ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ

হাঙ্গেরি মেডিকেলে সুযোগ ১৪ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক


প্রকাশ: ৩ মার্চ, ২০২২ ০৯:৫৮ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪৪২ বার


হাঙ্গেরি মেডিকেলে সুযোগ ১৪ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর

শুভজিত রক্ষিত এমবিবিএস পাশ করে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করতে পাড়ি দিয়েছিলেন ইউক্রেন। সেখানে গিয়ে উজরট ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়ার সীমান্তের কাছে ইউক্রেনের সুন্দর শহর উজরট। তিন বছরের স্নাতকোত্তর কোর্স। এক বছর সবে শেষ। শুরু হলো যুদ্ধ। রুশ বাহিনীর হামলা।

উজরটে পড়তে গিয়ে শুভজিতের মতো আরও ১৪ জন বাংলাদেশি মেডিকেল শিক্ষার্থী বিপাকে পড়েন। পাড়ি দেন হাঙ্গেরি। তাদের আশ্রয়স্থল হয় বিশ্বখ্যাত স্যামিলস ইউনিভার্সিটির ডরমেটরি। বুদাপেস্টের স্যামিলস কর্তৃপক্ষ বিপাকে পড়া বাংলাদেশি মেডিকেল শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ দেবে বলে আশ্বাস দেয়। তাদের ভর্তির বিষয়টি এখন প্রক্রিয়াধীন।

বুদাপেস্টে স্যামিলস বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শুভজিত বুধবার টেলিফোনে বলেন, ‘আমরা ভালো আছি। কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’ শুভজিতের বাড়ি শরীয়তপুর জেলায়। তিনি ইউক্রেনের পরিস্থিতির বর্ণনা করে বলেন, ইউক্রেনে মেডিকেল শিক্ষার মান ভালো। টিউশন ফি কম। তাই বৃত্তি নয়; আমি অন পেমেন্টে পোস্ট গ্রাজুয়েশন করতে গিয়েছিলাম। কেউ কেউ স্কলারশিপে গেছেন। আমার এক বছর হলো। কারও কারও দুই, তিন কিংবা চার বছর শেষ হয়েছে। এই সময়ে যুদ্ধ শুরু হলে আমরা পোল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করি। কিন্তু পোল্যান্ড সীমান্তে শরণার্থীদের দীর্ঘ সারি। ৭-৮ ঘণ্টা পর্যন্ত যানজট। কেউ কেউ ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত হেঁটে পোল্যান্ড সীমান্তে পৌঁছান। পোল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে আমাদের হাঙ্গেরি চলে যেতে বলা হয়। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আমরা হাঙ্গেরি পৌঁছলে অস্ট্রিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতায় রাজধানী বুদাপেস্টে স্যামিলস ইউনিভার্সিটিতে আশ্রয় দেওয়া হয়।

শুভজিত বলেন, ‘আমরা নিরাপদে আছি এটা লিখবেন, প্লিজ। এখানে আমাদের খাবার কিংবা অন্য কোনো কিছুর সমস্যা হচ্ছে না। আমাদের ভর্তির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। ইউক্রেনের ইউনিভার্সিটি থেকে ট্রান্সফারের বিষয় জড়িত আছে।’

রুশ হামলার কারণে ইউক্রেনে থাকা প্রায় দেড় হাজার বাংলাদেশির বেশিরভাগ পোল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছেন। পোল্যান্ডে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশির সংখ্যা চার শতাধিক। কেউ কেউ হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া, রুমানিয়ায় আশ্রয় নেন। হাঙ্গেরিতে বাংলাদেশের দূতাবাস নেই। অস্ট্রিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস হাঙ্গেরির বিষয় দেখাশোনা করে। অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা থেকে ডেপুটি চিফ অব মিশন রাহাত বিন জামানকে হাঙ্গেরি পাঠানো হয়েছে।

জানতে চাইলে রাহাত বিন জামান টেলিফোনে বলেন, ‘আমরা হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়ার সরকারকে চিঠি লিখেছি, তারা যেন ইউক্রেন থেকে আসা বাংলাদেশি শরণার্থীদের মানবিক কারণে আশ্রয় দেন। তারা এতে রাজি হয়েছেন। প্রথমে ১৫ জনের একটি দল এসেছে যাদের ১৪ জনই বাংলাদেশি মেডিকেল শিক্ষার্থী। তারা বুদাপেস্টে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আছেন। এছাড়া ইউক্রেনের গ্রিনকার্ড আছে এমন একটি বাংলাদেশি পরিবার সীমান্ত শহর জাহুনিতে আছেন। তারা বাংলাদেশে ফিরে যাবেন না। ইউক্রেনের পরিবেশ ভালো হলে সেখানেই যাবেন। রাহাত বলেন, মূল চাপ পোল্যান্ডে।

জানতে চাইলে অস্ট্রিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আব্দুল মুহিত ভিয়েনা থেকে টেলিফোনে জানান, হাঙ্গেরিতে ২৭ জন বাংলাদেশি শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ২১ জনই ছাত্র। একটি পরিবার এবং দুজন আছেন নাবিক। তিনি বলেন, হাঙ্গেরির সরকার ও স্যামুলস ইউনিভার্সিটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে বাংলাদেশের ১৪ জন মেডিকেল শিক্ষার্থীকে ভর্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছি। স্যামুলস বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ করতে পেরে খুশি হয়েছি। রাষ্ট্রদূত বলেন, এখনো আলাপ-আলোচনা চলছে। যারা ইউক্রেনে যেভাবে অধ্যয়ন করেছেন; হাঙ্গেরিতেও একইভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবেন। বিশেষ করে যারা বৃত্তি নিয়ে পড়ছিলেন; তাদের জন্য বৃত্তি মঞ্জুর করতে রাজি হয়েছে স্যামুলস।


   আরও সংবাদ