ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৮ মে, ২০২২ ১১:৫৫ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪৩২ বার
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নিয়ন্ত্রণাধীন পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের জমি বরাদ্দ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
অভিযোগ রয়েছে, প্রায় ৭৭ কাঠা জমি পূর্বাচল কনভেনশন লিমিটেডের নামে প্রাথমিক বরাদ্দ দেয়া হলেও অদৃশ্য ক্ষমতা ও রাজউকের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী জালিয়াতি করে অন্য একটি পক্ষকে চূড়ান্ত বরাদ্দ দেয়।
উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় রাজউকের উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এমন ঘটনার সত্যতাও পাওয়া গেছে। ওই তদন্ত রিপোর্টের সূত্র ধরে ইতোমধ্যে দুদক অনুসন্ধান শুরু করেছে।
পূর্বাচল নীলা কনভেনশন লিমিটেডের নামে বরাদ্দ দেয়াসহ রাজউক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবৈধ সম্পদ অর্জন ও পাঁচ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগও রয়েছে দুদকের আমলে নেয়া অনুসন্ধানের নথিপত্রে।
এ বিষয়ে দুদকের পরিচালক (দৈনিক ও সাম্প্রতিক অভিযোগ সেল) উত্তম কুমার মণ্ডলের সই করা এক চিঠিতে বলা হয়েছে, রাজউকের এস্টেট শাখার কয়েকজন চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সৈয়দা ফেরদৌসী আলম নীলার কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা ঘুষ নিয়ে পূর্বাচল কনভেনশন লিমিটেডের নামে বরাদ্দকৃত প্লট নিয়ম বহির্ভূত ও অবৈধভাবে নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। নতুন নাম দেয়া হয়েছে পূর্বাচল নীলা কনভেনশন লিমিটেড। একই সাথে কনভেনশন লিমিটেডের নামে বরাদ্দসহ উচ্ছেদ অভিযানের নামে ঘুষ গ্রহণ, নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে পাঁচ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগটি ২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বরে দাখিল করা হয়েছিল। অভিযোগটি রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান ও অন্যদের বিরুদ্ধে দুদকে দাখিলকৃত অভিযোগের সাথে অনুসন্ধানের জন্য কমিশন থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
অভিযোগ বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের ১৬ অক্টোবর রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্রাতিষ্ঠানিক প্লট বরাদ্দের বিজ্ঞপ্তি পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়। আবেদনের শেষ তারিখ ছিল একই বছরের ২৩ নভেম্বর। ওই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ২০১৭ সালের ১৯ নভেম্বর পূর্বাচল কনভেনশন লিমিটেডের ছাড়পত্রের জন্য জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে আবেদন করে এবং নিবন্ধনপ্রাপ্ত হয় ৭ অক্টোবর। এ কোম্পানির চেয়ারম্যান কফিল উদ্দিন ভূঁইয়া ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাহারুল হক শহিদ। আর পূর্বাচল নীলা কনভেনশন লিমিটেডের ছাড়পত্রের জন্য ২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবর আবেদন করে এবং নিবন্ধনপ্রাপ্ত হয় ২০১৮ সালের ২২ নভেম্বর। এ কোম্পানির চেয়ারম্যান সৈয়দা ফেরদৌসি আলম নীলা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: শাহ আলম ফটিক ও পরিচালক মিস শাহরিয়া আলম।
জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১১ নভেম্বর পূর্বাচল কনভেনশন লিমিটেডের নামে একটি প্রাতিষ্ঠানিক প্লট বরাদ্দ দেয়ার জন্য আবেদন জমা দেয়া হয়। আবেদনের সাথে শর্ত অনুযায়ী ১৫ লাখ টাকা ব্যাংকে জমার রশিদ দেয়া হয়। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রাজউকের ১৩তম বোর্ড সভায় পূর্বাচল কনভেনশন লিমিটেডকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক প্লট বরাদ্দ দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এরপর একই বছরের ৩ অক্টোবর পূর্বাচল কনভেনশন লিমিটেডের নামে পূর্বাচল প্রকল্পের ১ নম্বর সেক্টরের ২০৪ নম্বর সড়কের ৭৬ দশমিক ৮৩ কাঠা আয়তনের ৩ নম্বর প্লটটি বরাদ্দ দেয়া হয়। পরে ২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর পূর্বাচল কনভেনশন লিমিটেডের নামে বরাদ্দকৃত প্লটটি পূর্বাচল নীলা কনভেনশন লিমিটেডের নামে বরাদ্দ দেয়ার জন্য রাজউকে আবেদন করা হয়।
আবেদনের পর দিন নাম পরিবর্তন বিষয়ে নথিতে উপস্থাপন করা হলে রাজউক চেয়ারম্যান প্রস্তাব অনুমোদিত লিখে স্বাক্ষর করে দেন। এরপর ২০ নভেম্বর পূর্বাচল কনভেনশন লিমিটেডের পরিবর্তে পূর্বাচল নীলা কনভেনশন লিমিটেডের নাম পরিবর্তনসংক্রান্ত পত্র জারি করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, রাজউকের কোনো প্লট বা ফ্ল্যাট যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দ দেয়া হয় তা পরিবর্তন করতে হলে যিনি প্রদান করবেন এবং যাকে প্রদান করবেন তাদের উভয়কে জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবিসহ রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে হাজির হতে হয়। অথচ রাজউকের পূর্বাচল শাখার কর্মকর্তারা এক প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দকৃত প্লটটি আরেক প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দ দেয়ার আগে এ বিষয়ে কোনো শুনানি করেনি। এমনকি প্লট পরিবর্তনের যে ফি জমা দিতে হয়, সেটিও জমা হয়নি। ঘুষের বিনিময়ে রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পের কর্মকর্তাসহ কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী এক প্রতিষ্ঠানের প্লট আরেক প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দ দেয়।
বিষয়টি জানার পর পূর্বাচল কনভেনশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান কফিল উদ্দিন ভূঁইয়া রাজউকে আবেদন করেন। কিন্তু রাজউক বিষয়টি সমাধান না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকে। উপায়ন্তর না পেয়ে তিনি হাইকোর্টে রিট করেন। হাইকোর্ট ঘটনাটি তদন্ত করে একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে আদেশ জারি করেন। এরপর রাজউকের সদস্যকে (এস্টেট ও ভূমি) প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি তদন্ত শেষে সংস্থাটির চেয়ারম্যানের কাছে গত ২০ জানুয়ারি প্রতিবেদন জমা দেয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে প্রতীয়মান হয়েছে কফিল উদ্দিন ভূঁইয়া ও সৈয়দা ফেরদৌসি আলম নীলার দাবিকৃত পূর্বাচল কনভেনশন লিমিটেড একই প্রতিষ্ঠান। পূর্বাচল কনভেনশন লিমিটেডের নাম পরিবর্তন করে পূর্বাচল নীলা কনভেনশন লিমিটেডের নামে রূপান্তর প্রক্রিয়ায় ত্রুটি রয়েছে।