বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর, ২০২১ ২৩:৫৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫২৬ বার
করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন স্কুল প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার দেড় বছর পর দেড় ঘণ্টা করে এসএসসি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে শুরু হলো কোন পাবলিক পরীক্ষা। সিলেবাস সীমিত, বিষয় সীমিত আবার সময়ও বেধে দেয়া হয়েছে মাত্র দেড় ঘণ্টা। অনেকের মনে প্রশ্ন- দেড় ঘণ্টায় শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাই হবে কতটুকু? তবে এর মাঝেই পরীক্ষাতে ফিরে খুশি শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা।
রোববার (১৪ নভেম্বর) দীর্ঘ অপেক্ষার পর শুরু হয়েছে এসএসসি/ সমমানের পরীক্ষা। করোনার অতিমারির ভেতরও গত বছরের তুলনায় এ বছর বেড়েছে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা। বেড়েছে কেন্দ্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। গত বছরের পরীক্ষায় যে সংখ্যা ছিলো ২০ লাখ ৪৭ হাজার ৭৭৯ জন, এবার তা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ২২ লাখ ২৭ হাজার ১১৩ জনে। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এই হার বৃদ্ধি পেয়েছে ৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
করোনায় বহু শিক্ষার্থী ঝড়ে গেলেও গত বছরের হিসাব পর্যালোচনায় মাধ্যমিকে বেড়েছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। করোনাতেও টিকে আছে তারা। তবে ভিন্নতা এসেছে এবারের এসএসসি/ সমমানের পরীক্ষায়। সময়ের পরিবর্তন, পরীক্ষার সময় নির্ধারণ, সিলেবাস সংক্ষিপ্ততাসহ নানাবিধ পরিবর্তন।
রাজধানী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে ‘পরীক্ষা নিয়ে’ মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে।
অভিভাবকদের অনেকেই বলছেন, করোনার অতিমারির কারণে ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ ছিলো, সেখানে পরীক্ষা হলো এটাও অনেক কিছু। তাছাড়া করোনার সময় বাচ্চারা লেখা-পড়া ঠিকমত করতে পারেনি। সেদিক বিবেচনায় সিলেবাস সংক্ষিপ্ততায়ও শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন তারা।
শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের দাবি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস হলেও অন্তত এবার অটোপাসের যে তকমা সেটা গায়ে লাগবে না। কেউ আমাদের আর অটোপাস বলে ডাকবে না বলেও জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
অন্যদিকে অভিভাবকদের অন্য একটি অংশ জানিয়েছেন হতাশার বাণী। তারা বলছেন, গণিত এবং ইংরেজি ছাড়া বর্তমানে কিছুই চলে না। সেখানে গণিত এবং ইংরেজির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাদ দিয়ে ঐচ্ছিক বিষয়ে পরীক্ষা হওয়াটা একটু অন্যরকম। মন্দের ভালো হলেও সরকার আগে থেকে স্কুল-কলেজ স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সব বিষয় পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করতে পারত।
তারা বলছেন, এমনিতেই কিন্তু করোনাকালীন বাচ্চারা তেমন বই ধরেনি বললেই চলে, তার উপর পরীক্ষায় যখন বিষয় নির্ধারণ করে দিয়েছে সেক্ষেত্রে সে বিষয়গুলোই পড়েছে। সুতরাং পরীক্ষা যেহেতু হয়েছে পুরো সময় ধরে এবং সব বিষয়ে সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করে পরীক্ষা হলেই ভালো হতো। তাতে করে অন্তত সব বিষয়ে শিক্ষার্থীদের ধারণা থাকতো।
পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনে এসে শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে মেধা যাচাই করা হয়। লম্বা একটা পরীক্ষা নিলেই যে মেধা যাচাই হয়ে যায় ব্যাপারটা এমনটি নয়। আমাদের শিক্ষার্থীরা এর আগে বিভিন্ন অ্যাসাইনমেন্ট করেছে, তাই এই প্রতিকূলতার মাঝে এটা শুধু একটা মূল্যায়ন। এছাড়া লম্বা পরীক্ষার মধ্যেই কিন্তু মেধা যাচাই হয় না বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী।
শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন কারিকুলাম আসার ইঙ্গিত দিয়ে মন্ত্রী বলেন, জেএসসি পরীক্ষার বিপরীতে ভিন্ন পদ্ধতিসহ শিক্ষাক্ষেত্রে আসবে নতুন পরিবর্তন।২০২২ সালেও যে আগের মতো নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা হবে না এমন আভাস দেন মন্ত্রী।তিনি বলেন, আমরা আগামী বছরও হয়তো ঠিক এই সময়ে পরীক্ষা নিতে পারবো না।
মুভমেন্ট ফর ওয়ার্ল্ড এডুকেশন রাইটস এর আহ্বায়ক ফারুক আহমেদ আরিফ বার্তা২৪-কে বলেন, মূলত দেড় বছর পর পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে এটিই বড় বিষয়। গত বছরের মতো অটোপাস নয়। শিক্ষার্থীরা অন্তত কিছুটা পড়ালেখা করার সুযোগ পেয়েছে। তাতে সামান্য হলেও একবারে শূন্য থাকার চেয়ে ভালো। ইতোপূর্বে তিন ঘণ্টার পরীক্ষা হতো এবার সংক্ষিপ্ত সিলিবাসে দেড় ঘণ্টার পরীক্ষা হচ্ছে তাতে মেধা যাচাইয়ের চেয়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণই বড় করে দেখা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, সত্যি বলতে কি অটোপাসের কারণে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা থেকে মন উঠে গিয়েছিলো। সেখানে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস দিয়ে মূল বিষয় বাদ দিয়ে তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা হচ্ছে। করোনায় ২০২০ সালের মার্চে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার পর আমরা কিছু প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলাম। সেখানে বিভিন্ন টেলিভিশন, রেডিওকে শিক্ষাবিস্তারে অংশগ্রহণের বিষয় ছিল। একমাত্র বিটিভি ছাড়া আর কেউ এগিয়ে এলো না। আমরা আহত হয়েছিলাম। যাইহোক পরবর্তীতে অ্যাসাইনমেন্ট সিস্টেম চালু হলো কিন্তু সেটি আসলে আশার আলো দেখাতে না পারলেও কিছুটা বইমুখি করেছে।
তিনি আরও যোগ করেন, সব মিলিয়ে পরীক্ষা যে হচ্ছে এটাই অনেক কিছু। যেখানে করোনায় জীবনের গতি থেমে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত, সেখানে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস হোক আর বিষয় কমিয়ে পরীক্ষা হোক এটাও একটা চ্যালেঞ্জ। তবে বড় চ্যালেঞ্জ হলো করোনা পরবর্তী শিক্ষা ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা। হারিয়ে যাওয়া সেই শিক্ষার আলো আবার জ্বালানোর চ্যালেঞ্জ এখন সামনে। সব মিলিয়ে এবারের পরীক্ষা যেন সামনের আরও বড় চ্যালেঞ্জের প্রথম দাপ। এক্ষেত্রে শুধু রাষ্ট্র নয়, এগিয়ে আসতে সকল রাজনীতিবিদ, সমাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষদের।