঁধে দিয়েছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়।