ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২১ মে, ২০২২ ১৩:১৩ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪৪৭ বার
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছরের শেষের দিকে অথবা ২০২৪ সালের প্রথম দিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিগত দুইটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে দেশীয়-আন্তর্জাতিকভাবে নানা প্রশ্ন ও বিতর্ক থাকলেও আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করার চিন্তাভাবনা করছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আর ওই নির্বাচনে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে কিভাবে আনা যায় সে বিষয়ে এখন থেকেই কর্মকৌশল ঠিক করছেন দলটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে এ ধরনের কোনো বার্তা এখনো দেয়নি সরকারি দল। তবে সম্প্রতি বিভিন্ন সভা সমাবেশে চলমান সঙ্কট নিরসন করে বিএনপিসহ নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করানোর জন্য সমঝোতার আভাস দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।
এ প্রসঙ্গে গত বুধবার এক অনুষ্ঠানে সরকারি দল আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি সাংবাদিকদের বলেন, আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনায় আপত্তি নেই আওয়ামী লীগের। আগামী নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী। আওয়ামী লীগের বিশ্বাস আগামী নির্বাচন হবে অংশগ্রহণমূলক। তিনি আরো বলেন, সরকারবিরোধী আন্দোলনের কোনো ইস্যু না পেয়ে, দর কষাকষি করে সুবিধা নিতেই বিএনপি এখন নির্বাচন নিয়ে নানা কথা বলছে। নির্বাচনী মাঠ গরম করতে চাইছে।
জানা গেছে, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। এরপরই ২০১১ সালের ১০ মে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায়ের পর সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এ সরকারব্যবস্থাকে বাতিল করা হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে তখন থেকেই আন্দোলনে নামে বিএনপি ও তার মিত্ররা। কিন্তু আন্দোলনের মধ্যেই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও ওই নির্বাচনে বিএনপি ও তার মিত্ররা অংশ নেয়নি। অবশ্য বিএনপিকে নির্বাচনে নেয়ার জন্য আওয়ামী লীগ নানাভাবে চেষ্টা-তদবির করেছিল। রাজনৈতিক সঙ্কট নিয়ে টানটান উত্তেজনার মাঝেই ২০১৩ সালের শেষের দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে টেলিফোন করে সংলাপের প্রস্তাব দেন। যদিও সে সংলাপ আলোর মুখ দেখেনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, দেশী-বিদেশী চাপে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গুলশানের একটি রেস্টুরেন্টে আওয়ামী লীগের তখনকার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মধ্যে গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকেও বিএনপিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য আওয়ামী লীগ বিশেষভাবে অনুরোধ করেছিল। কিন্তু সমঝোতা না হওয়ায় নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি ও তার মিত্ররা। অবশ্য নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে অনড় থাকা বিএনপি কিছুটা নমনীয় নীতি গ্রহণ করে আন্দোলনের অংশ হিসেবে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। যদিও কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচনের দিন দুপুরের আগেই ভোট বর্জন করে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আবার শুরু হয় বিএনপির নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের দাবিতে আন্দোলন। সেই আন্দোলনের তীব্রতা এতদিন মাঠে না গড়ালেও নতুন করে রোডম্যাপ ঘোষণা করতে যাচ্ছে বিএনপি। আর সরকারি দল আওয়ামী লীগ চাইছে, আন্দোলনের হুমকি ধামকি না দিয়ে বিএনপি আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিক। আন্তর্জাতিক নানা চাপে থাকা আওয়ামী লীগ বিগত দুইটি নির্বাচনের বিতর্ক কাটিয়ে উঠতে একটি গ্রহণযোগ্য, অবাধ, সুষ্ঠু প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করার জন্য এখন থেকেই চিন্তাভাবনা করছে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের অন্যতম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বিএনপি যতই মুখে মুখে নির্বাচনে না যাওয়ার কথা বলুক তারা ভেতরে ভেতরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা আশা করি, আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে। তিনি বলেন, আমরা আগামী নির্বাচন বিএনপিসহ সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন চাই। সেই নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করবে ইনশাআল্লাহ। এক প্রশ্নের জবাবে বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আপনারা জানেন, ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি নেত্রীকে টেলিফোন করে সংলাপের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। আমরা চেষ্টা করব, বিএনপিসহ সব দলকে আগামী নির্বাচনে আনার জন্য। এখানে ছাড়ের বিষয় নয়। তারা দেশের একটা বড় দল। তারা নির্বাচনে আসুক, একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হবে এটা আমরা চাই। সে কারণে বলছি। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা বিএনপির রাজনৈতিক অধিকার। এটা কোনো সুযোগ না। সুযোগ বিতরণ করা হয়, অধিকার বিতরণ করা হয় না।