ঢাকা, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

দলের শৃঙ্খলা রক্ষায় হার্ডলাইনে বিএনপি

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ৮ এপ্রিল, ২০২২ ১১:৪০ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪৪০ বার


দলের শৃঙ্খলা রক্ষায় হার্ডলাইনে বিএনপি

দলীয় হাইকমান্ডকে না জানিয়ে ২০১৯ সালে কথিত এই ‘তৃতীয় পক্ষের’ সঙ্গে সমঝোতা করে সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছিলেন বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা। সম্প্রতি তারা আবারও তৎপর বলে তথ্য রয়েছে দলটির নীতিনির্ধারকদের কাছে।

বিশেষ করে দলের নির্দেশ অমান্য করে ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদের নেতৃত্বে ২৭ মার্চ ঢাকায় ‘পেশাজীবী সমাবেশ’ এবং নেপালে গোপন বৈঠক হয়। বিষয়টি নিয়ে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে আবারও নড়চড় শুরু হয়েছে।

এসব বিষয়ে দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় হার্ডলাইনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। ইতোমধ্যে শওকত মাহমুদের কাছে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছে দলটি। এছাড়া সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহসানুল হক মিলনকে আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে পদাবনতি করে নির্বাহী কমিটির সদস্য করা হয়েছে।

দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে ওই তৎপরতার সঙ্গে জড়িত এমন অন্তত ২০ নেতাকে নজরদারিতে রেখেছেন হাইকমান্ড। দলের শৃঙ্খলা রক্ষায় তাদের বহিষ্কার অথবা পদাবনতি করা হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, দীর্ঘদিন থেকে বিএনপির মূল নেতৃত্বকে বাদ দিয়ে দলে এবং জোটে বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। এতে নানা কারণে ক্ষুব্ধ ও হতাশ নেতাদের যুক্ত করার চেষ্টা চলছে। তাদের নানা টোপ দেওয়া হচ্ছে। দল ও জোটের এমন অন্তত ৪০ নেতার সঙ্গে বিভিন্ন সময় নেপাল ও ব্যাংককে বৈঠক হয় এই মহলের সঙ্গে।

২০১৯ সাল থেকে ওই তৎপরতা শুরু হয়। সর্বশেষ গত মাসেও দেশের বাইরে এমন বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনেরও অন্তত ১৪ নেতা উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে দলের ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ বৃহস্পতিবার বলেন, দলের পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা তলব করে আমাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ৫ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়। আমি যেহেতু দল করি তাই বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই চিঠির লিখিত জবাব দেব।

এ বিষয়ে অন্য কোনো নেতা মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, একটা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী কখনই দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করতে পারে না। দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে সাংগঠনিক কী কী পদক্ষেপ নেয়া যায়, সে বিষয়ে গঠনতন্ত্রে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে।

নীতিনির্ধারকরা জানান, নজরদারিতে থাকা নেতাদের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, বিএনপির ভেতরে থেকে দলের ক্ষতির চেষ্টা করছেন তারা। বিশেষ একটি গোষ্ঠীর পক্ষ হয়ে তারা ‘সরকার পতন’র পাশাপাশি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ‘মাইনাস’ করে বিএনপির নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

বিশেষ করে এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত নেতারা বিভিন্ন ব্যানারে সম্প্রতি জাতীয় প্রেস ক্লাবসহ বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন, আলোচনা সভা ও গোপন বৈঠকসহ বেশ কিছু কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। তাদের ব্যাপারে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। তাদের ধারণা, ১/১১-এর সময়ে যেসব নেতা দলের মূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে গিয়ে সংস্কার প্রস্তাব এনেছিলেন তাদের বড় একটি অংশ এবং সাবেক ছাত্র নেতাদের একটি অংশ এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত।

সূত্র জানায়, বিএনপির পাঁচজন ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা চারজন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী, এক শিক্ষক নেতা, একজন আইনজীবী নেতা, সংরক্ষিত আসনের সাবেক একজন এমপি, ঢাকা মহানগরের তরুণ দুই নেতাসহ ২০ নেতার কর্মকাণ্ডের ওপর নজর রাখছে হাইকমান্ড। এরমধ্যে একজন গত এক বছরে অন্তত ৩০টি জেলা সফর করেছেন।

দলটির একজন নীতিনির্ধারক জানান, তাদের কাছে তথ্য রয়েছে, বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি যাচাই ও নিষ্ক্রিয় নেতাদের তালিকা তৈরির এজেন্ডা নিয়ে ওই তরুণ নেতা জেলাগুলো সফর করেন। এ নিয়ে তরুণ নেতাকে বিএনপির এক সিনিয়র নেতা কয়েকবার ডেকে ওই প্রক্রিয়া থেকে বের হওয়ার জন্য সতর্ক করেছেন। কিন্তু তিনি কথা শুনেননি।

সর্বশেষ ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির’ দাবিতে ২৭ মার্চ বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক সমাবেশ হয়। ‘পেশাজীবী সমাজ’র ব্যানারে এই সমাবেশ থেকে সরকার পতনের ডাক দেন আয়োজক শওকত মাহমুদ।

রাজনীতিবিদরা যদি ব্যর্থ হন, তাহলে পেশাজীবীরা গণঅভ্যুত্থানের দায়িত্ব নেবেন বলে বক্তব্য দেন তিনি। শিগগিরই পরবর্তী কর্মসূচির ঘোষণা দেবেন জানিয়ে নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকারও আহ্বান জানান।

বিএনপির নেতারা বলছেন, পেশাজীবী সমাজের ব্যানারে ওই সমাবেশের সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। বরং দলের নীতিনির্ধারকদের অজান্তে এ ধরনের কর্মসূচির আয়োজন এবং সরকার পতনের ডাক দেওয়া নিয়ে শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হয়। বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে তথ্য আছে, দলকে বাইরে রেখে ‘ক্ষমতার পটপরিবর্তন’ হতে পারে কোনো কোনো মহলের এমন আশ্বাসে দলের অনেকে নানামুখী তৎপরতায় যুক্ত। সরকার পতনের ডাক দিয়ে হঠাৎ রাস্তায় জমায়েত-এমন তৎপরতারই অংশ বলে সন্দেহ করছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বিএনপি রাজপথে একটি বৃহত্তর ঐক্য গড়ার চেষ্টা করছে। আমরা মনে করি, হঠাৎ রাস্তায় সরকার পতনের ডাক দিয়ে এ ধরনের তৎপরতা ঐক্য প্রক্রিয়াকে বিভক্ত ও বিনষ্ট করার একটি চক্রান্ত।

সূত্র জানায়, এর আগে দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে ২০১৯ ও ২০২০ সালের ডিসেম্বরেও ঢাকায় এ ধরনের দুটি বড় জমায়েত করে রাস্তায় নেমেছিল জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল ও পেশাজীবী পরিষদ। যার জের ধরে ‘দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ড’র অভিযোগ এনে ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমদ ও শওকত মাহমুদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। অবশ্য ২৭ মার্চের সমাবেশে হাফিজউদ্দিন আহমদ ছিলেন না। বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ কোনো নেতাকেও দেখা যায়নি। তবে লে. জেনারেল (অব.) চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীর অংশগ্রহণ অনেকের দৃষ্টি কেড়েছে।

২০ দলীয় জোটের শরিক দলের একজন শীর্ষ নেতা জানান, তৃতীয় পক্ষের এমন তৎপরতার পেছনে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা মাসুদ করিম নামের এক ব্যক্তি। যিনি বেশ কয়েকবার বাংলাদেশে এসেছেন। এছাড়া বেশিরভাগ সময় লন্ডনে থাকেন। তিনি বিএনপি, ২০ দলীয় জোট, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদ, হেফাজতে ইসলামসহ কয়েকটি দলের নেতাদের নিয়ে মাঝেমধ্যেই ব্যাংকক ও নেপালের কাঠমান্ডুতে বৈঠক করেন।

সম্প্রতি নেপালেও এক বৈঠকে অংশ নেন বিএনপি, ২০ দলসহ আরও কয়েকটি দলের অন্তত ৪০ জন নেতা। ব্যাংকক ও কাঠমান্ডুর বৈঠকে মাসুদ করিমের সঙ্গে পশ্চিমা একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক সদস্যও ছিলেন বলে সূত্র জানায়।

এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা নির্বাচন চাই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। সেই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করার পর যারা আন্দোলন করেছে, তাদের নিয়ে একটা জাতীয় সরকার গঠন করতে চাই।

সূত্র : যুগান্তর


   আরও সংবাদ