আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২ জুন, ২০২২ ২২:৪৮ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৩৯৯ বার
চলতি মাসেই বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো শুরু হচ্ছে। এক বছরের মধ্যে পাঠানো হবে দু’লাখ শ্রমিক। তবে সিন্ডিকেট না উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কর্মী পাঠানোর সুযোগ থাকবে তা এখনো নিশ্চিত নয়।
চার বছর বন্ধ থাকার পর গত বছরের ডিসেম্বরে মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার সমঝোতা স্মারক সাক্ষর করলেও কী পদ্ধতিতে নেবে সেটা ঝুলে ছিল। গত জানুয়ারি মাসে মালয়েশিয়া বাংলাদেশের ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সিকে নির্বাচিত করে বাংলাদেশকে জানালে বাংলাদেশ তাতে আপত্তি জানায়। বাংলাদেশ এভাবে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে না পাঠিয়ে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে শ্রমিক পাঠানোর পক্ষে অবস্থান নেয়।
মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারাভানান বৃহস্পতিবার ঢাকায় বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমেদের সাথে বৈঠক করেন।
বৈঠক শেষে বিকেলে বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমেদ জানান, চলতি জুন মাসেই বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো শুরু হবে। আগামী পাঁচ বছরে তারা পাঁচ লাখ শ্রমিক নেবে। আমরা আশা করছি প্রথম বছরেই আমরা দুই লাখ কর্মী পঠাতে পারব।
এদিকে সিন্ডিকেট না উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কর্মী নেয়া হবে সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারাভানান বলেন, আমরা মালয়েশিয়া গিয়ে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব। আমাদের মন্ত্রিপরিষদ সিদ্ধান্ত নেবে।
বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে জনশক্তি রফতানি নিয়ে কাজ করা জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ার হাতে এক হাজার ৫২০টি বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্টের তালিকা দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী জানান, এ তালিকা থেকে মালয়েশিয়া ঠিক করবে, কাদের তারা সেখানে জনশক্তি রফতানির জন্য অনুমতি দেবে।
বাংলাদেশসহ ১৩টি দেশ থেকে মালয়েশিয়া জনশক্তি নেয়। কিন্তু বাংলাদেশ ছাড়া আর সব দেশ নিজেরাই রিক্রুটিং এজেন্ট ঠিক করে দেয়।
বাংলাদেশ তার ব্যতিক্রম কেন? এর জবাবে ইমরান আহমেদ বলেন, আমাদের সাথে মালয়েশিয়ার যে এমওইউ হয়েছে তাতে মালয়েশিয়া রিক্রুটিং এজেন্টদের বাছাই করবে বলা আছে।
বাংলাদেশের অধিকাংশ রিক্রুটিং এজেন্ট মনে করে ২৫টি প্রতিষ্ঠানের সিন্ডিকেট হলে অভিবাসন ব্যয় বেড়ে যাবে, বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার হবে এবং সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
রিক্রুটিং এজেন্টদের সংগঠন বায়রার সম্মিলিত ফ্রন্ট বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলে, এর মাধ্যমে সিন্ডিকেট ২৫ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেবে।
তাদের অভিযোগ, ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শ্রমিক রফতানির ফলে দেশের বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। তখন শ্রমিক রফতানি হওয়ার কথা ছিল ১৫ লাখ। কিন্তু হয়েছে মাত্র দু’লাখ ৭৪ হাজার ৫০০ জন। এতে করে নিশ্চিত চাকরির সুযোগ হারিয়েছে ১২ লাখ ২৫ হাজার কর্মী।
সংগঠনের সভাপতি ড. মোহাম্মদ ফারুক বলেন, অভিবাসন ফি বাবদ নেয়ার কথা ছিল জন প্রতি এক লাখ ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু নেয়া হয়েছে সাড়ে তিন থেকে চার লাখ টাকা। জনপ্রতি অতিরিক্ত দু’লাখ টাকা করে নেয়া হয়েছে। এভাবে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার ওপরে বিদেশে পাচার করেছে ১০ সদস্যর সিন্ডিকেট। আর ওই সময়ে ব্যবসা থেকে বঞ্চিত হয়েছে এক হাজার ২০০ বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সি।
এখনো অভিবাসন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত না হলেও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন মালয়েশিয়ার মন্ত্রী বৃহস্পতিবার যা বলেছেন তাতে সিন্ডিকেটের আভাসই দেয়া হচ্ছে। তবুও মালয়েশিয়ার মন্ত্রিসভা কী সিদ্ধান্ত নেয় সেদিকে তারা তাকিয়ে আছেন।
তারা আশা করেন, মালয়েশিয়ার মন্ত্রিসভা প্রতারকদের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেবে না।
বায়রার সাবেক সভাপতি আবুল বাসার আশঙ্কা করেন, এবার সিন্ডিকেট হলে ৩০ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হবে। সিন্ডিকেট হলে বঞ্চিত হবে প্রায় এক হাজার ৬০০ রিক্রুটিং এজেন্ট।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালে এ সিন্ডিকেটের কারণেই বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নেয়া বন্ধ করে দিয়েছিল মালয়েশিয়া। তারা তখন কাজ প্রার্থী মানুষের কাছে থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। ওই সিন্ডিকেটের সদস্য ছিলো ১০ থেকে ১২টি এজেন্সি। এখন আগেরগুলোসহ ২৫টি এজেন্সির মাধ্যমে সিন্ডিকেট করা হয়েছে।
তার কথা, ওই টাকা দেশের বাইরে পাচার হয়েছে। আর ওই সিন্ডিকেটের জন্যই বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়া বন্ধ করেছিল মাহাথির মোহাম্মদ। সিন্ডিকেটের সাথে ওই দেশের কিছু প্রভাবশালী লোকও জড়িত। তারা হাজার হাজার কোটি টাকা এবারো হাতিয়ে নেয়ার পাঁয়তারা করছে।
বৃহস্পতিবারের বৈঠকে অভিবাসন ব্যয় চূড়ান্ত হয়নি।
তবে বাংলাদেশের মন্ত্রী বলেন, আমরা চেষ্টা করছি সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখতে। আমরা চাচ্ছি শূন্য অভিবাসন ব্যয়।
ব্র্যাকের অভিবাসন বিভাগের প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, ১৯৭৮ সাল থেকে মালয়েশিয়া বাংলাদেশি শ্রমিক নেয়া শুরু করে। এরপর বেশ কয়েকবার তারা শ্রমিক নেয়া বন্ধ করে সিন্ডিকেটের অভিযোগ তুলে। ২০১৮ সালেও একই অভিযোগে বন্ধ করা হয়। গত ডিসেম্বরে শ্রম বাজার উন্মুক্ত হওয়ার পর কিন্তু সেই মালয়েশিয়ার মন্ত্রী গত জানুয়ারি মাসে ২৫টি প্রতিষ্ঠানের নাম পাঠায় বাংলাদেশের কাছে। তাহলে এই সিন্ডিকেটের সাথে তারাও জড়িত। যদি আবার সিন্ডিকেট হয় আর সামনের নির্বাচনে মালয়েশিয়ার এ সরকার ক্ষমতায় না থাকে তাহলে বাংলাদেশ থেকে আবার শ্রমিক নেয়া বন্ধ করে দিতে পারে দেশটি।
তিনি বলেন, সিন্ডিকেট করে অভিবাসন ব্যয় বাড়িয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। আর অভিবাসন ব্যয় বাড়ানো আইএলও কনভেনশন বিরোধী। এ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ট্রাান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালও কথা বলেছে।
মালয়েশিয়ার মন্ত্রীর বৃহস্পতিবারের বক্তব্যকেও সিন্ডিকেটের পক্ষে বলে মনে করেন তিনি।
তার কথা, ১৩টি দেশের মধ্যে ১২টি দেশ উন্মুক্ত পদ্ধতিকে লোক পাঠায় মালয়েশিয়ায়। বাংলাদেশের ব্যাপারে কেন তারা নির্ধারণ করে দেবে।
তিনি মনে করেন, মালয়েশিয়া বাংলাদেশের ব্যাপারে কোনো নিয়ম নীতি মানছে না। বাংলাদেশ সরকারের উচিত শক্ত অবস্থানে যাওয়া।
বিএমইটির হিসাব মতে, এর আগে মালয়েশিয়ায় বৈধভাবে প্রায় ১১ লাখ বাংলাদেশি কর্মী গেছেন।
সূত্র : ডয়চে ভেলে