আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ৪ মার্চ, ২০২২ ০৯:৩৩ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪০২ বার
উন্নয়ন প্রকল্পের গোড়ায় গলদ থেকে যাচ্ছে। মানা হচ্ছে না গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা। নানা ফাঁকফোকর আর ত্রুটি রেখেই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। প্রাক্কলিত দর নির্ধারণেও থাকে বিস্তর গরমিল।
উন্নয়ন প্রকল্পের গোড়ায় গলদ থেকে যাচ্ছে। মানা হচ্ছে না গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা। নানা ফাঁকফোকর আর ত্রুটি রেখেই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। প্রাক্কলিত দর নির্ধারণেও থাকে বিস্তর গরমিল।
এসব কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে এ রকম ২৬ ধরনের চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। বুধবার এ বিভাগের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন চিত্র।
চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে প্রকল্প তৈরি ও অনুমোদন পর্যায়ের রয়েছে ৯টি, প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যায়ে ১৩টি এবং ৪টি চ্যালেঞ্জ রয়েছে বাস্তবায়ন পরবর্তী পর্যায়ে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর ফলে প্রকল্পের ব্যয় ও সময় দুটোই বাড়ছে। এছাড়া কাঙ্ক্ষিত বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক সময় পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকলেও তা খরচ করা যাচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইএমইডির সাবেক সচিব আবুল মনসুর মো. ফয়জুল্লাহ বুধবার যুগান্তরকে বলেন, ‘প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই যদি ঠিকমতো না হয়, তাহলে সেই ভুলের মাশুল পুরো প্রকল্পের পুরো সময়জুড়ে বহন করতে হয়। তাই এ কাজটি অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে এবং তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রকল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিবিড় তদারিক রাখতে হবে। তাহলে অনেক জটিলতা এড়ানো যাবে।’
এদিকে এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। প্রতিটি চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করে তা থেকে বেরিয়ে আসতে প্রতিবেদনের ছকে গাইড লাইন দেওয়া হয়েছে।
চ্যালেঞ্জগুলো : প্রথম ধাপে প্রকল্প তৈরি ও অনুমোদন পর্যায়ে ৯টি চ্যালেঞ্জ হলো- ১) অধিকাংশ ক্ষেত্রে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও সুবিধাভোগীদের মতামত বিশ্লেষণ না করেই প্রকল্প হাতে নেওয়া। ২) প্রকল্প দলিল বা ডিপিপি অনেক ত্রুটিপূর্ণ থাকে। বিশেষ করে আনুষঙ্গিক তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রে বাস্তবতার মিল থাকে না।
৩) ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রকল্প নেওয়ার আগেই সম্ভাব্য ভূমি চিহ্নিত করে জেলা প্রশাসকদের সম্মতি নেওয়া হয় না। ৪) প্রকল্পের আওতায় নির্মিতব্য স্থাপনা পরে রক্ষণাবেক্ষণ, সংস্কার, ব্যবস্থাপনা ও পুনর্ব্যবহার কিভাবে হবে সেসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা থাকে না। ৫) মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোর (এমটিবিএফ) আর্থিক সীমা না মেনেই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ৬) প্রকল্প কিভাবে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত যথাযথভাবে টেকসই হবে সেই পরিকল্পনা বা শর্তসমূহ অনেক সময় থাকে না।
৭) প্রকল্প গ্রহণে আঞ্চলিক বৈষম্য বিবেচনায় না নেওয়া। ৮) কাজ শুরু করার পর মহল বিশেষকে সুবিধা দিতে প্রকল্পের ভৌত কাজের ডিজাইন পরিবর্তন করা, অর্থাৎ ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশ করে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা ডিজাইন পরিবর্তন করেন। ৯) বৈদেশিক অর্থায়ন নিশ্চিত না করে বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া।
প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যায়ে ১৩টি চ্যালেঞ্জের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) ও টিপিপির (কারিগরি প্রকল্প প্রস্তাব) কর্ম ও ক্রয় পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন না করা। এছাড়া মাঠপর্যায়ে প্রকল্প তৈরি ও বাস্তবায়নের বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা।
প্রকল্পের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব। নিয়মিত পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) এবং স্টিয়ারিং কমিটির সভা আয়োজন না করা। এছাড়া কেনাকাটা কার্যক্রম প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা প্রভৃতি।
প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষ হওয়ার পরের চ্যালেঞ্জগুলো হলো-প্রকল্প শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে পিসিআর (প্রকল্প সমাপ্ত প্রতিবেদন) আইএমইডিতে না দেওয়া। সেইসঙ্গে পিসিআর তৈরিতে নির্দিষ্ট ছক অনুসরণ না করা। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়িত কার্যক্রম প্রকল্প শেষে পরিচালনার জন্য রাজস্ব বাজেটের অপ্রতুলতা।
প্রকল্পের আওতায় তৈরি অবকাঠামো এবং যন্ত্রপাতি প্রকল্প শেষে সংরক্ষণ বা রক্ষণাবেক্ষণ না করা। সংস্থায় দক্ষ জনবল না থাকায় প্রকল্প শেষে প্রায় বিদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সেবা ক্রয় চুক্তি করতে হয়। এরফলে সরকারি অর্থের অপচয় হয়।