আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ৩ এপ্রিল, ২০২২ ১৯:০৮ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪৬২ বার
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের অনুরোধের পর দেশটির পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভি। এর আগে পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ হয়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে ইমরান খানই থাকছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এবং আগামী ৯০ দিনের মধ্যে দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বিবিসি উর্দু ভার্সন এ খবর জানিয়েছে।
অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ হওয়ার পরই প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দিয়ে নির্বাচন দেয়ার জন্য প্রেসিডেন্টের কাছে অনুরোধ জানান। তার পরপরই প্রেসিডেন্ট এ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
নিয়ম অনুযায়ী নব্বই দিনের মধ্যে দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন হবে। এ সময়ে অবশ্য ইমরান খানই প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন। তবে বিলুপ্ত হয়ে যাবে মন্ত্রিসভা।
রোববারই পাকিস্তানের পার্লামেন্টে ইমরান খানের সরকারের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবে ভোটাভুটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রস্তাবটি খারিজ হয়ে যায়।
পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পিকার ওই প্রস্তাবের বিষয়ে ভোটাভুটি করতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বিরোধীদের আনা প্রস্তাবটিকে অসাংবিধানিক বলে আখ্যায়িত করেন।
কয়েকদিনের ঘটনাবহুল পাকিস্তানে পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য বিরোধীদের পক্ষে চলে যায় বলে জানা যাচ্ছিল। ধারণা করা হচ্ছিল, অনাস্থা প্রস্তাবে বেশিরভাগ সদস্য ভোট দেবেন এবং ইমরান খান তাতে হেরে যাবেন।
ইমরান খান অভিযোগ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে তাকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বিবিসির সংবাদদাতা সেকেন্দার কেরমানি বলেছেন, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সহায়তায় ইমরান খান ক্ষমতায় এসেছিলেন বলে মনে করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি সেই সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে বলে পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছেন। তার রাজনৈতিক বিরোধীরা সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে। তার জোট সরকারের বেশ কয়েকজন সহযোগী প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়ে বিরোধীদের দলে যোগ দেন।
এ অবস্থায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সম্ভবত তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন। অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে খানকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে অপসারণের প্রচেষ্টা চালায় পাকিস্তানের বেশ কিছু বিরোধী দল।
গত ২৮শে মার্চ পাকিস্তানের পার্লামেন্টে ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করে বিরোধী দলের নেতারা।
গত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেকটা ঝড় বয়ে গেছে, যার ধারাবাহিকতায় ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টির (পিটিআই) বেশ কয়েকজন সদস্য দলত্যাগ করেন। ফলে বিরোধী শিবির বেশ ভারী হয়ে উঠে।
পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতে হলে ইমরান খানকে অন্তত ১৭২ জন এমপির সমর্থন পেতে হবে। এর মধ্যে তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের আসন সংখ্যা ১৫৫, তার সাথে আরো আছে তার কোয়ালিশন অংশীদারদের সমর্থন।
পরিষদে মোট আসনসংখ্যা ৩৪২টি। অন্যদিকে নওয়াজ শরিফের মুসলিম লিগসহ পাকিস্তানের বিরোধীদলগুলোর মোট আসনসংখ্যা হচ্ছে ১৬৩।
পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী, পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের স্পিকারকে অনাস্থা প্রস্তাব পাবার ১৪ দিনের মধ্যে অধিবেশন আহ্বান করতে হয়। এই ১৪ দিনের সময়সীমা শেষ হচ্ছে সোমবার।
তবে সেদিন ওআইসির সম্মেলন থাকায় ভোটাভুটির আলোচনা পিছিয়ে দেয়া হয়। এ কয়দিনে ঘটে যায় অনেক নাটকীয় ঘটনা।
অবশেষে নির্ধারিত দিনে আজ রোববার পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব নাকচ হয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। অনাস্থা প্রস্তাবে ভোটাভুটির পরিবর্তে এখন আগামী ৯০ দিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় ভোট। সেখানেই নির্ধারিত হবে পরবর্তী ধাপে কারা পাকিস্তানের ক্ষমতার মসনদে আসছে।
সূত্র : বিবিসি