ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারী, ২০২২ ১০:১২ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫১৮ বার
যারা বয়সের কারণেই স্বাস্থ্যসচেতন, আবার করোনার টিকাও নিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া এমন শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হয়েছে অনলাইনে। অন্য দিকে বয়সে ছোট, স্বাস্থ্যসচেতনতা বিষয়েও যথেষ্ট জ্ঞানও নেই, এখনো টিকাও নেয়নি; সেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলের শিক্ষার্থীদের ক্লাস চলছে সশরীরে। ফলে আতঙ্কে রয়েছেন স্কুলের অসংখ্য শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক।
আর এই সুযোগেই মূলত স্কুল বন্ধের নানা ধরনের গুজবের শাখা-প্রশাখার বিস্তার ঘটছে। যদিও শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের টিকা কার্যক্রম চলমান রাখার জন্যই এই মুহূর্তে স্কুল বন্ধ করা হচ্ছে না। অন্য দিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হলে শিক্ষার্থীদের টিকা কার্যক্রমে ভাটা পড়তে পারে এমন আশঙ্কা থেকেই এখনো স্কুল বন্ধ করার মতো সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে না।
সূত্র মতে, আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে মাধ্যমিক স্কুলের ১২ থেকে ১৭ বয়সী শিক্ষার্থীদের কনোরার টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। যদিও সব শিক্ষার্থীকে টিকা দেয়ার নির্দেশনা থাকলেও কোন প্রক্রিয়ায় টিকা দেয়া হবে তা নিয়েও মাঠপর্যায়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, যেকোনো প্রমাণপত্র দেখালেই করোনার টিকা পাবে স্কুল শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এখানে প্রমাণপত্র বলতে কী বোঝানো হয়েছে তারও কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। তাই জেলা ও উপজেলাপর্যায়ের অনেক স্কুলের শিক্ষার্থীর যেখানে কোনো পরিচয়পত্র (আইডি কার্ড) নেই সেখানে তারা (শিক্ষার্থীরা) প্রমাণ হিসেবে কী দেখাবে সেটিও স্পষ্ট নয়। তাই বেশির ভাগ স্কুলের প্রধানরা এখন নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্র তৈরি কাজে ব্যস্ত রয়েছেন।
এ দিকে দেশে নতুন করে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) গত শনিবার থেকে আবার অনলাইনে ক্লাস নেয়া শুরু করেছে। তবে আবাসিক হলগুলো খোলাই থাকবে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ও সশরীরে ক্লাস বন্ধ করে অনলাইনে ক্লাস শুরু করেছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এ মাসে পরীক্ষা শেষ করে আগামী মাস থেকে অনলাইনে ক্লাস শুরুর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ও একইভাবে তারা অনলাইনে ক্লাস চালুর চিন্তা করছে। তারা করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা বাতিল করে অনলাইনে চালুর উদ্যোগ নিচ্ছে। দেশে বর্তমানে ৫০টি পাবলিক ও ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজস্ব আইনে চলে। শিক্ষা কার্যক্রমের বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যার যার মতো করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে অনলাইনে ক্লাস নেয়ার ক্ষেত্রে সবার সক্ষমতা সমান নয়। সব শিক্ষার্থীরও এ বিষয়ে সমান সুযোগ নেই।
টিকা কার্যক্রম চলাকালে স্কুল-কলেজে আপাতত সীমিত পরিসরে সশরীর ক্লাস চালিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা প্রশাসন। এই সময়ে তারা শিক্ষার্থীদের (১২ থেকে ১৮ বছরের নিচের বয়সী) করোনার টিকা দেয়ার ওপর বেশি জোর দিচ্ছেন। তবে পরিস্থিতি যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে করোনা-সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী, আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের মতো বিকল্প চিন্তাও তাদের আছে। যদিও এখনো বন্ধের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি গতকাল রোববার এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, এখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করার কথা ভাবা হচ্ছে না। এখন শিক্ষার্থীদের টিকাদান কর্মসূচি খুব জোরের সাথে চলছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করলে টিকাদান কর্মসূচিতে বাধা পড়ার আশঙ্কা আছে। পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়নি। যতটুকু সম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনাকে মোকাবেলা করতে হবে। কাজেই এখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কথা ভাবা হচ্ছে না। তবে যদি তেমন প্রয়োজন দেখা দেয়, তখন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে সারা দেশে ১২ থেকে ১৮ বছরের কম বয়সী শিক্ষার্থী আছে এক কোটি ১৬ লাখের মতো। মাউশির হিসাবে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর অন্তত এক ডোজ টিকা নেয়া হয়ে গেছে। বাকি শিক্ষার্থীদের টিকা এ মাসের মধ্যে দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার শর্তও শিথিল করা হয়েছে। এখন স্কুলের আইডি কার্ড কিংবা যেকোনো প্রমাণপত্র দেখালেই দেয়া হবে টিকা। শিক্ষার্থীরা আইডি কার্ড নিয়ে কেন্দ্রে গিয়ে টিকা নিতে পারবে। কারো আইডি কার্ড না থাকলে সে ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন কার্ড দেখালে টিকা দেয়া হবে। আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে টিকার বাইরে থাকা মাধ্যমিক পর্যায়ের ৭৫ লাখ ৫৪ হাজার ৬০৬ জন শিক্ষার্থীকে টিকা দেয়ার টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই হিসাবে দৈনিক পৌনে চার লাখ শিক্ষার্থীকে টিকা দেয়া হচ্ছে।