ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারী, ২০২২ ১৬:৫২ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫২০ বার
দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভারতের জাতীয় ক্রিকেট দলের টেস্ট অধিনায়কের পদ থেকে সরে দাঁড়ালেন বিরাট কোহলি। তার এভাবে সরে দাঁড়ানোতে ক্রিকেট বিশ্বে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
বিরাটের এই সরে দাঁড়ানোতে, জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার হারশা ভোগলে লিখেছেন, সাদা বলের ক্রিকেটে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেয়াটা আমার কাছে ভালো মনে হচ্ছিল, কিন্তু এবার আমি নিশ্চিত নই। তবে আমাদের মেনে নিতে হবে এবং দারুণ এই খেলোয়াড়কে দারুণ ব্যাটসম্যান হিসেবে দ্বিতীয় অধ্যায় শুরুর জন্য শুভকামনা জানাই।
ভারতের সাবেক ক্রিকেটার হরভজন সিং টুইটারে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
কোহলির অধিনায়কত্ব ছাড়ার কারণ নিয়ে ধোয়াঁশা ও প্রশ্ন থাকলেও বিশ্বের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান যে অধিনায়ক হিসেবেও সফল তা নিয়ে প্রশ্ন খুব কমই উঠেছে।
ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন টুইটারে লিখেছেন, অধিনায়কত্ব এক না এক সময় শেষ হবেই। বিরাট ভারতের জন্য দুর্দান্ত অবদান রেখেছেন, টেস্ট ক্রিকেটই যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই বার্তার জন্যও তাকে ধন্যবাদ।
রঙিন পোশাকে কোহলির অধিনায়কত্বের সফলতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও, টেস্ট ফরম্যাটে ভারতকে বিশ্বের সেরা টেস্ট দলগুলোর একটা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন কোহলি।
ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে তুমুল সফল এই ব্যাটসম্যান টেস্ট ক্রিকেটকে সবসময়ই বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছেন, তার প্রমাণ পাওয়া যেত ম্যাচের আগে ও পরের সংবাদ সম্মেলনে।
বিশ্বের অন্যান্য অধিনায়কদের মধ্যে কোহলি কোথায়?
জয়ের হারের দিক থেকে স্টিভ ওয়াহ'র অস্ট্রেলিয়াকে পেছনে ফেলবে এমন কোনো টেস্ট দল এখনো আসেনি। ৫৭টি টেস্ট ম্যাচ নেতৃত্ব দিয়েছেন স্টিভ ওয়াহ, জিতেছেন ৪১, ৯টিতে হার এবং সাতটি ড্র।
জয় ও হারের অনুপাতে স্টিভ ওয়াহ'র অস্ট্রেলিয়ার পরেই আছে বিরাট কোহলির ভারত।
টেস্ট ম্যাচ জয়ের দিক থেকে বিশ্বের সেরা পাঁচজন অধিনায়কের তালিকায় চার নম্বরে আছেন বিরাট কোহলি।
গ্রায়েম স্মিথ (দক্ষিণ আফ্রিকা)- ১০৯ ম্যাচে ৫৩ জয়
রিকি পন্টিং (অস্ট্রেলিয়া)- ৭৭ ম্যাচে ৪৮ জয়
স্টিভ ওয়াহ (অস্ট্রেলিয়া)- ৫৭ ম্যাচে ৪১ জয়
বিরাট কোহলি (ভারত)- ৬৮ ম্যাচে ৪০ জয়
ক্লাইভ লয়েড (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)- ৭৪ ম্যাচে ৩৬ জয়
ভারতের অধিনায়কদের মধ্যে বিরাটের অবস্থান-
মোট ২৫টি টেস্ট সিরিজে বিরাট কোহলি ভারতের নেতৃত্ব দিয়েছেন, যার মধ্যে জয় পেয়েছেন ১৮টিতে, ছয়টি হেরেছেন এবং একটি ড্র। ঘরের মাটিতে কোহলির দলকে হারানো দুঃসাধ্য এক ব্যাপার ছিল, ভারতে কোহলির নেতৃত্বে ভারত কোনো সিরিজ হারেনি। এমনকি ড্রও করেনি।
একটি বা তার বেশি সিরিজে অধিনায়ক ছিলেন এমন কোনো ভারতীয় টেস্ট অধিনায়কের এই রেকর্ড নেই।
১১টি সিরিজে বিরাট কোহলির নেতৃত্বে ঘরের মাটিতে মাত্র দুটি টেস্ট ম্যাচ হেরেছে ভারত।
জয়, হার অথবা ড্র- এই তিন ফলাফলের বাইরেও যে ব্যাপারটি কোহলির টেস্ট দলকে আলাদা করে সেটা হলো জয়ের ব্যবধান, ঘরের মাটিতে নয়টি টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে জয় পেয়েছে কোহলির দল, আরো নয়টি টেস্ট অন্তত ১৫০ রানের ব্যবধানে জিতেছে।
ভারতীয় টেস্ট অধিনায়কদের জয় ও হার
ভারতের হয়ে যারা টেস্ট ক্রিকেটে অধিনায়কত্ব করেছেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জিতেছেন বিরাট কোহলি। ৬৮টি ম্যাচের ৪০টিতেই জয় পেয়েছে কোহলির নেতৃত্বাধীন টেস্ট দল।
কোহলির আমলেই দেশের বাইরে ভারতের দাপট-
ভারতের অধিনায়কদের মধ্যে বিরাট কোহলি দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি, ১৬টি টেস্ট ম্যাচ জিতেছেন। তারপরেই আছেন সৌরভ গাঙ্গুলি, যিনি অধিনায়ক হিসেবে জিতেছেন ১১টি টেস্ট। এশিয়ার অধিনায়কদের মধ্যে কোহলিই প্রথম অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট সিরিজ জেতেন।
২০১৭ সালে কোহলির ভারত শ্রীলঙ্কায় গিয়ে শ্রীলঙ্কার মাটিতে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে আসে। ২০১৮-১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জেতে ভারত। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ২ বার সিরিজ হারায় বিরাট কোহলির ভারত। এরপর ২০২১ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে থাকে ভারত, তবে এই সিরিজটির এখনো একটি টেস্ট বাকি, কোভিড সংক্রান্ত জটিলতায় যেটি পরে হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে কোহলির অধিনায়কত্বে ভারত ৭টি টেস্ট জিতেছে।
এই দেশগুলোতে ভারতের অধিনায়ক হিসেবে তিনটি করে টেস্ট জিতেছেন ধোনি ও মনসুর আলী খান।
এশিয়ার অধিনায়কদের মধ্যেও কোহলির চেয়ে বেশি টেস্ট এই চারটি দেশে কেউ জেতেনি, পাকিস্তানের ওয়াসিম আকরাম ও জাভেদ মিয়ান্দাদ জিতেছেন চারটি করে টেস্ট।
ব্যাট হাতেও অধিনায়ক কোহলি ছিলেন ওপরের দিকে
অধিনায়ক হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন গ্রায়েম স্মিথ, সেঞ্চুরিও তার সর্বোচ্চ। দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসের সফলতম এই অধিনায়কের পরেই সেঞ্চুরির তালিকায় আছে বিরাট কোহলির নাম।
স্মিথ সাড়ে আট হাজারের বেশি রান করার সময় পঁচিশটি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন, কোহলির সেঞ্চুরি ২০টি।
রান সংগ্রাহকদের তালিকায় গ্রায়েম স্মিথ, অ্যালান বোর্ডার, রিকি পন্টিংয়ের পরেই আছেন বিরাট কোহলি।
এই সেরাদের তালিকায় গড়ের দিক থেকে সবার ওপরে কোহলি- ৫৪ দশমিক ৮।
অধিনায়ক হিসেবে নিজের প্রথম ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডেলেইডে কোহলি জোড়া সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন।
অধিনায়ক হিসেবে কোহলির সাতটি ডাবল সেঞ্চুরি আছে, যা টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ।
কোহলির বিদায়ে ক্রিকেট অঙ্গনে প্রতিক্রিয়া-
রাভিচন্দ্রন অশ্বিন ভারতের বিদায়ি টেস্ট অধিনায়ক সম্পর্কে টুইটারে লিখেছেন, `ক্রিকেটে অধিনায়কদের শ্রদ্ধাভরে মনে রাখা হয় তাদের রেকর্ড ও জয়ের জন্য কিন্তু বিরাট কোহলিকে সবাই মনে রাখবে তিনি যেসব মানদণ্ড তৈরি করে দিয়েছেন তার জন্য। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কায় জয় পাওয়া নিয়ে মানুষ কথা বলবে।
ভারতের ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা- বিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট সৌরভ গাঙ্গুলি টুইট করেছেন, বিরাটের নেতৃত্বে ভারত সব ফরম্যাটেই অনেক এগিয়ে গেছে। তার সিদ্ধান্ত ব্যক্তিগত এবং বিসিসিআই একে সম্মান করবে। এই দলকে সামনে এগিয়ে নিতে কোহলি গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবেই থাকবেন।
ভারতের সাবেক ক্রিকেটার ওয়াসিম জাফর বিরাট কোহলিকে নিয়ে লিখেছেন, যখন বিরাট অধিনায়ক হলেন, তখন বিদেশের মাটিতে জয় পাওয়াকে একটা অর্জন ধরে নেয়া হত, এখন হেরে গেলে সেটাকে আপসেট মনে করা হয়, বিরাট ভারতের দলটাকে কতটা এগিয়ে নিয়েছে।
রাভি শাস্ত্রী তার দীর্ঘদিনের শিষ্যকে নিয়ে লিখেছেন, বিরাট মাথা উঁচু করেই চলবে। অধিনায়ক হিসেবে তোমার মতো অর্জন খুব কমই আছে। নিঃসন্দেহে ভারতের সবচেয়ে আগ্রাসী ও সবচেয়ে সফল।
সূত্র : বিবিসি