ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠি

র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ২ জানুয়ারী, ২০২২ ১৬:৩৪ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫০৩ বার


র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পাঠানো একটি চিঠিতে র‍্যাব ও সংস্থাটির ছয়জন কর্মকর্তার ওপর আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।

নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে কয়েকদিন আগে ওই চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান।

রোববার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, কিছুদিন আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার টেলিফোনে কথা হয়। অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন সেই সময় একটি আন্তর্জাতিক সফরে থাকার সময় তাকে টেলিফোন করেন।

১৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর টেলিফোনে কথা হয়।

সেই সময় র‍্যাব ও সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আলোচনা হয়।

সেই টেলিফোন আলাপে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছিলেন। সেই আলাপের ভিত্তিতে এবং নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে এ কে আবদুল মোমেন একটি চিঠি পাঠিয়েছেন অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেনকে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেনকে উদ্ধৃত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, র‍্যাব ও কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রণেতারা সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে ওই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে তাকে ব্লিঙ্কেন জানিয়েছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলছেন, ‘আমরা তাকে বললাম যে, বিভিন্ন প্রকারে আপনাদের সঙ্গে আমাদের ৫০ বছরের উত্তম সম্পর্ক। বিভিন্নভাবে ডায়ালগ-আলোচনার স্কোপ আছে। আমরা কিছু না জেনে হঠাৎ করে এটায় আমাদের দেশের মানুষ সারপ্রাইজড, এটা অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল।’

‘আরো বললাম যে, এটা কিন্তু যথেষ্ট ক্রেডিবল অর্গানাইজেশন। এদের কারণে সন্ত্রাস কমেছে, ড্রাগ মোটামুটি আন্ডার কন্ট্রোল, হিউম্যান ট্রাফিকিং, যেগুলো আপনাদের গোল- সুতরাং আমাদের কাছে খুব তাজ্জব, আশ্চর্য মনে হয়েছে’ বলছেন আব্দুল মোমেন।

গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে র‍্যাব ও সংস্থাটির সাবেক-বর্তমান ছয় জন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও পররাষ্ট্র দপ্তর।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত ছয় জন কর্মকর্তা হচ্ছেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন (র‍্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক), বেনজির আহমেদ (সাবেক র‍্যাব মহাপরিচালক, জানুয়ারি ২০১৫-এপ্রিল ২০২০), খান মোহাম্মদ আজাদ (বর্তমান অতিরিক্ত মহাপরিচালক-অপারেশন্স), তোফায়েল মুস্তাফা সরওয়ার (সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক-অপারেশন্স, জুন ২০১৯-মার্চ ২০২১), মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক-অপারেশন্স, সেপ্টেম্বর ২০১৮-জুন২০১৯), এবং মোহাম্মদ আনোয়ার লতিফ খান (সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক-অপারেশন্স, এপ্রিল-২০১৬-সেপ্টেম্বর ২০১৮)।

এতে বলা হয়, গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত থাকার জন্য আজ বেনজির আহমেদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার কথা ঘোষণা করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর - যার ফলে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অযোগ্য হবেন।

বাংলাদেশ এই নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারকে তলব করে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। র‍্যাব ও সরকারের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ নাকচ করে দেয়া হয়েছে।

সেই সময় ওই নিষেধাজ্ঞাকে 'দুঃখজনক' বলে বর্ণনা করেছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন।

এ কে আবদুল মোমেন বলছেন, ‘যে অভিযোগটা এসেছে, সেটা আমাদের কাছে মনে হয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ আছে। আপনারা বলেছেন, গত ১০ বছরে দেশে ছয়শ লোক নিখোঁজ হয়েছে। আপনারা বলছেন, এটা গুম, র‍্যাব এটা করেছে। আপনার দেশে তো প্রতিবছর লাখ খানেক লোক নিখোঁজ হয়, সেটাকে কেউ গুম বলে না।'

‘আমরা এসব কথাই আবার চিঠিতে লিখেছি,’ তিনি জানান।

টেলিফোন আলাপের সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন।

এ কে আবদুল মোমেন বলছেন, ‘উনি তখন ডেমোক্রেসির কথা বলেছেন যে, নতুন সরকারের ম্যান্ডেট হচ্ছে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্রেসি। আমরা বললাম, ডেমোক্রেসির কারণেই তো বাংলাদেশে স্বাধীন হয়েছে। আমাদের দেশের ভিত্তিটাই হচ্ছে ডেমোক্রেসি।’

হিউম্যান রাইটস প্রসঙ্গে আবদুল মোমেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছেন, ‘হিউম্যান রাইটসের জন্য সবসময়েই সোচ্চার। এই ব্যাপারে আমাদের কোনো কম্প্রোমাইজ নেই। এমনকি র‍্যাবের যেখানে বাজে কাজ করেছে, শাস্তি হয়েছে। আমরা সেই কথাই উনাকে লিখেছি।’

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের কাছে চিঠিটি পাঠানো হয়েছে।

চিঠিটির কোনো উত্তর পাওয়া গেছে কিনা, সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ক্রিসমাস ও নতুন বছরের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ছুটি থাকায় এখনো কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে পরে চিঠির জবাব পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সূত্র : বিবিসি


   আরও সংবাদ