ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৩ মে, ২০২২ ১২:৩৩ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫৪৩ বার
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে হত্যার বড় কারণের একটি গরু চোরাচালান। ভারতে গরুর যথেষ্ট কদর রয়েছে। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদির বিজেপি ক্ষমতায় এসে গরু সুরক্ষা ও পাচার বন্ধে অত্যন্ত কঠোর হয়। ২০১৫ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বাংলাদেশে গরু রফতানি বন্ধ করে। এরপর গেল কয়েক বছরে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে গরু চোরাচালান ব্যাপক হারে কমেছে। তবে হত্যা বন্ধ হয়নি।
সীমান্তে গরু পাচার ও হত্যা
২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ২০ হাজার ৪১৫টি গবাদি পশু জব্দ করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। ২০১৫ সালে সেই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬০২টি। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে ১ লাখ ৫৩ হাজার গবাদি পশু জব্দ করেছিল বিএসএফ। তার ৫ বছর পর ২০২১ সালে বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ২০ হাজার ৪১৫টি গবাদি পশু জব্দ করে। ২০১৫ সালে বিসিএফ বাংলাদেশ সীমান্তে ২১৯ বার গুলি চালিয়েছে। আর গত বছর ২০২১ সালে গুলি চালিয়েছিল ২৪৪ বার। ২০১৫ সালে বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারান ২৫ জন। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) মতে, ২০২১ সালে প্রাণ হারান ১৮ জন।
দুদেশের সীমান্তে মৃত্যুর খেলা কেন
ভারত থেকে শুধু যে গরু চোরাচালান হয় তা নয়, ফেনসিডিল, মাদক ও অবৈধ অস্ত্রও আসে। কিন্তু এসব চোরাচালানে সহিংসতার ঘটনা কম ঘটে। বিএসএফের চোখে পড়ে সীমান্তে পার হওয়া গরু। কিন্তু এই গরুগুলো সীমান্তের খুব কাছ থেকে যে আসে তা-ও নয়। ভারতের কতগুলো জেলা, প্রদেশ ও থানার ওপর দিয়ে গরুগুলো আসে। গরুগুলো যে সীমান্তে পাচার হচ্ছে, সেগুলো যাতে বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত না আসতে পারে, সে ব্যবস্থা রাজ্য সরকারগুলো নিতে পারে। কিন্তু তা নেয় না। তাতে অবৈধ লেনদেন ও ভাগ-বাঁটোয়ারা বন্ধ হয়ে যাবে। এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বিএসএফও অনেকাংশে দায়ী। তাদের বিরুদ্ধে চোরকারবারির কাছে পয়সা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
চোরাচালান সন্দেহে বিএসএফ কি গুলি চালাতে পারে
এবার আসা যাক, গরু চোরাচালান সন্দেহে বিএসএফ কি সন্দেহভাজনের বুকে গুলি চালাতে পারে? ভারতীয় আইনে গরু পাচারকারী, চোরাচালানকারী কাউকে হত্যা করা তো দূরের কথা, একটা চড় মারারও এখতিয়ার নেই (বিএসএফ অ্যাক্ট-১৯৬৮)। তবে দেশটির শীর্ষ নেতাদের নির্দেশনা ও বিএসএফের কার্যকলাপে এ আইনের কোনো তোয়াক্কাই নেই। ২০১৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত ফাঁড়িতে বিএসএফ সদস্যদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তৃতায় তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, ‘আমি চাচ্ছি, গবাদি পশু পাচারের বিরুদ্ধে বিএসএফ এমন ধরপাকড় শুরু করবে যে বাংলাদেশিরা গরুর মাংস খাওয়া ছেড়ে দেবে।’ তার ওই বক্তব্যের পর সীমান্তে অপরাধীদের ধরতে বিএসএফকে আরও সহিংস হতে দেখা গেছে।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক কতটা গুরুত্ব দেয় ভারত
বাংলাদেশ-ভারতের ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক চিরন্তন। ‘বন্ধু’ দাবি করা দুটি দেশে সীমান্তে হত্যা বন্ধের সংকট থাকার কথা নয়। দুদেশের সরকারের মধ্যে বৈঠক হয়, আলোচনা হয়, অঙ্গীকার হয় তবুও থামে না এ হত্যা। গরু চোরাচালানকারীকে ধরলে তারা জেল দিতে পারে, জরিমানা করতে পারে, হত্যা করবে কেন? ভারতের সঙ্গে বৈরী চীনের সীমানা রয়েছে। সেখানে যুদ্ধাবস্থা দেখা দিলেও গুলি ছোড়ার অনুমতি নেই। পাকিস্তানের সঙ্গেও ভারতের সীমান্ত বিরোধ রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতে সীমান্ত নিয়ে কোনো বিরোধ নেই। তবুও যেন বাংলাদেশ সীমান্তে যুদ্ধ চলে। চোরাকারবারিদের অপরাধের শাস্তি তো কোনোভাবেই ক্রসফায়ার নয়। সীমান্তে সাধারণ মানুষকে গুলি করে মেরে ফেলা পৃথিবীর কোথাও শান্তিপূর্ণ দুটি দেশের মধ্যে নেই। ১১ বছর আগে সীমান্তে চাঞ্চল্যকর ‘ফেলানী হত্যা’ এখনো ভুলতে পারেনি বাংলাদেশের মানুষ। সেই ঘটনার বিচারও হয়নি।
চোরাকারবারিতে ভারতীয়রাও জড়িত, প্রাণ হারান তারাও
এটা সত্য যে, বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলো অর্থনৈতিকভাবে অনেক পিছিয়ে। কৃষি ছাড়া কাজ করে খাওয়ার মতো সেখানকার মানুষের আর তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত হতে তারা জেনেবুঝে সীমান্তের মরণফাঁদে পা বাড়ান। তা ছাড়া চোরাকারবারির সঙ্গে শুধু বাংলাদেশিরা নন, ভারতীয়রাও দোষী। বিএসএফের গুলিতে যে শুধু বাংলাদেশিরা নিহত হন তা নয়, ভারতীয়রাও প্রাণ হারান। ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বিএসএফের গুলিতে ভারতীয় ভূখণ্ডে ১২৪ বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। একই সময়ে নিহত হয়েছেন ৯০ ভারতীয়। এ ছাড়া ১৭ জন বিএসএফ সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন।
সীমান্ত উত্তেজনায় বাংলাদেশ-ভারত দুপক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সম্পর্কমানের অবনতি হচ্ছে। দুদেশের সরকারের সমঝোতা-বোঝাপড়া ঠিক থাকলেও জনগণের কাছে সেই গুরুত্ব থাকে না। এখনো সীমান্তে হত্যা বন্ধের প্রতিশ্রুতি অমীমাংসিত। ভারত বিভিন্ন ইস্যুটি মীমাংসার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা পূরণ হয়নি।