ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২২ ১১:৩১ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪৮৯ বার
সম্প্রতি রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশ এলাকায় ডজনখানেক বাস ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। গত ৯ জানুয়ারি সাভারের ব্যাংক টাউন এলাকা থেকে আর বি পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন মামুন নামে একজন। মুহূর্তেই তার চোখ বেঁধে ফেলে দুর্বৃত্তরা। পরে টের পান যাত্রীবেশে বাসের সবাই মূলত ডাকাত। ২০ জানুয়ারি প্রায় একই রকম ঘটনার মুখোমুখি হন টাঙ্গাইলের সদর হাসপাতালের ডাক্তার শফিকুল ইসলাম সজীব। পরে ৩০ জানুয়ারি রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ২০ জানুয়ারি তিনি উত্তরার আব্দুল্লাহপুর এলাকা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী একটি বাসে টাঙ্গাইলে যাওয়ার জন্য এক বন্ধুসহ উঠেছিলেন। বাসে ওঠার কিছুক্ষণ পরেই যাত্রীবেশে ডাকাত দলের সদস্যরা তাদের হাত-পা ও মুখ বেঁধে সবকিছু কেড়ে নেয়। বাস নিয়ে ডাকাত দলের সদস্যরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার এটিএম বুথে গিয়ে তার সাথে থাকা এটিএম কার্ড থেকে টাকাও তুলে নিয়েছিল।এসব ঘটনা আমলে নিয়ে, গত কয়েক দিনে ঢাকার আশপাশে অভিযান চালিয়ে ছদ্মবেশী দুটি ডাকাত দলের আট সদস্যকে গ্রেফতার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ। ডাকাতির ঘটনায় গ্রেফতাররা হলেন নাঈমুর রহমান নাঈম, আবু জাফর বিপ্লব, সজিব মিয়া, জহুরুল ইসলাম, আলামিন, দিলীপ সোহেল, আলামিন ও শাহনেওয়াজ ভূঁইয়া আজাদ। গত রোববার রাতে রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশ এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ গ্রুপের একটির নেতৃত্ব দিত দিলীপ ওরফে সোহেল, অন্যটি আবু জাফর বিপ্লব।
গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, চক্রটি ভাড়া বাসে করে ঘুরে ঘুরে ডাকাতি করত। চলতি মাসের গত ২০ জানুয়ারি রাতে টাঙ্গাইলের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) শফিকুল ইসলাম তার বন্ধুসহ উত্তরা পশ্চিম থানার আব্দুল্লাহপুর পেট্রলপাম্পের সামনে থেকে টাঙ্গাইলের উদ্দেশে আর কে আর পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন। বাসে ওঠা মাত্রই ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাকে দুই হাত ও চোখ বেঁধে ফেলে। এ সময় তার সাথে থাকা নগদ এক লাখ ১৫ হাজার টাকা, বিকাশে থাকা পাঁচ হাজার টাকা ও ব্যাগে থাকা দুটি ব্যাংকের এটিএম কার্ড দিয়ে আরো এক লাখ ৫০ হাজার টাকাসহ মোবাইল ফোন ও অন্যান্য জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয় ডাকাতরা।
তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে ডাকাতদল জানায়, তারা পূর্বপরিকল্পিতভাবে আর কে আর পরিবহনের একটি বাস ভাড়ার কথা বলে সাভারের গেন্ডা এলাকায় নিয়ে যায়। সেখান থেকে ডাকাতরা প্রথমে বাসের ড্রাইভার ও হেলপারকে জিম্মি করে বাসটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। পরে বাসটি নিয়ে ঢাকা মহানগর এলাকার বিভিন্ন সড়কে ঘুরতে থাকে। আর টার্গেট করে যাত্রী উঠিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে হাত-মুখ বেঁধে সাথে থাকা নগদ টাকা, মোবাইল ফোন ও মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিয়ে তাদের নির্জন স্থানে নামিয়ে দেয়। চক্রটি ঢাকার সাভার, টাঙ্গাইল ও গাজীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে একইভাবে ডাকাতি করে। ডাকাতদের নামে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এ ছাড়া বাসডাকাতির ঘটনার সাথে ডাকাতরা নিজেদের সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
অভিযোগ রয়েছে, ওই চিকিৎসক ডাকাতির ঘটনার পর বিভিন্ন থানায় ঘুরেছেন মামলা করতে। কিন্তু তিনি প্রথমে কোনো আইনি সহায়তা পাননি। ডাকাতির ঘটনার পর ভুক্তভোগী কিভাবে আইনি সহায়তা নিতে পারেন- এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান বলেন, বাসে ডাকাতির ক্ষেত্রে চলার পথ থেকে শুরু করে বাসটি যে এলাকা দিয়ে যাবে এবং বাসটি যে এলাকায় যাত্রা শেষ করবে সেসব এলাকার যেকোনো থানায় ভুক্তভোগীরা মামলা করতে পারবেন। এই ঘটনায় মামলা নেয়ার গড়িমসি সম্পর্কে আমরা জেনেছি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আমরা কথা বলেছি, ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে। যেকোনো ঘটনা ঘটলেই অভিযোগ করতে নিতে হবে। না হলে আমরা অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনতে পারব না। আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে বিষয়টি জেনে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেছি। এরপরই গ্রেফতারদের একাধিক ডাকাতির ঘটনায় বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। এ ছাড়া ওই চিকিৎসক রোববার উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা করে গেছেন। তিনি যেহেতু উত্তরা থেকে উঠেছেন, সে জন্য উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলাটি করেছেন। মামলা না হলে আমাদের জন্য ক্ষতিকর। যেসব থানা প্রাথমিকভাবে মামলা নিতে চায়নি, তারা হয়তো চিন্তা করেছে বাসটি কোথা থেকে এসেছে, কিভাবে গ্রেফতার করবে এসব বিষয়। তবে এটা ঠিক কাজ হয়নি। এ বিষয়ে সেসব থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি।