ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

মুহুরি সেচ প্রকল্প : পরামর্শকেই ১১৪ কোটি তবুও প্রকল্প ঢিমেতালে

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ৬ এপ্রিল, ২০২২ ১২:০০ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫০৬ বার


মুহুরি সেচ প্রকল্প : পরামর্শকেই ১১৪ কোটি তবুও প্রকল্প ঢিমেতালে

নদীমাতৃক এই দেশে স্বাধীনতার ৫০ বছরেও সেচবিশেষজ্ঞ তৈরি হয়নি। খাল পুনঃখনন বা সেচ আধুনিকায়নের জন্য ১১৪ কোটি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। প্রকল্পে কাজের জন্য যে পরিমাণ জনবল নেয়া হয়েছে তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি হয়েছে দেশী-বিদেশী পরামর্শক। পাঁচ বছরের জন্য গ্রহণ করা এই সেচপ্রকল্পটি এখন ৯ বছরে উন্নীত হয়েছে। আর সাত বছরে তার অগ্রগতি মাত্র ৬০ শতাংশ। আর প্রকল্পে প্রতি কিলোমিটার খাল পুনঃখননে খরচ ৯৫ লাখ ৫৮ হাজার টাকা বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন বৃহদাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্পগুলোর জন্য উন্নতর ব্যবস্থাপনা প্রণয়নের উদ্দেশ্যে একটি সমীক্ষা ২০০৯ সালের নভেম্বর থেকে ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হয়। সমীক্ষায় মুহুরী সেচপ্রকল্পের জন্য বিশেষায়িত ব্যবস্থাপনা ইউনিট (এসএমইউ) সম্বলিত একটি উন্নত ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়। পরে ২০১২ সালে এডিবির অর্থায়নে প্রকল্প এলাকায় আরো একটি সমীক্ষা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ওই সমীক্ষা প্রকল্পদ্বয়ের সুপারিশের ভিত্তিতে মুহুরী সেচপ্রকল্পে বৈদ্যুতিক পাম্পের সাহায্যে প্রিপেইড মিটার ব্যবস্থায় ভূগর্ভস্থ পাইপলাইন দিয়ে খাল থেকে সেচের পানি সরবরাহ পদ্ধতি চালুকরণের মাধ্যমে মুহুরী সেচপ্রকল্প আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচপ্রকল্প (জিকে) এবং তিস্তা সেচপ্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা যাচাইয়ের নিমিত্তে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।


 
প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো, মুহুরী সেচপ্রকল্পের আধুনিকায়নসহ সুবিধাভোগীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করা। ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করে জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য দূরীকরণের ব্যবস্থা করা। বন্যা প্রতিরোধের মাধ্যমে বিদ্যমান পানিসম্পদের কার্যকর ব্যবহার। কৃষকের আয় বৃদ্ধি ও উন্নত জীবনমান নিশ্চিত করা এবং গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচপ্রকল্প (জিকে) এবং তিস্তা প্রকল্প আধুনিকায়নের নিমিত্তে বিস্তারিত সমীক্ষা পরিচালনা করা।

পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ২০১৪ সালে নেয়া এই প্রকল্পটির অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৪৫৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। ২০১৯ সালের জুনে প্রকল্পটি সমাপ্ত করার থাকলেও তা পারেনি বাস্তবায়নকারী সংস্থা পানি উন্নয়ন বোর্ড। খরচ ও মেয়াদ বাড়িয়ে প্রকল্পটি ৪৬৭ কোটি ১০ লাখ টাকায় এবং বাস্তবায়নকাল ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। তাতেও প্রকল্পের কোনো আশানুরূপ অগ্রগতি নেই। খরচ আরো বাড়িয়ে ৫৮০ কোটি ১৪ লাখ টাকা করে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত অনুমোদন দেয় ২০১৯ সালের ২১ নভেম্বর একনেকে। বিধি বাম, পাঁচ বছরের প্রকল্পের অগ্রগতি সাত বছরে মাত্র ৬০ শতাংশ। অর্থাৎ বছরে গড়ে বাস্তবায়ন হার ৮.৫৮ শতাংশ। আর ব্যয় হয়েছে ৫০ শতাংশ অর্থ। বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ এর প্রভাব, প্রকল্প এলাকার বাস্তব অবস্থা, বৈদ্যুতিক সরবরাহ লাইনের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের গাইডলাইন পরিবর্তন এবং প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ আরো এক বছর বৃদ্ধির জন্য প্রকল্পটি তৃতীয় দফায় সংশোধন করা হয়। এখন মেয়াদ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। পাঁচ বছরে যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার কথা ছিল, সেটি এখন ৯ বছর লাগছে। ব্যয় কমিয়ে ৫৬২ কোটি ৬৯ লাখ টাকায় আনা হয়েছে।


 
চলমান এই প্রকল্পের কাজগুলো হলো, ১৭.৭৫ কিলোমিটার উপকূলীয় বাঁধ পুনর্বাসন, ৩৭৩ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন, চারটি বিদ্যমান স্লুইচ গেটের পুনর্বাসন, দুইটি নতুন স্লুইচ গেট নির্মাণ, তিনটি পানি নিষ্কাশন অবকাঠামো পুনর্বাসন, অবকাঠামো নির্মাণ, ১৮ হাজার হেক্টর ফার্মার ক্যানেল সিস্টেম। ৮৬০টি প্রিপেইড মিটার স্থাপন, একটি সাবস্টেশনসহ ২৮৩ কিলোমিটার বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং দুই ধরনের দেশী-বিদেশী পরামর্শক সেবা ক্রয়।
ব্যয়ের হিসাব থেকে জানা যায়, প্রকল্পে পরামর্শক সেবা খাতে খরচ বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ১১৪ কোটি ২৪ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ও ডিজাইন পরামর্শকে ব্যয় ৫৬ কোটি ৩২ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। এখানে আন্তর্জাতিক পরামর্শক হলো ৬৮ জনমাস এবং দেশীয় পরামর্শক ৬৬০ জনমাস। আর ইরিগেশন ব্যবস্থাপনা পরিচালনায় ৫৭ কোটি ৯১ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। এখানে বিদেশী পরামর্শক ৪২ জনমাস এবং দেশীয় পরামর্শক ২ হাজার ১৬০ জনমাস। সব মিলে মোট পরামর্শক হলো ২ হাজার ৮৩৮ জনমাস। গত সাত বছরে পরামর্শক খাতে ব্যয় হয়েছে মোট ৮৩ কোটি টাকা।

প্রকল্পে ট্রেনিং, কর্মশালা ও এক্সটেনশন কাজের জন্য খরচ ধরা হয়েছে ৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে স্থানীয় পর্যায়ে ২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক পর্যায়ে ৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। কোভিডের মধ্যেও সাত বছরে এই দুই খাতে খরচ হয়েছে প্রায় ৩ কোটি টাকা।


 
পাউবো বলছে, প্রকল্পের আওতায় ৯টি প্যাকেজে কাজের মধ্যে ইতোমধ্যে পাঁচটি প্যাকেজের কাজ বাস্তবায়ন হয়েছে। বাস্তব প্রয়োজনীয়তার আলোকে চারটি প্যাকেজের কাজের পরিমাণ ও খরচ হ্রাস পেয়েছে। ফার্মার ক্যানেল সিস্টেম কাজের তিনটি প্যাকেজের বাস্তবায়ন বর্তমানে চলমান আছে। ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ ছিল। কিন্তু কোভিডের কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন অগ্রগতি ব্যাহত হয়। ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না বলেই মেয়াদ বাড়াতে হলো।

প্রকল্পগুলোতে পরামর্শকের ব্যাপারে সরকারের সচিব ও পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মামুন-আল রশীদ বলেন, এই খাতে এখন আমরা একটা নিয়ম ও সিলিং করে দিয়েছি। দাতাসংস্থাগুলোর অর্থায়নে তাদের পক্ষ থেকে এই পরামর্শকের বিষয়টি বেঁধে দেয়া হয়। তারপরও আমরা এই বিষয়গুলোতে সড়কের একটি প্রকল্পে কমিয়ে তিন ভাগের এক ভাগে নামিয়ে আনার জন্য বলেছি।


   আরও সংবাদ