ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

বসনিয়ায় বৈধ বাংলাদেশী নির্মাণকর্মীদের নতুন সম্ভাবনা

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২২ ০৯:১০ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৩৯৫ বার


বসনিয়ায় বৈধ বাংলাদেশী নির্মাণকর্মীদের নতুন সম্ভাবনা

বসনিয়া-সার্বিয়া সীমান্তের জেভরনিকে নির্মাণকর্মী হিসেবে কাজ করছেন বেশ কয়েকজন বাংলাদেশী৷ বৈধ ভিসাতে এখানে কাজ করতে এসেছেন তারা৷

জার্মানি, ইটালি কিংবা হাঙ্গেরি–ভবিষ্যতে ইউরোপের অন্য কোনো দেশে যাওয়ার কথা ভাবছেন না নির্মাণকর্মীরা৷ বরং বসনিয়ায় থাকতে আগ্রহী বাংলাদেশী এই নির্মাণকর্মীরা৷ কেউ অন্য দেশে কাজ করে তারপর বসনিয়ায় এসেছেন৷ কেউ বা বাংলাদেশ থেকে এসেছেন কয়েক মাস আগে বসনিয়া থেকে ইউরোপের অন্য দেশে যেতে চান না তারা, থেকে যেতে চান এ দেশেই৷ নানা শহরে নির্মাণকর্মী হিসেবে কাজ করছেন বাংলাদেশীরা৷ পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে ওঠা বসনিয়া-সার্বিয়া সীমান্তের জেভরনিকে ১২তলা একটি বিল্ডিং বানাচ্ছেন বাংলাদেশী নির্মাণকর্মীরা৷

বসনিয়ায় অভিবাসীদের কথা তুলে ধরেছেন বাংলার প্রতিবেদকেরা৷ নির্মাণ সংস্থার তরফে এই কর্মীদের বৈধভাবে বসনিয়ায় নিয়ে আসতে সাহায্য করছেন মহিউদ্দীন তালুকদার মঈন৷ 

তিনি বলেন, ‘এখানে নির্মাণ কাজের জন্য দক্ষ লোক তেমনভাবে পাওয়া যায় না৷ বসনিয়ার তরুণেরাও অন্য দেশে চলে যাচ্ছে৷ এদিকে দক্ষিণ এশীয়রা অত্যন্ত পরিশ্রমী, দক্ষ৷ অভিজ্ঞ লোক চাইছে এই দেশও৷ সবমিলিয়ে কর্মসংস্থানের প্ল্যাটফর্ম তৈরি হচ্ছে এখানে৷’’

মহিউদ্দীন বলেন, ভবিষ্যতের কথা ভেবে বাংলাদেশের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি তৈরির চেষ্টা করছেন তিনি এখানে৷ অভিবাসী হিসেবে নন, বৈধ ভিসা নিয়ে এখানে আসা সম্ভব, জানান তিনি৷ এখন তার এই নির্মাণ প্রকল্পে ১০৪ জন কর্মীর চাহিদা রয়েছে৷ ১৮ জন বাংলাদেশী এখানে কাজ করতে এসেছেন৷ আরো ৫০ জন বাংলাদেশী নাগরিক ভিসার জন্য আবেদন জানিয়েছেন ইতিমধ্যে৷ তারা অপেক্ষা করছেন বৈধ ভিসার জন্য৷ বাংলাদেশ সরকারের কাছে এ বিষয়ে সাহায্যেরও আবেদন জানিয়েছেন তিনি বাংলার মাধ্যমে৷

তিন বছর আগে মহিউদ্দীনের সাহায্যে নোয়াখালি থেকে বসনিয়ায় এসেছিলেন সফিকুল ইসলাম৷ বৈধ ভিসায় এখানে রয়েছেন৷  

তিনি বলেন, ‘প্রতি মাসে ৪০ হাজার টাকা পাঠাতে পারি বাংলাদেশে৷ এখানে বসবাসের অভিজ্ঞতা বেশ ভাল৷ রান্নাবান্না করে নিজেরা খাওয়াদাওয়া করি৷ সংস্থাই ব্যবস্থাপনা করে আমাদের থাকা-খাওয়ার৷’’

বৈধভাবে বসনিয়ায় কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে৷ পাঁচ বছর থেকে গেলে বসনিয়ার নাগরিকত্ব পেয়ে যেতে পারেন, এমন কথাও বলেন সফিকুল৷ এক সময়ে তিনি শিক্ষকতা করতেন বাংলাদেশে৷ তিনি স্পষ্ট জানান, ‘অন্য দেশে যাওয়ার ইচ্ছে নেই৷ অবৈধভাবে কেন যাব? বৈধ উপায়ে এখানেই ভবিষ্যৎ গড়ব৷ সৌদি আরবে নির্মাণ কাজ করেছি৷ সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগাচ্ছি৷’’

নোয়াখালি থেকে চার মাস আগে নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করতে বসনিয়ায় এসেছিলেন নূর হুসেন হাজি৷ তিনি বিল্ডিংয়ে প্লাম্বিংয়ের কাজ করছেন৷ আবার রঙের কাজ, নির্মাণ কাজও করছেন৷ তার কথায়, ‘এ শহরের মানুষেরা মিশুক, সৎ৷ তারা যথেষ্ট সাহায্য করছেন আমাদের৷ প্রথমে অনিয়মিত অভিবাসী ভাবতেন৷ পরে তারা বুঝতে পেরেছেন আমরা কাজ করতে এসেছি৷ তাই এখন সবাই বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করেন৷’

সফিকুল, নূরের মতো অন্য দক্ষ কর্মীদের বসনিয়ায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত রিয়াজ হামিদুল্লার জরুরি ভূমিকা রয়েছে, জানান মহিউদ্দীন৷ বসনিয়ার শিক্ষা বিভাগে কর্মরত মীর হক এবং স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের সহায়তার কথাও বলেন তিনি৷

মহিউদ্দীন বলেন, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নির্মাণ কর্মীদের বিষয়টি দেখলে খুব ভাল হয়৷ কাগজ জমা দিলে অনেক ক্ষেত্রে দেরি হয়৷ শেখ হাসিনা স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ গড়ছেন, তাকে সমর্থন করি৷ দুবাই, মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার রয়েছে৷ আশা করি বলকান রুটেও এমন ইতিবাচক কিছু হবে৷ বাংলাদেশের মানুষ এখানে কাজ পাবেন৷’

বিল্ডিংয়ের ১০ তলায় পাইপ ফিল্টারের কাজ করছেন আরেক বাংলাদেশী মোহাম্মদ সেলিম মাতব্বর৷ মাস চারেক আগে ভিসা পেয়ে এসেছিলেন তিনি৷ এখন মাসে ৫২ হাজার টাকা মাসে রোজগার করেন৷ বাড়িতে ৪০ হাজার টাকা পাঠাতে পারেন৷ নিয়মিত বেতন পেলে বসনিয়া ছেড়ে অন্য কোনও দেশে যেতে চান না, জানান মোহাম্মদ৷

মহিউদ্দীন জানান, জেভরনিক শহরের অন্য পারে সার্বিয়ার গ্রাম৷ মাঝে শুধু একটা নদী রয়েছে৷ রাতে অনেক অভিবাসী সাঁতরে সীমান্ত পেরোনোর চেষ্টা করেন৷ তবে নির্মাণের কাজে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা রয়েছে, বৈধভাবে বসনিয়ায় আসা সম্ভব৷ বসনিয়ায় থাকতে আগ্রহী বাংলাদেশী নির্মাণকর্মীরাও৷

তার কথায়, পাঁচ বছর থাকলে বসনিয়ার নাগরিকত্ব পেয়ে যেতে পারেন নির্মাণকর্মীরা৷ মিলবে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতিও৷ তখন আইনিভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য সহ অন্য যে কোনো কাজও করতে পারবেন বাংলাদেশীরা৷ বাংলাদেশ সরকারের সাহায্য পেলে বলকান রুটের দেশগুলিতে কর্মসংস্থানের নতুন দিশা খুলে যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি৷

সূত্র : ডয়চে ভেলে


   আরও সংবাদ