ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ৩ জানুয়ারী, ২০২২ ০৮:৩০ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫৩৮ বার
দেশের উচ্চশিক্ষার স্তর ‘মাস্টার্সে’ পড়াশোনার ক্ষেত্রে নিরুত্সাহ করছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা ও প্রশাসনিক বিষয় দেখভালের দায়িত্বে থাকা সরকারি এই সংস্থা বলছে, এই স্তরের শিক্ষা শুধু বাছাই করা শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রাখা উচিত।
তথ্য অনুযায়ী, স্নাতক শেষেই নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায় শিক্ষার্থীরা। এ সুযোগ শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেই নয়, সরকারি-বেসরকারি কলেজের ক্ষেত্রেও এমনটি হয়ে থাকে। কিন্তু এই প্রক্রিয়াটির বিরোধিতা করছে ইউজিসি।
ইউজিসি বলছে, দেশের উচ্চ স্তরে চার বছর মেয়াদী স্নাতক ডিগ্রিকে প্রান্তিক বা সর্বশেষ ডিগ্রি হিসাবে গণ্য করা হয়। কাজেই মাস্টার্স পর্যায়ে শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম কেবলমাত্র বাছাইকৃত মেধাবী স্নাতকদের জন্য উন্মুক্ত রাখা উচিত। স্নাতক পর্যায়ে ডিগ্রি অর্জনের পর সরাসরি মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তির সুযোগ না রেখে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে ভর্তি প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে হবে। এসব বিষয়ে একটি নীতিমালা প্রণয়নের পক্ষে মত দিয়েছে ইউজিসি।
ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব মতামত তুলে ধরা হয়। ইউজিসির এই প্রতিবেদন সম্প্রতি রাষ্ট্রপতির কাছে তুলে দেওয়া হয়। তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৫০টি সরকারি ও বেসরকারি ১০৭টি মিলিয়ে মোট ১৫৭টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স কোর্স চালু রয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ লাখ ১৯ হাজার, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫ হাজার ও ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৩ হাজার শিক্ষার্থী পড়ছে। এই তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় বাদে অন্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে ৫৫ হাজার। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে পড়ছে ২৩ হাজার। সব মিলিয়ে মাস্টার্সে পড়ছে ৪ লাখ শিক্ষার্থী। ইউজিসির তথ্য মতে, এতসংখ্যক শিক্ষার্থীর এই স্তরে পড়ার প্রয়োজন নেই।
ইউজিসি বলছে, বিশ্ববিদ্যালয় ও অনার্স কলেজসমূহে মাস্টার্স পর্যায়ে পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত অবকাঠামো সুযোগ-সুবিধা এবং যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক না থাকা সত্ত্বেও মাস্টার্স ডিগ্রি প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে । ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে মানসম্মত শিক্ষাদান সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান বু্যরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৪ হাজার ৭০০ কলেজের মধ্যে মাস্টার্স কলেজ রয়েছে ১৯১টি। এসব কলেজের মধ্যে বেশির ভাগেই নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক। নেই সুযোগ-সুবিধা। ফলে এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা মানসম্মত শিক্ষা পাচ্ছে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
২০১৪ সালে প্রকাশিত ৪১তম প্রতিবেদনে প্রায় একই ধরনের সুপারিশ করেছিল ইউজিসি। কিন্তু এই সুপারিশটি বাস্তবায়ন না হওয়ায় ছয় বছর পরে ৪৭তম প্রতিবেদনে আবারও একই ধরনের সুপারিশ করল ইউজিসি। কমিশনের ৪১তম প্রতিবেদনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ কলেজগুলোর শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল ইউজিসি। ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, দেশের কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, বিশেষ করে কতিপয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনের কলেজ থেকে পাশ করা স্নাতকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ। যদিও উচ্চশিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটছে, তবু শিক্ষার প্রত্যাশিত মান নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ইউজিসির এসব সুপারিশের বিরোধিতা করেছে শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, সবার উচ্চশিক্ষার অধিকার থাকা উচিত। নীতিমালা করে উচ্চশিক্ষার পথ বন্ধ করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এই সুপারিশ সংশোধনের দাবি জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, অবকাঠামো নেই বা শিক্ষক নেই এমন অজুহাত দেখিয়ে মাস্টার্সে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা সংকুচিত করা ঠিক হবে না। যেখানে অবকাঠামো নেই, সেখানে অবকাঠামোর সুযোগ-সুবিধা তৈরি করতে হবে। শিক্ষক না থাকলে নিয়োগ দিতে হবে। তবে অন্য কোনো কারণ থাকলে তা ভিন্ন কথা।
তিনি বলেন, সরকার এখন কর্মমুখী শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। সে বিবেচনায় উচ্চশিক্ষা স্তরে এ ধরনের শিক্ষা চালু করা হতে পারে। সরকার যে কলেজের স্নাতকোত্তর শিক্ষার স্তর সংকুচিত চায় এমন ইঙ্গিতও মিলেছে। বেসরকারি কলেজগুলোর অনার্স স্তরের শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত হতে না পারায় আন্দোলন করছিল। তাদের আন্দোলন যখন জোড়ালো হয়, তখনই অনার্স মাস্টার্স কোর্স সংকুচিত করার কথা বলা হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে।
২০২০ সালে জুলাইয়ে একটি অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, সরকার গতানুগতিক শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি, টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল শিক্ষার ওপর খুব জোর দিচ্ছে। সবার জন্য অনার্স-মাস্টার্স আর পিএইচডি ডিগ্রির প্রয়োজন নেই।