ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৬ মার্চ, ২০২২ ১৭:৩৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫৪৪ বার
ইউক্রেনের যুদ্ধে রাশিয়ার সেনাবাহিনী কি তাদের পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে শুরু করেছে? হয়তো ইউক্রেন নিয়ে মস্কোর যে উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল, সেখানেও কাটছাঁট করতে হচ্ছে।
হয়তো এখনো পুরোপুরি নিশ্চিতভাবে সেটা বলার সময় আসেনি। কিন্তু সেখানে কর্মকাণ্ডে একটা পরিবর্তন যে ঘটছে, সেটা বোঝা যাচ্ছে।
রাশিয়ার একজন শীর্ষ জেনারেল সের্গেই রুদস্কই বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন 'বিশেষ সামরিক অভিযান' শুরু করার ঘোষণা দিয়েছিলেন, তার 'প্রথম ধাপ' বেশিরভাগই সম্পন্ন হয়েছে। এখন রাশিয়ার সেনাবাহিনী ডনবাস অঞ্চলের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করার প্রতি জোর দেবে।
এর মানে হলো, এমন একটি পৃথক রেখা তৈরি করা, যার মাধ্যমে পূর্বে ইউক্রেন সরকার-নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে পূর্বে রাশিয়া-সমর্থিত বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক এলাকাকে আলাদা করে রাখবে।
ইউক্রেনের অন্যান্য এলাকায় রাশিয়ান বাহিনীর গতি স্থবির হয়ে পড়েছে। কিয়েভের চারদিকের অবস্থানগুলো থেকে হটিয়ে দেয়া হয়েছে রাশিয়ান বাহিনীকে। সেখানে তারা ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে অথবা প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান তৈরি করার চেষ্টা করছে।
রাশিয়া কিয়েভ দখলের আশা ছেড়ে দিয়েছে, সেটা হয়তো এখনি বলা যাবে না। কিন্তু পশ্চিমা কূটনীতিকরা বলছেন, সব জায়গাতেই রাশিয়ার সৈন্যরা একের পর এক আঘাতের মুখোমুখি হচ্ছে।
পশ্চিমা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুক্রবার রাশিয়ার আরও একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশটির সাতজন জেনারেল পদমর্যাদার কর্মকর্তা নিহত হলেন। ফলে দেশটির অনেক ইউনিটের মনোবল একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।
তারা মনে করছেন, জেনারেল সের্গেই রুদস্কই যে ঘোষণা দিয়েছেন, তাতে পরিষ্কার যে, মস্কো উপলব্ধি করতে শুরু করেছে, ইউক্রেনে তাদের উচ্ছাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে।
একজন কর্মকর্তা বলেছেন, 'রাশিয়া বুঝতে শুরু করেছে যে, একই সাথে অনেক দিকে চালানো তাদের এই অভিযান সফল হবে না।'
রাশিয়ায় ১০টির মতো নতুন কৌশলগত ব্যাটেলিয়ন গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে। সেগুলো এখন ডনবাসের পথে রয়েছে।
গত মাসে যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেও এই কর্মকর্তারা ভয় পাচ্ছিলেন যে, রাশিয়ার সৈন্যরা হয়তো এমন কৌশল নেবে, যার মাধ্যমে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাথে যেখানে ইউক্রেনের সৈন্যরা যুদ্ধ করছে, সেখানে মোতায়েন ইউক্রেনের সেরা ইউনিটগুলোকে ঘিরে ফেলবে রাশিয়ার সৈন্যরা । কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি।
দোনেৎস্ক এবং লুহানস্কের যেসব এলাকায় দখল বাকি রয়েছে, সেখানে হয়তো রাশিয়ার সৈন্যদের নতুন করে অভিযান চালাতে দেখা যাবে। যার ফলে তারা খারকিভ এবং ইজিয়ামের দিকে থাকা বাহিনীগুলোর সাথে সংযোগ স্থাপন করতে পারবে।
রাশিয়া যদি শেষ পর্যন্ত আযভ সমুদ্রের পাশে মারিউপোলের সমুদ্র বন্দর দখল করে নিতে পারে, তাহলে তাদের অন্য বাহিনীগুলো সহজে উত্তরের দিকে অগ্রসর হতে পারবে। তখন হয়তো তার ইউক্রেনের বাহিনীগুলোকে ঘিরে ফেলতে পারবে। তবে তাদের এই লক্ষ্যগুলোর অনেকগুলো এখন আর পূরণ করা সম্ভব নয় বলে মনে হচ্ছে।
মারিউপোলে যারা প্রতিরক্ষা যুদ্ধ করছেন, তারা শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। হামলা করার সময় রাশিয়ার আরেকটা লক্ষ্য ছিল যে, এই এলাকা দখল করে নিয়ে ক্রাইমিয়ার সাথে ডনবাস এলাকার একটি সংযোগ স্থাপন করা।
তবে মস্কো এখন হয়তো ভাবতে শুরু করতে পারে যে, তারা বরং একেকটা এলাকা এক এক করে দখল করবে। কিন্তু সেটা করতে হলে তাদের অস্ত্র বা গোলাবারুদের ওপর বেশি নির্ভর করতে হবে, বিশেষ করে বিমান বাহিনীর ওপরে।
'আমার বিশ্বাস, পশ্চিমা দেশগুলোর সরবরাহ করা অস্ত্রপাতি ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সামর্থ্যে বড় ধরনের পরিবর্তন এনে দেবে,'-বলেছেন একজন পশ্চিমা কর্মকর্তা।
সুতরাং সামনের দিনগুলোত ডনবাসের প্রতি মস্কোর বিশেষ গুরুত্ব দেখা গেলেও, রাশিয়া তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা ত্যাগ করেছে, সেটা বলা যাবে না।
'পুরো হামলা পরিকল্পনার আমূল পরিবর্তন দেখা যাবে না,' বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের একজন জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা।
সূত্র : বিবিসি