ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৭ মে, ২০২২ ১১:৫৬ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫০২ বার
দেশে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ও কিডনি বিকলসহ বিভিন্ন ধরনের অসংক্রামক রোগে মানুষের অকালমৃত্যু হচ্ছে। এসব মৃত্যুর সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ ওতপ্রোতভাবে জড়িত এবং এটিই অকালমৃত্যুর অন্যতম কারণ। বিশেষজ্ঞরা জানান, উচ্চ রক্তচাপসহ অন্য সব রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে অকাল মৃত্যু দ্রুত কমানো সম্ভব। অথচ অর্ধেক মানুষ এ সম্পর্কে জানেই না। অসচেতনতার কারণেই উচ্চ রক্তচাপে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে রোগটি সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে সারা বিশ্বের মতো আজ বাংলাদেশে বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস পালিত হচ্ছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘মেজার ইয়োর ব্লাড প্রেশার অ্যাকিউরেটলি, কন্ট্রোল ইট, লিভ লঙ্গার। অর্থাৎ উচ্চ রক্তচাপ : সঠিকভাবে পরিমাপ করুন, নিয়ন্ত্রণে রাখুন, দীর্ঘদিন বাঁচুন।’
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, দেশের কত শতাংশ সাধারণ মানুষের উচ্চ রক্তচাপ আছে এবং কতজন চিকিৎসা নিচ্ছেন তা জানতে জরিপ করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় ‘বাংলাদেশ এনসিডি স্টেপস সার্ভে-২০১৮’ শীর্ষক জরিপটি পরিচালনা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও নিপসপ। টেকনিক্যাল কমিটিতে ছিল ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন।
অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা জানান, জরিপ অনুযায়ী ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে জনগোষ্ঠীর ২১ শতাংশ (নারী ২৪ দশমিক ১ শতাংশ, পুরুষ ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ) উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। তাদের মধ্যে ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমে রোগটি নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন মাত্র ১৪ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি সাতজনে একজনেরও কম।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে প্রতি চারজনে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। ৫০ শতাংশই জানেন না তাদের রোগটি রয়েছে। শনাক্তদের মধ্যে ৪৩ শতাংশের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে নেই। মোট রোগীর মধ্যে মাত্র ১৫ শতাংশের তা নিয়ন্ত্রণে আছে। অথচ দেশে দুই কোটি মানুষ এ রোগে ভুগছেন। এর মধ্যে ৩০ লাখ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছেন। দেশে বর্তমানে ২২ শতাংশ মানুষের অকাল মৃত্যু হচ্ছে। যার অন্যতম কারণ উচ্চ রক্তচাপজনিত নানা শারীরিক সমস্যা।
‘বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে ২০১৭-১৮’ অনুযায়ী- ২০১১ থেকে ২০১৭-১৮ সাল পর্যন্ত ৩৫ বছর ও তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এটি পুরুষের মধ্যে ২০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৪ শতাংশ এবং নারীর ক্ষেত্রে ৩২ শতাংশ থেকে ৪৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। জরিপে উঠে এসেছে-অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা রয়েছে এমন নারী ও পুরুষের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ার হার যথাক্রমে ৪৯ শতাংশ ও ৪২ শতাংশ।
সেখানে স্বাভাবিক ওজনের নারী ও পুরুষের মধ্যে এ হার যথাক্রমে ২৫ শতাংশ এবং ২৪ শতাংশ। তবে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত অর্ধেক নারী (৫১ শতাংশ) এবং দুই-তৃতীয়াংশ পুরুষ (৬৭ শতাংশ) জানে না যে তাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় উচ্চ, রক্তচাপে আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীই (৬৪ শতাংশ) ওষুধ সেবন করেন না। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১০ থেকে ২০৩০ সালে ২০ বছরে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩৩ শতাংশ নামিয়ে আনার আন্তর্জাতিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। ২০৩০ সাল আসতে আরও আট বছর বাকি।
কিন্তু আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা যে গতিতে বাড়ছে, তাতে এ হার কমার সম্ভাবনা নেই। বরং উচ্চ রক্তচাপ আক্রান্তের হার আরও অনেক বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তারা বলেন, উচ্চ রক্তচাপের কারণে হৃদরোগ এবং হৃদরোগজনিত মৃত্যুঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। স্ট্রোক এবং কিডনির ক্ষতি হয়। তবে সরকার অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে ২০২৫ সালের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের প্রাদুর্ভাব তুলনামূলকভাবে ২৫ শতাংশ কমানোর (রিলেটিভ রিডাকশন) জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে-রক্তচাপের ওষুধ সারাজীবন সেবন করতে হয়। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষের পক্ষে তা সম্ভব হয় না। অনেকে রক্তচাপ স্বাভাবিক হওয়ার পর সেবন ছেড়ে দেন। এতে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। মূলত ওষুধের দাম বৃদ্ধির কারণে ক্রয়ক্ষমতা না থাকা এবং সুস্থ মনে করে মাঝপথে সেবন ছেড়ে দেওয়ায় অকাল মৃত্যু বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল (এনসিডি) প্রোগ্রামের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, সরকারের ট্রিটমেন্ট প্রটোকল অনুযায়ী ৮০টি উপজেলার এনসিডি কর্নারে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। এ বছরে ২০০টি এবং ২০২৪ সালের মধ্যে ৪০০ উপজেলায় ওষুধ সরবারহ নিশ্চিত করা হবে। এ বছর এনসিডি থেকে ১০০ কোটি টাকা শুধু ওষুধের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মোট বাজেটের প্রায় ৫০ শতাংশ বাজেট শুধু ওষুধের জন্য। এর উদ্দেশ্য দেশের মানুষকে বিনাপয়সায় ওষুধ দেওয়া।
দিবসটি উপলক্ষ্যে সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল (এনসিডি) কর্মসূচি তেজগাঁওয়ে একটি গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আজ ন্যাশনাল হার্ট ফউন্ডেশন ছাড়াও বিভাগীয় ও জেলা হাসপাতালে র্যালি ও সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।