আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারী, ২০২২ ০৯:৩৯ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪৯৫ বার
চীন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, আমেরিকার হাতে রয়েছে সবচেয়ে বেশি পরমাণু অস্ত্র এবং তারাই হচ্ছে বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। এ অবস্থায় পরমাণু অস্ত্রের ভান্ডার ধ্বংস করার জন্য আমেরিকারই প্রথমে পদক্ষেপ নেয়া উচিত।
বৃহস্পতিবার এক যৌথ বিবৃতিতে আমেরিকা ও জাপান ‘চীনের ক্রমবর্ধমান পরমাণু সক্ষমতার জন্য’ উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে পরমাণু অস্ত্র কমানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে বেইজিংয়ের প্রতি আহ্বান জানায়। এর জবাবে গতকাল (শুক্রবার) চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান এসব কথা বলেন।
তিনি সুস্পষ্ট করে বলেন, আমেরিকার হাতে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পরমাণু অস্ত্র এবং তারাই আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। তিনি আরো বলেন, আমেরিকা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করেছে। এছাড়া, তাদের হাতে সর্বাধুনিক এবং সবচেয়ে বেশি পরমাণু অস্ত্র থাকার পরেও তারা পরমাণু অস্ত্রের আধুনিকায়নের জন্য ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র পরিষ্কার করে বলেন, বেইজিংয়ের সমালোচনা করার আগে আমেরিকার উচিত তার নিজের দিকে তাকানো এবং পরমাণু অস্ত্র ধ্বংস করে অন্য দেশগুলোর জন্য উদাহরণ সৃষ্টি করা উচিত।#
সূত্র : পার্সটুডে
১১========
মিয়ানমার ছাড়ছে টোটাল, শেভরন, শেল
নয়া দিগন্ত অনলাইন
একের পর এক বিদেশি কোম্পানি মিয়ানমার থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিচ্ছে৷ এবার সেই দলে যোগ দিয়েছে বিশ্বের জ্বালানি খাতের দুই বৃহৎ প্রতিষ্ঠান টোটাল ও শেভরন৷ শেলও জানিয়েছে আপাতত সেখানে আর কোনো কার্যক্রম চালাবে না৷
মিয়ানমারের সামরিক সরকারের অব্যাহত মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে ফরাসি প্রতিষ্ঠান টোটাল এনার্জিস ও যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন দেশটিতে তাদের কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷
শুক্রবার এই ঘোষণা দিয়েছে প্রতিষ্ঠান দু’টি৷ দেশটির দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে ইয়াদানা গ্যাস প্রকল্পে আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সাথে যৌথ বিনিয়োগে যুক্ত ছিল টোটাল ও শেভরন৷
প্রকল্প থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেয়ার কারণ হিসেবে দু’টি প্রতিষ্ঠান মিয়ানমারের সামরিক সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা উল্লেখ করেছে৷
টোটাল এনার্জিস তাদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, ‘২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মানবাধিকার, আইনের শাসনসহ মিয়ামারের পরিস্থিতির দিনকে দিন অবণতি হচ্ছে, যার কারণে আমরা পরিস্থিতি পুনঃমূল্যায়নে বাধ্য হয়েছি৷ আমরা মিয়ানমারের ইয়াদানা গ্যাস ক্ষেত্র এবং এমজিটিসি এর পরিচালনাকারী ও বিনিয়োগকারী হিসেবে টোটাল এনার্জিসের কোনো ক্ষতিপূরণ ছাড়াই চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়ার উদ্যোগ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷
শেভরনের মুখপাত্র বলেছেন, মিয়ানমার পরিস্থিতি বিবেচনায় ইয়াদানা প্রাকৃতিক গ্যাস প্রকল্পে থেকে নিজেদের কার্যক্রম হস্তান্তরের মাধ্যমে দেশটি ছাড়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি৷
মিয়ানমারের এই প্রকল্পে সর্বোচ্চ ৩১.২৪ শতাংশের মালিক টোটাল৷ অন্যদিকে তাদের অংশীদার শেভরনের রয়েছে ২৮ শতাংশ মালিকানা৷ বাকিটা মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় কোম্পানির মালিকানাধীন৷
এদিকে রয়্যাল ডাচ শেলও মিয়ানমারে তাদের কার্যক্রম বন্ধের খবর শুক্রবার নিশ্চিত করেছে৷ সমুদ্রে একটি ব্লকে উডসাইড এনার্জি ও মিয়ানমার পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানির সাথে তাদের যৌথ বিনিয়োগ কার্যক্রম ছিল ৷
রয়টার্সকে প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্র বলেন, অনুসন্ধান কাজ পরিত্যাক্ত অবস্থায় রয়েছে৷ যার কারণে কারণে এর সাথে কোনো উৎপাদন, আর বা সরকাররে সাথে আমাদের কোনো লেনদেনও নেই৷
বিদেশি কোম্পানির মিয়ানমার ছাড়ার হিড়িক
শুধু এই তিন প্রতিষ্ঠানই নয় একে একে প্রায় সব বিদেশি বৃহৎ কোম্পানিই মিয়ানমার থেকে তাদের বিনিয়োগ গুটিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে৷ এতে আরো বিপাকে পড়ছে দেশটির অর্থনীতি৷ হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তথ্য অনুযায়ী, শুধু টোটাল ও শেভরনই ইয়াদানা গ্যাস প্রকল্পের আয় থেকে সরকারকে বছরে এক শ’ কোটি ডলারের বেশি দিত কর ও বিভিন্ন ফি হিসেবে, যা দেশটির বিদেশি মুদ্রা আয়ের এককভাবে সবচেয়ে বড় উৎস ছিল৷
জ্বালানি খাতে ফ্রান্সের বৃহৎ প্রতিষ্ঠান ইডিএফ দেশটিতে ১৫০ কোটি ডলারের একটি যৌথ বিনিয়োগের পানি বিদ্যুৎ প্রকল্পে জড়িত ছিল৷ তারা সেখান থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে৷ মিয়ানমার ছেড়েছে ফরাসি নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রতিষ্ঠান ভোল্টালিয়াও৷
মিয়ানমারে সবচেয়ে বড় টেলিকম সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের মালিক নরওয়ের টেলিনর৷ তারাও গত বছর দেশটিতে তাদের ব্যবসা বিক্রি করে দেয়ার ঘোষণা দেয়৷ চলতি সপ্তাহে একটি বার্মিজ ডিজিটাল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছে তারা শেয়ার হস্তান্তর করবে৷
গত অক্টোবরেই ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে তামাকজাত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোবাকো৷ দেশটিতে তাদের কর্মী বহরে ছিল এক লাখেরও বেশি মানুষ৷
জাপানি প্রতিষ্ঠান টোয়োটার মিয়ানমারে গত বছরই একটি কারখানা চালু করার কথা ছিল৷ সেটি তারা স্থগিত করেছে৷ সামরিক সরকার ক্ষমতা দখলের পরপরই দুটি কারখানার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে আরেব জাপানি গাড়ি নির্মাতা সুজুকি৷
সামরিক অভ্যুত্থানে ধাক্কায় গত কয়েক বছর ধরে ক্রমবর্ধিষ্ণু তৈরি পোশাক শিল্পও৷ ইটালির বেনেটনের মতো ব্র্যান্ডগুলো এখন তাদের কাছ থেকে পোশাক কেনা বন্ধ করে দিয়েছে৷
জাপানের পানীয় পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কিরিন গত কয়েক মাস ধরেই মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সাথে তাদের ব্যবসায়িক সম্পর্কের ইতি টানার চেষ্টা করে আসছে৷
ডেনিশ বহুজাতিক কোম্পানি কার্লসবের্গের প্রায় সাড়ে চার শ’ কর্মী আছে দেশটিতে৷ প্রতিষ্ঠানটি সেখানে কার্যক্রম সীমিত করার ঘোষণা দিয়েছে৷
সব মিলিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধে বিদেশি বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও মিয়ানমারের সার্বিক অর্থনীতি আরো নাজুক পরিস্থিতিতে পড়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে৷ যদিও সরকারের দাবি বিদেশি কোম্পানিগুলো কার্যক্রম গুটিয়ে নিলেও দেশটির অর্থনীতিতে তার বড় প্রভাব পড়বে না৷
সূত্র : ডয়চে ভেলে