ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২১ মে, ২০২২ ০৯:১১ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪৩৬ বার
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাপী সংহতি জোরদার করার এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে খাদ্য, বিদ্যুত ও আর্থিক সঙ্কট মোকাবেলায় সু-সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বৈশ্বিক সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে ৪টি প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন যার জন্য দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ইউক্রেনের যুদ্ধ এমন এক সময়ে এসেছে যখন বিশ্ব কোভিড-১৯ মহামারী থেকে উদ্ধার পেতে লড়াই করে চলেছে। এ যুদ্ধ ইতোমধ্যে নাজুক বিশ্ব অর্থনীতিতে গুরুতর চাপ যুক্ত করেছে।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে যুক্ত হয়ে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপ (জিসিআরজি) এর প্রথম উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে দেয়া ভাষণে একথা বলেন।
শেখ হাসিনা কার্যকরভাবে সঙ্কট মোকাবেলায় উন্নত অর্থনীতি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকর ভূমিকা কামনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বর্তমান পরিস্থিতিকে অত্যন্ত অস্থিতিশীল করে তুলেছে, যেখানে খাদ্য, জ্বালানি ও অন্যান্য পণ্যের স্বল্প সরবরাহ এবং অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ইতোমধ্যেই সাধারণ মানুষের জীবনে মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করেছে।
তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ এবং এসআইডিগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এবং এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য তাদের অবিলম্বে এবং লক্ষ্যমাত্রা ভিত্তিক সহায়তা ব্যবস্থার প্রয়োজন।
এ বিষয়ে তিনি উন্নত দেশসমূহ ও বহুপাক্ষিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শুল্কমুক্ত-কোটামুক্ত বাজারে প্রবেশাধিকার এবং আরো সহজলভ্য অর্থায়নের জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে সৃষ্ট চলমান বৈশ্বিক সংকট মোকাবেলার লক্ষ্যে এই গ্রুপটি গঠন করেছেন। বৈশ্বিক সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনা পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য চারটি প্রস্তাব রেখেছেন।
প্রথম প্রস্তাবে তিনি বলেন, ‘প্রথমত, আমাদের অবশ্যই বিশ্বব্যাপী সংহতি জোরদার করতে হবে এবং একটি সু-সমন্বিত প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে। জি-৭, জি-২০, ওইসিডি, এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।’
তিনি বলেন, এই গ্রুপের স্টিয়ারিং কমিটি সব বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গঠন করায় তিনি খুশি।
তিনি বলেন, আমরা সঙ্কট মোকাবেলায় কার্যকর সুপারিশ প্রণয়নের জন্য তাদের প্রচেষ্টায় আমাদের পূর্ণ সমর্থন দেব।
তিনি বলেন, দ্বিতীয়ত, অবিলম্বে বিশ্বব্যাপী লজিস্টিক এবং সরবরাহ শৃঙ্খলে বাধাগুলো মোকাবেলা করা প্রয়োজন।
তিনি আরো বলেন, এ প্রয়াস পণ্যের ক্রমবর্ধমান মূল্য নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে। বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশ ও অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর বৈশ্বিক বাণিজ্য ও রফতানি আয় পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সমর্থনও থাকতে হবে।
তিনি বলেন, উন্নত অর্থনীতি এবং বহুপাক্ষিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে এবং শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত বাজারে প্রবেশাধিকার এবং আরো সহজলভ্য অর্থায়ন প্রদান করতে হবে।
তৃতীয় প্রস্তাবে, তিনি বলেন, কার্যকর খাদ্য সঞ্চয় ও বিতরণ ব্যবস্থার জন্য কৃষিখাতের জন্য প্রযুক্তি সহায়তা এবং বিনিয়োগের উপর আরো বেশি গুরুত্ব প্রদান করা অপরিহার্য।
তিনি বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ক্ষেত্রে বিশেষ করে এলডিসিতে অনেক সম্ভাব্য ব্যবসার সুযোগ রয়েছে।
তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন, এই এজেন্ডাকে এগিয়ে নিতে আমরা বিদ্যমান উত্তর-দক্ষিণ, দক্ষিণ-দক্ষিণ এবং ট্রায়াঙ্গুলার সহযোগিতার সুবিধা নিতে পারি। এই বিষয়ে বেসরকারি খাতের সাথে সম্পৃক্ততাও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হবে।
পরিশেষে, তিনি ৪৮-সদস্যের জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ ফোরামের সভাপতি হিসেবে উল্লেখ করেন, আমরা অনেক এসআইডি এবং নিম্নাঞ্চলীয় জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশের সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি।
বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ বহুপাক্ষিকতায় দৃঢ় বিশ্বাসী।
তিনি বলেন ‘আমরা সর্বদা বিশ্ব শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য জাতিসঙ্ঘের আহ্বানে সাড়া দিয়েছি। এই গোষ্ঠীকে সমর্থন করার জন্য আমাদের প্রতিশ্রুতি সেই প্রত্যয় থেকে উদ্ভূত।’
তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় উন্নয়ন যাত্রা অনেক উদ্ভাবনী জলবায়ু কর্মের নেতৃত্ব দিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা অন্যদের সুবিধার জন্য জলবায়ু পরিবর্তন, জীব-বৈচিত্রের ক্ষতি এবং পরিবেশগত অবনতির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের জ্ঞান, বোঝাপড়া ও অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চাই।
সূত্র : বাসস