আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২২ ০৮:২৩ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪২৩ বার
বাংলাদেশের আরও কিছু সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে যুক্তরাষ্ট্রে জোর লবিং চালানো হচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন প্রভাবশালী মার্কিন কংগ্রেস সদস্য এবং পররাষ্ট্রবিষয়ক হাউস কমিটির চেয়ারম্যান গ্রেগরি ডব্লিউ মিকস। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভেতরে ও বাইরে থেকে একটি স্বার্থান্বেষী মহল এই লবিং চালাচ্ছে। কিন্তু কারা এই লবিং চালাচ্ছে- সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দেননি তিনি। তবে মিকস এই লবিংয়ের বিষয়ে তার দেশের কী অবস্থান, সেটি কিছুটা স্পষ্ট করেছেন।
কংগ্রেসম্যান মিকস বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে চায় না। ওয়াশিংটন ও ঢাকার মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক বিদ্যমান।
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঢাকায় আসা এক বার্তায় জানা যায়, সোমবার নিউইয়র্কের কুইন্স এলাকার একটি রেস্তারাঁয় তহবিল সংগ্রহের জন্য আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। মিকস বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে, আমরা (নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে) বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নই। আমরা এখনও বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের সঙ্গে কাজ করছি।’
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে যুগান্তরের সংবাদদাতা কৌশলী ইমা জানিয়েছেন, গ্রেগরি ডব্লিউ মিকস বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে চায় না যুক্তরাষ্ট্র। আমরা নিশ্চিত করে বলতে চাই যে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছি না। আমরা এখনো বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের সঙ্গে কাজ করছি। মিকস এও বলেন, বাংলাদেশ থেকে আসা আমেরিকার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নে তিনি আনন্দিত। বাংলাদেশের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছেন বলে উল্লেখ করেন মিকস।
বিশিষ্ট আইনজীবী মিকস ১৯৯৮ সাল থেকে নিউইয়র্ক থেকে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রতিনিধি এবং ২০২১ সাল থেকে হাউস অব কমিটি অন ফরেন অ্যাফেয়ার্সের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞাগুলো একটি সংস্থার কতিপয় ব্যক্তির ওপর আরোপ করা হয়েছে। পুরো সংস্থার ওপর নয়। আমরা সেখানকার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছি।’
বাংলাদেশের ভেতরে ও বাইরে থেকে একটি স্বার্থান্বেষী মহল তাদের দেশের আরও কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য জোরালোভাবে লবিং করছে জানিয়ে মিকস বলেন, ‘আমরা তাদের কথা অনুযায়ী কিছু করব না। আর এমনটা সম্ভবও নয় এবং আমরা সবকিছু ভালোভাবে যাচাই করে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।’
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও অন্যান্য ইস্যু প্রত্যক্ষ করতে তিনি এ বছর বাংলাদেশ সফর করবেন বলে জানান।
তিনি বলেন, ‘তবে তার আগে, আমি পররাষ্ট্র দপ্তর ও এশিয়া-প্যাসিফিক বিষয়ক কংগ্রেস সাব-কমিটির সঙ্গে কথা বলব। প্রয়োজনে বাংলাদেশ ইস্যু নিয়ে কংগ্রেসে আমরা একটি বিশেষ শুনানির আয়োজন করব।’
এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি রাজধানীর নয়াপল্টন প্রিতম জামান টাওয়ারে গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া র্যাবের বর্তমান ও সাবেক সাত কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গ টেনে বলেছিলেন, ‘এ নিষেধাজ্ঞাই শেষ নয়, দেশের ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আসছে।’ সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আরও নিষেধাজ্ঞা আসবে সে ব্যাপারে আপনারা নিশ্চিত থাকুন। এখন শুধু সরকার বিপদে নয়, দেশও বিপদে পড়ছে।’
রেজার এমন বক্তব্যের তিন দিনের মাথায় নিষেধাজ্ঞা দিতে যুক্তরাষ্ট্রে জোর লবিং চালানো হচ্ছে বলে সতর্ক করলেন দেশটির প্রভাবশালী কংগ্রেসম্যান মিকস।
উল্লেখ্য, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে গত ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে র্যাবের সাত বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা জানায় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট পৃথকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়।
এমন নিষেধাজ্ঞাকে ভিত্তিহীন ও সরকারবিরোধীদের চক্রান্ত উল্লেখ করে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা না করে এমন নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশিরা পছন্দ করেনি বলে ওয়াশিংটনকে জানিয়ে দেয় ঢাকা।
এদিকে এই নিষেধাজ্ঞার পরই বিএনপি ও জামায়াতের লবিস্ট নিয়োগের বিষয় সামনে আসে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র’ করতে বিএনপি-জামায়াত যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ করেছে।সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপি-জামায়াত আটটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছে বলে জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন।
তবে বিএনপির পক্ষ থেকে বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে। দলটি উল্টো সরকারের বিরুদ্ধে লবিস্ট নিয়োগের অভিযোগ তুলেছে। এই লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে এখন তোলপাড় চলছে দেশে-বিদেশে। যদিও সরকার বলেছে, লবিস্ট নয়- পিআর ফার্ম নিয়োগ করা হয়েছে দেশের কল্যাণের জন্য।