আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারী, ২০২২ ১২:৪৫ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪৫৬ বার
চলমান সময়ে অব্যাহতভাবে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালাচ্ছে উত্তর কোরিয়া। এর মধ্যে ব্যালেস্টিক ও হাইপাসনিক ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে। এসব ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার মাধ্যমে কী অর্জন করতে চান উত্তর কোরীয় নেতা উন - এ নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা।
এবারের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো স্বল্পপাল্লার এবং সাগরে যেখানে এগুলো পড়েছে, তা জাপানের উপকূল থেকে অনেক দূরে।
তবু উত্তর কোরিয়ার একের পর এক এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা জাপানকে কিছুটা হলেও ঝাঁকুনি দিয়ে গেছে।
তবে এখনকার পরীক্ষাগুলো ২০১৭ সালের অগাস্টের চেয়ে ভিন্নতর। সে সময় জাপানীদের ঘুম ভেঙ্গেছিলো সাইরেনের শব্দে। কারণ কোনো ধরনের সতর্কবার্তা ছাড়াই উত্তর কোরিয়া জাপানের উপর দিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরে আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল। জাপানিরা এটিকে চরম ধৃষ্টতা হিসেবে বিবেচনা করে।
উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উন এখনকার জন্য কিছুটা রাশ টেনে ধরেছেন বলে মনে হচ্ছে। তবে এটি পরিবর্তন হতে পারে যদি তিনি যা চাইছেন - সেটি অর্জিত না হয়।
তাহলে কী চাইছেন কিম জং উন?
সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর অর্থ হলো উত্তর কোরিয়া দ্রুত একটি কার্যকর পারমাণবিক প্রতিরোধকের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
‘আমার দৃষ্টিকোণ থেকে এটাই হওয়ার কথা ছিলো,’ বলছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক একজন নৌ কমান্ডার প্রফেসর কিম ডং ইয়ুপ।
‘আমি বিস্মিত হচ্ছি, কারণ আমরা উত্তর কোরিয়ার প্রযুক্তিকে ছোট করে দেখেছি। আসলে উত্তর কোরিয়া তার সামরিক সক্ষমতা আমাদের ধারণার চেয়ে বেশি গতিতে এগিয়ে নিচ্ছে।’
গত ৫ ও ১০ই জানুয়ারির পরীক্ষার পর পিয়ংইয়ং দাবি করেছে যে, তারা সফলভাবে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে।
কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?
কারণ এর মানে হলো উত্তর কোরিয়া এমন প্রযুক্তি তৈরি করছে, যা ওই অঞ্চল জুড়ে আমেরিকা ও জাপানের ব্যয়বহুল ও জটিল ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাকে হারিয়ে দিতে পারে।
দ্য সেন্টার ফর অ্যা নিউ আমেরিকান সেঞ্চুরির দায়েউন কিম বলছেন, ‘এটা পরিষ্কার যে, তারা এমন অস্ত্র তৈরি করতে চায়, যা ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাকে জটিল করে তুলতে পারে এবং আমেরিকার পক্ষে চিহ্নিত করা কঠিন হতে পারে।’
প্রফেসর কিম ডং ইয়ুপ একথার সাথে একমত পোষণ করে বলেন, ‘উত্তর কোরিয়া আসলে চাইছে প্রতিপক্ষের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা সিস্টেমকে নড়বড়ে করে দিতে।’ তিনি বলেন, তারা এমন পদ্ধতি তৈরিতে সক্ষমতা অর্জন করতে চাইছে, যা একদিকে শত্রুকে আক্রমণ করবে, আবার সেটিই নিজেকে প্রতিরক্ষা দিতে সক্ষম হবে।
প্রফেসর কিম বলছেন, উত্তর কোরিয়ার মূল লক্ষ্য হামলা করা নয়, বরং নিজেদের রক্ষা করা এবং দেশটি এই সক্ষমতায় বৈচিত্র্যতা আনতে চাইছে।
উত্তর কোরিয়াকে যারা পর্যবেক্ষণ করে থাকেন, তাদের অধিকাংশই এ ধারণা পোষণ করেন।
তবে দক্ষিণ কোরিয়া কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে হামলা হলে প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কার্যকর প্রতিরোধকে রূপান্তর করা থেকে এখনো অনেক দূরেই রয়েছে উত্তর কোরিয়া। যদিও দেশ দুটি বারবার বলেছে উত্তর কোরিয়ার বর্তমান শাসকগোষ্ঠীকে উৎখাতের বা হামলার কোন লক্ষ্য তাদের নেই।
তাহলে ছোট এই দেশটি কেন তার জিডিপির এক চতুর্থাংশ সামরিক খাতে ব্যয় করে চলেছে?
বিশ্লেষক অঙ্কিত পান্ডা বলেন, এটা হতে পারে যে, নিজেকে রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত অস্ত্র এখনো তাদের নেই বলে মনে করছে উত্তর কোরিয়া।
‘কিম জং উন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। আমার মনে হয়, তিনি চীন বা রাশিয়াসহ কাউকেই বিশ্বাস করেন না। সে কারণেই হয়তো নিজের সক্ষমতাকে অনেকখানি বাড়াতে চাইছেন যাকে আমরা যথেষ্ট হিসেবে বিবেচনা করতে পারি।’
তাছাড়া পিয়ংইয়ংয়ের আরো একটি লক্ষ্য থাকতে পারে। তা হচ্ছে, হয়তো তারা চায় জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাক এবং সেজন্য আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের যুক্ত হোক।
যদিও অতীতে দেখা গেছে, সংকট তৈরি করে তারা যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছে এবং এখনো কিছু বিশ্লেষক তেমনটিই মনে করছেন।
‘সুতরাং এটা আমার কাছে ভালো লক্ষণ,’ বলেন দক্ষিণ কোরিয়ার ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজরি বোর্ডের সদস্য প্রফেসর কিম ইয়াংজুন।
‘শান্তি উদ্যোগের আগে কিম জং উন সর্বোচ্চ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালাতে চান। তিনি জো বাইডেনকে একটি পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপসহ সিরিয়াস আলোচনার দিকে ঠেলে দিতে চান।’
সেটি হলে সম্ভবত তাকে হতাশই হতে হবে কারণ বাইডেন এখন ব্যস্ত ইউক্রেন সংকট নিয়ে। তাছাড়া উত্তর কোরিয়ায় নিজেকে জড়িত করার ক্ষেত্রে পূর্বসূরী ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো খুব একটা উৎসাহ নেই বাইডেনের।
সূত্র : বিবিসি