ঢাকা, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

অনিরাময়যোগ্য রোগ পারকিনসন্স, ঝুঁকিতে যারা

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১১ এপ্রিল, ২০২২ ১৫:৫৫ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫৬৪ বার


অনিরাময়যোগ্য রোগ পারকিনসন্স, ঝুঁকিতে যারা

অনিরাময়যোগ্য এক ভয়াবহ রোগ পারকিনসন্স। দেশে এ রোগে ষাটোর্ধ্বদের ঝুঁকি বেশি বলে জানিয়েছে চিকিৎসকরা। তাদের মতে, শতকরা ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে পারকিনসন্স রোগের কারণ অজানা। পাঁচ শতাংশ ক্ষেত্রে জেনেটিক কারণে হয়। অবশিষ্ট পঁচিশ শতাংশ বিভিন্ন কারণ যেমন- স্ট্রোক, টিউমার, বারবার মস্তিষ্কে আঘাত, ইনফেকশন, উইলসন ডিজিজসহ মস্তিষ্কের রোগ। এ রোগে পুরুষ- নারীরা সমানভাবে আক্রান্ত হয়ে থাকে।

সোমবার (১১ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মিল্টন হলে বিশ্ব পারকিনসন্স দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব তথ্য জানান।

অনুষ্ঠানে শুরুতে পারকিনসন্স রোগ প্রসঙ্গে তুলে ধরেন মুভমেন্ট ডিজঅর্ডার সোসাইটি অব বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও বিএসএমএমইউর নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. হাসান জাহিদুর রহমান। তিনি বলেন, পারকিনসন্স রোগ মস্তিষ্কের অসুখ। ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের সাধারণত এ অসুখ হয়। ষাট বছরের নিচে কিছু লোক এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।

তিনি বলেন, এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির চলাফেরা ধীর গতি হয়ে যায়, কর্মক্ষমতা কমতে থাকে। দৈনন্দিন কাজকর্ম সঠিকভাবে সম্পাদন করতে অসুবিধা হয়। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় করতে পারলে এবং নিয়মিত ওষুধ খেলে রোগী স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যেতে পারেন। চিকিৎসা না নিলে ধীরে ধীরে রোগ বাড়তে থাকে, এক পর্যায়ে রোগী শয্যাশায়ী হতে পারেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার পদক্ষেপের ফলে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সূচক আন্তর্জাতিক মহলে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। দেশের মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৭৩ বছর হয়েছে, যা আগে ছিল ৪৭ বছর। গড়আয়ু বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন নিউরোডিজানেরেটিভ রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পারকিনসন্স রোগ এগুলোর মধ্যে অন্যতম।

তিনি বলেন, দেশের ষাটোর্ধ্ব প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষের জন্য আজকের দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তাদেরই এ রোগটি বেশি হয়। এ রোগ যাদের আছে, তারা যদি হেলা করে এবং বেশি করে ধূমপান করে, তাহলে রোগের পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। তাই ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিরা নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করবে, ডায়েট কন্ট্রোল করবে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখবে। সেইসঙ্গে কাঁপুনি হওয়ার সাথে সাথেই নিউরোলজিস্টদের সাথে যোগাযোগ করবে এবং চিকিৎসা নেবে।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল, সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ সবুজ, সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. রাসেল, সহকারী অধ্যাপক ডা. ফাতেমা জোহুরা, রেজিস্ট্রার ডা. স্বপন কুমার বনিক প্রমুখ।

পারকিনসন্স ডিজিস কি?
পারকিনসন্স ডিজিস হলো মস্তিষ্কের ক্ষয়জনিত রোগ। মস্তিষ্কের সাবস্ট্যানশিয়া নাইগ্রা নামক অংশের স্নায়ু কোষ (নিউরন) শুকিয়ে যাওয়ার কারণে ডোপামিন নামক নিউরোট্রান্সমিটারের (এক ধরণের রাসায়নিক পদার্থ) ঘাটতি দেখা দেয়। স্বাভাবিক অবস্থায় মস্তিষ্কে ব্যাজাল গ্যাংলিয়া নামক অংশ শরীরের চলাফেরা বা গতি বা নড়াচড়া করার সমন্বয় করে থাকে। ডোপামিনের অভাবে এ সমন্বয় নষ্ট হয়ে যায়।

এ রোগ কেন হয়?
শতকরা সত্তর ভাগ ক্ষেত্রে পারকিনসন্স রোগের কারণ অজানা। শতকরা পাঁচ ভাগ ক্ষেত্রে জেনেটিক কারণে হয়। অবশিষ্ট পঁচিশ ভাগ বিভিন্ন কারণে হয়। যেমন- স্ট্রোক, টিউমার, বার বার মস্তিষ্কের আঘাত, মস্তিষ্কের ইনফেকশন, উইলসন ডিজিজ সহ মস্তিষ্কের অন্যান্য রোগ- যেগুলোকে বলা হয় পারকিনসনিজম।

রোগের লক্ষণ
এ রোগের প্রধান উপসর্গ/ লক্ষণ তিনটি। ১. হাত/পা কাঁপুনি। ২. হাত/পা স্বাভাবিকের চেয়ে শক্ত হয়ে যাওয়া। ৩. চলাফেরার গতি ধীর হয়ে যাওয়া।

এছাড়া নিচের লক্ষণগুলো থাকতে পারে- সামনের দিকে ঝুঁকে হাটা, কথার স্বর কমে যাওয়া ও কম কথা বলা, চোখের পাতার নড়াচড়া কমে যাওয়া, বার বার পড়ে যাওয়া, কোষ্ঠ কাঠিন্য। একইসঙ্গে হতাশাগ্রস্ততা, উদ্বিগ্নতা, উদাসীনতা, ঘুম কম হওয়া, যৌন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে।

চিকিৎসা
পারকিনসন্স রোগের চিকিৎসা রয়েছে। সঠিক সময়ে এবং সঠিকভাবে চিকিৎসা গ্রহণ করলে রোগী দীর্ঘদিন ভালো থাকে। তবে, এ রোগে আক্রান্ত রোগীকে আজীবন ওষুধ খেতে হয়। কারণ, এই রোগ সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য নয়। নিয়মিত ওষুধ সেবনে রোগী অনেকদিন পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন।


   আরও সংবাদ