ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ৬ মার্চ, ২০২২ ১০:২৯ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৬১০ বার
গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছে ভোজ্যতেল, ভোজ্যতেল রিফাইনারি ও মধ্যস্বত্বভোগীদের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন। এছাড়া বিদেশ থেকে আমদানি, দেশের ভেতর উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি গোপনে অনুসন্ধান হচ্ছে অবৈধ মজুতের বিরুদ্ধে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এ কার্যক্রম শুরু করেছে সরকারের এজেন্সিগুলো। আর জেলা পর্যায়ে সব ডিসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বাজার মনিটরিংয়ের। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
সূত্র আরও জানায়, দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এরই মধ্যে বাণিজ্যমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বাজারে পণ্যের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার জন্য এ নির্দেশ দেওয়া হয়। আর প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশ এরই মধ্যে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে দেশের শীর্ষ পর্যায়ে ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ী ও উৎপাদনকারীদের কাছে। তাদের মন্ত্রণালয়ে ডেকে প্রধানমন্ত্রীর বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা ভোজ্যতেল নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে মধ্যস্বত্বভোগীরা কোন কোন পর্যায়ে গোপনে ভোজ্যতেল মজুত করছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে যুদ্ধের প্রভাবে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছে। আগামীতে আরও বাড়বে তাই বেশি মুনাফার আশায় অবৈধ মজুত করা হচ্ছে। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি নিজেও সম্প্রতি দ্রব্যমূল্য নিয়ে মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে সংবাদিকদের বলেছেন, ভোজ্যতেল অবৈধ মজুত করছে মধ্যস্বত্বভোগী পর্যায়ে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিরতা নিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে সরকারের এজেন্সি ও ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরকে সঙ্গে নিয়ে কাজ শুরু করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। বিশেষ করে ভোজ্যতেল কেনার পর রিফাইনারি থেকে ডিলারদের কাছে ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) দেওয়া হয়। সেখান থেকে ডিও আসছে পাইকারি বাজারে। কোন পর্যায়ে এসব মূল্য বাড়ানো হয়েছে সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এছাড়া অবৈধ মজুতধারীদের খুঁজে বের করতে সরকারের এজেন্সিগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার যাত্রাবাড়ীর শহীদ ফারুক রোডে অবস্থিত আবুল খায়ের ট্রেডিংয়ের অবৈধ ভোজ্যতেল মজুতের ২২ হাজার লিটার উদ্ধার করা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরকে সঙ্গে নিয়ে এ অভিযান চালানো হয়। অবৈধ মজুত ভোজ্যতেল উদ্ধারের পর প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নগদ জরিমানা করা হয়েছে ২ লাখ টাকা।
অভিযান পরিচালনার সঙ্গে জড়িত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ যুগান্তরকে বলেন, এ ধরনের অভিযান আগামীতে আরও চলবে। যারা ভোজ্যতেলের অবৈধ মজুত গড়ে তুলছে, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ভোক্তাদের কষ্ট দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে রাজধানীর কাওরান বাজারে অভিযান চালিয়ে এক দোকানির গুদামে অবৈধ ভোজ্যতেল মজুত উদ্ধার করেছে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর। ওই দোকানে সিলগালা করে শুনানির জন্য অধিদপ্তরে ডাকা হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য উইং প্রধান অতিরিক্ত সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান জানান, ভোজ্যতেলের বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বৃহস্পতিবার সব রিফাইনারিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেখানে গত তিন মাসে আমদানির পরিমাণ, রিফাইন করে বাজার সরবরাহ কতটুকু করা হয়েছে সে তথ্য চাওয়া হয়েছে। এছাড়া সরবরাহ পর্যায়ে সমস্যা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, ভোজ্যতেলের মূল্য বৃদ্ধির কোনো কারণ নেই। বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়বে আরও দুই মাস পরে। রোজাকে সামনে রেখে সরবরাহ চেইনে অসাধু ব্যবসায়ীরা অস্থিরতা তৈরি করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আশা করছি ভোজ্যতেলের বাজারে সম্প্রতি যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং সরবরাহ চেইনে সমস্যা তৈরি হয়েছে তাদের আইনের আশ্রয় নিয়ে বাজার স্বাভাবিক করতে পারব।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের আমদানি তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত অর্থবছরে বিদেশ থেকে ভোজ্যতেল আমদানি কম করেছে রিফাইনারিরা। ২০২০-২১ অর্থবছরে আগের বছরের তুলনায় ভোজ্যতেল আমদানি কম হয়েছে ২ লাখ ১৭ হাজার ১২২ টন। এরমধ্যে পামওয়েল ১ লাখ ২৭ হাজার ৪৭৬ টন এবং সয়াবিন ৪৩ হাজার ৬৪৬ টন। পাশাপাশি ভোজ্যতেল আমদানির এলসি খোলাও কম হয়েছে। এলসি খোলা কমের পরিমাণ হচ্ছে ১ লাখ ২২ হাজার ১২৪ টন। এরমধ্যে সয়াবিন ৬৪ হাজার ৯৮১ টন এবং পামওয়েল ৫৭ হাজার ১৪৩ টন।
মূলত ওমিক্রন ও করোনার প্রভাবে এ আমদানি কম হয়েছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ। যে কারণে বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছে। একদিকে আমদানি কম ও অন্য দিকে বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধি এসব সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা ভোজ্যতেলের বাজার অস্থির করে তুলেছে। টিসিবির হিসাবে শনিবার এক লিটার লুজ সয়াবিনের মূল্য দেখানো হয়েছে ১৬৫ টাকা থেকে ১৭০ টাকা এবং লুজ পামওয়েল ১৫৫ থেকে ১৫৮ টাকা। কিন্তু সাধারণভাবে বাজারে ২শ টাকা লিটার এবং কোথাও কোথাও এরচেয়ে বেশি আদায় করা হচ্ছে। অনেক স্থানে লুজ তেল সাধারণ ক্রেতার কাছে কম বিক্রি করা হচ্ছে। কারণ বিভিন্ন বেকারি শিল্পসহ অন্যান্য শিল্পে বেশি পরিমাণে একসঙ্গে বিক্রির আশায় এ অসাধু পথ অবলম্বন করছেন ব্যবসায়ীরা