ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ৫ মার্চ, ২০২২ ০৯:৩১ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪২৭ বার
আইনজীবীদের শীর্ষ সংগঠন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২২-২৩ সালের নির্বাচন আগামী ১৫ ও ১৬ মার্চ। এ নির্বাচনে সরকার ও বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের মধ্যেই মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। তবে এবারের নির্বাচনে দুই শিবিরেই অনৈক্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিনে দেখা গেছে, সরকার সমর্থক বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের (সাদা প্যানেল) মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হয়ে সভাপতি ও সম্পাদক পদে দু’জন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
অন্যদিকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলে (নীল প্যানেল) বিএনপির শরিক জামায়াতে ইসলামীর সাথে সমঝোতা না হওয়ায় বিএনপি সমর্থক নীল প্যানেলে থেকে সব পদে প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আর জামায়াতে ইসলামী সমর্থক আইনজীবীরাও পৃথকভাবে দু’টি পদে (সহ-সভাপতি ও সহ-সম্পাদক) মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এবারের নির্বাচনে সভাপতি পদে বিএনপি সমর্থক নীল প্যানেল থেকে সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার মো: বদরুদ্দোজা (বাদল), আর সরকার সমর্থক সাদা প্যানেল থেকে এ পদে সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ও সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো: মোমতজ উদ্দিন ফকির মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
এ ছাড়া সভাপতি পদে সমিতির সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার এম আমির-উল ইসলামের মেয়ে ব্যারিস্টার তানিয়া আমীরও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তিনি আওয়ামী সমর্থিত সাদা প্যানেল থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন।
এ ছাড়া সম্পাদক পদে নীল প্যানেল থেকে সমিতির বর্তমান সম্পাদক ব্যারিস্টার মো: রুহুল কুদ্দুস (কাজল) মনোনায়নপত্র জমা দিয়েছেন। সরকার সমর্থক সাদা প্যানেল থেকে এ পদে মো: আবদুন নুর দুলাল মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এ ছাড়া এ পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। তিনি যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের স্ত্রী। তিনি আওয়ামী সমর্থিত সাদা প্যানেল থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। অ্যাডভোকেট যুথি মনোনয়ন বোর্ডের কাছে অভিযোগ করেছেন ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তার নাম সম্পাদক প্রার্থীর তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।
এ ছাড়া বিএনপি সমর্থক নীল প্যানেল থেকে সহ-সভাপতি পদে মনির হোসেন ও মো: আসরারুল হক, কোষাধ্যক্ষ পদে মোহাম্মদ কামাল হোসেন, সহ-সম্পাদক পদে মাহফুজ বিন ইউসুফ ও মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
অপর দিকে সরকার সমর্থক সাদা প্যানেল থেকে সহ-সভাপতি পদে মোহাম্মদ হোসেন ও মো: শহীদুল ইসলাম। সহ-সম্পাদক পদে মো: হারুনুর রশিদ ও এ বি এম হামিদুল মিসবাহ, কোষাধ্যক্ষ পদে মো: ইকবাল করিম মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
আর জামায়াতে ইসলামী সমর্থক আইনজীবীরা দু’টি পদে প্রার্থী দিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার তারা সহ-সভাপতি পদে মইনউদ্দিন ফারুকী এবং সহ-সম্পাদক পদে মোহাম্মদ আবদুল করিম মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
নির্বাচন পরিচালনায় সিনিয়র অ্যাডভোকেট এ ওয়াই মশিউজ্জামানের নেতৃত্বে সাত সদস্যের নির্বাচন উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। এবার সভাপতি পদে চারজন, দু’টি সহ-সভাপতি পদে বিপরীতে পাঁচজন, সম্পাদক পদে তিনজন, কোষাধ্যক্ষ পদে দুজন, দু’টি সহ-সম্পাদক পদে ছয়জন এবং সাতটি কার্যকরী কমিটির সদস্য পদে বিপরীতে ১৪জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
এর আগে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২১-২২ সেশনের নির্বাচনে সভাপতি পদে জয় পেয়েছিল সরকার সমর্থক সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ। অপর দিকে সম্পাদক পদে জয় পেয়েছিল বিএনপি সমর্থক জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল।
সুপ্রিম কোর্ট বারের বর্তমান সভাপতি কে : সাবেক ৪ সভাপতির চিঠি
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বর্তমান সভাপতি কে? তা জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছেন সংগঠনটির সাবেক চার সভাপতি। তারা হলেন, প্রবীণ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, ব্যারিস্টার রোকন-উদ্দিন মাহমুদ ও ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন। সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটিকে পাঠানো চিঠিতে তারা এ প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়েছেন।
চিঠিতে বলা হয়, সমিতির সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী আবদুল মতিন খসরু গত বছরের ১৪ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। সভাপতি হিসেবে তার মেয়াদ ছিল গত বছরের ১ এপ্রিল থেকে চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত। এ অবস্থায় সমিতির সভাপতি কে? অপর দু’টি প্রশ্ন হচ্ছে, অযোগ্যদের নাম কেন ২০২২-২৩ নির্বাচনে ভোটার তালিকায় এসেছে। আসছে নির্বাচনে সদস্যদের ভোট ডিজিটাল পদ্ধতিতে গণনার ম্যান্ডেট (ক্ষমতা) কীভাবে এলো।
বৃহস্পতিবার চার শীর্ষ আইনজীবীর চিঠি পাওয়ার বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, চিঠির বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
চিঠিতে সমিতির বেআইনি এবং গঠনতন্ত্র পরিপন্থী কার্যক্রম সংক্রান্ত বিষয়গুলো সংশোধনের জন্য দ্রুত একটি অ্যাডহক কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন সিনিয়র আইনজীবীরা। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে অবৈধ ভোটারমুক্ত ভোটার তালিকা তৈরির প্রস্তাবও রয়েছে তাদের চিঠিতে। চিঠিতে বলা হয়েছে, সভাপতি হিসেবে জয়ী হওয়ার পর গত বছর ১৪ এপ্রিল আবদুল মতিন খসরু মৃত্যুবরণ করলে সভাপতি পদে একটি শূন্যতা তৈরি হয়। কিন্তু এরপর থেকে এখন পর্যন্ত সমিতির বর্তমান কমিটিতে কোনো সভাপতিকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়নি। তারা বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিশেষ সাধারণ সভায় ‘নির্বাচন’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ শূন্যতা পূরণ করা উচিত ছিল। অথচ এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো নির্বাচন আমরা দেখিনি।