আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২১ জানুয়ারী, ২০২২ ১১:২৩ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪৩৪ বার
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্যদের নিষিদ্ধ করার যৌথ দাবি করেছে ১২টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা।
এ ব্যাপারে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যাঁ পিয়েরে ল্যাকরোইক্সকে সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে যৌথভাবে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার চিঠিটির বিষয়টি হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
সংস্থাগুলোর চিঠিতে বলা হয়েছে-বাংলাদেশের বিশেষায়িত বাহিনী র্যাবের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম ও নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। এজন্য জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম বিভাগের উচিত র্যাব সদস্যদের শান্তিরক্ষা মিশনে নিষিদ্ধ করা।
গত বছরের ৮ নভেম্বর জ্যাঁ পিয়েরে ল্যাকরোইক্সের কাছে চিঠিটি পাঠানো হয়। তবে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন কর্তৃপক্ষ এখনও এর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
চিঠিতে স্বাক্ষর করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, এশিয়ান ফেডারেশন অ্যাগেইনস্ট ইনভলান্টারি ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স (আফাদ), এশিয়ান ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ফোরাম-এশিয়া), এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন, এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস (আনফ্রেল), ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রজেক্ট, সিভিকাস : ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর সিটিজেন পার্টিসিপেশন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস, রবার্ট এফ. কেনেডি হিউম্যান রাইটস, দ্য অ্যাডভোকেটস ফর হিউম্যান রাইটস, ওয়ার্ল্ড অরগানাইজেশন অ্যাগেইনস্ট টরচার (ওএমসিটি)।
চিঠিতে আরও বলা হয়- ২০০৪ সালে র্যাব গঠনের শুরু থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত র্যাবের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন, জোরপূর্বক গুম করে দেওয়ার বিস্তর অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
সংস্থাগুলো বলছে, ধারাবাহিকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো গুরুতর অপরাধ করে এলেও বাংলাদেশ সরকার র্যাব সদস্যদের পুরস্কৃত করছে ও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে পাঠাচ্ছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের বিভিন্ন বাহিনীর সাড়ে ৬ হাজারের বেশি সদস্য মোতায়েন রয়েছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, ২০১২ সালে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের যে নীতি নিয়েছিল তা জাতিসংঘ মিশনে আসা বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে যথাযথভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে না।
বাংলাদেশ থেকে আসা র্যাব সদস্যদের বিষয়ে কোনো যাচাই না করে তাদের শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু শান্তিরক্ষা মিশনে কাউকে নিয়োগ দেওয়ার আগে যাচাই পদ্ধতি চালু করা উচিত। যেখানে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, নির্যাতনের অভিযোগও তদন্ত করে দেখা হবে।
এইচআরডব্লিউ বলেছে-বাংলাদেশ সরকার ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার পরিবর্তে মানবাধিকার রক্ষাকারী এবং ভুক্তভোগীদের পরিবারের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থা রবার্ট এফ. কেনেডি হিউম্যান রাইটসের প্রেসিডেন্ট কেরি কেনেডি বলেছেন, শান্তিরক্ষীদের মাধ্যমে মানবাধিকার হরণের অবসানের বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তরিক হয়ে থাকলে যাদের বিরুদ্ধে নিপীড়নের প্রমাণিত অভিযোগ রয়েছে তাদের বাদ দেওয়া তাকে নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রমাণ স্পষ্ট-এখন জাতিসংঘের দাগ টেনে দেওয়ার সময়। কনভেনশন অ্যাগেইনস্ট টর্চারের অধীনে বাংলাদেশে ২০১৯ সালের ঘটনা পর্যালোচনা করা হয়। সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানান, র্যাব সদস্যদের শান্তি মিশনে মোতায়েন করার বিষয়ে তারা উদ্বিগ্ন।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের পরিচালক লুইস চ্যার্বন বলেছেন, শান্তিরক্ষা মিশনে র্যাব সদস্যদের মোতায়েন জাতিসংঘের নীতিমালা অনুযায়ী হতে পারে না। এতে শান্তিরক্ষা মিশনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শঙ্কা দেখা দিতে পারে।
তিনি আরও বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী কোনো ইউনিট জাতিসংঘের অংশ হতে পারে না। এ ব্যাপারে সৈন্য প্রেরণকারী দেশগুলোর কাছে জাতিসংঘের উচিত স্পষ্ট বার্তা পৌঁছে দেওয়া।
এর আগে ১০ ডিসেম্বর র্যাবের সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। র্যাবের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
র্যাবের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সে ঘটনা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শেষ হতে না হতেই এবার বাহিনীটির বিরুদ্ধে জাতিসংঘের কাছে চিঠি দিয়েছে সংস্থাগুলো।
র্যাব মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়, রক্ষা করে : র্যাবের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে ১২টি মানবাধিকার সংস্থার পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া প্রসঙ্গে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল কেএম আজাদ যুগান্তরকে বলেছেন, এতে আমরা বিচলিত নই।
কারণ র্যাব কখনো মানবাধিকার লঙ্ঘন করে না; সব সময় মানবাধিকার রক্ষা করে। আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব আমরা যথাযথভাবে পালন করে যাব। তিনি জানান, আনুষ্ঠানিক চিঠি পাওয়ার পর সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।
র্যাব মিডিয়া অ্যান্ড লিগ্যাল উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, চিঠি যে কেউ যে কারও বিরুদ্ধে দিতে পারে। এটা কোনো সিদ্ধান্ত নয়। আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। আনুষ্ঠানিক কোনো চিঠি পাইনি।
চিঠি পেলে এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ অন্য সব সংস্থা যে চিঠি দিয়েছে তা র্যাবের বিপক্ষে গেলেও এটি মূলত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিষয়। তাই বিষয়টি নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ই ভালো বলতে পারবে।